নিজ শহর যশোরেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় শেখ আবদুল হাকিমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার বাদ আছর যশোরের নতুন উপশহর মসজিদে জানাযার নামাজ শেষে ঘোপ কবরস্থানে তাকে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
এর আগে, শনিবার রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
রোববার দুপুরে আব্দুল হাকিমের মরদেহ যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে নিয়ে আসলে তাকে শেষবারের মতো দেখতে যান অনেকেই। পরে জেলা ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা তাকে ফুলের শ্রদ্ধা জানান।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান হকি কোচ কাওসার আলী জানান, শেখ আবদুল হাকিম ৩ বছর ধরে স্ট্রোকজনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন। হাঁটা-চলা খুব কম করতে পারতেন বলে বাড়ি থেকে বেশি বের হতেন না। গত ২১ আগস্ট দিবাগত রাতে হঠাৎ করেই আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে যশোরের একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়।
অবস্থার অবনতি হলে পরদিন সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
আওসার আলী বলেন, ‘যশোরে আমাদের ফুটবলের দুই আইডল ছিলেন ওয়াজেদ গাজী এবং হাকিম ভাই। এর মধ্যে গাজী ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। বেঁচে ছিলেন হাকিম ভাই। এবার তিনিও চলে গেলেন।’
আবদুল হাকিম সংক্ষিপ্ত জীবনী
আবদুল হাকিম আশির দশকের অন্যতম সেরা লেফট উইংব্যাক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে অন্যদের মতোই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেন তিনি।
শেখ আবদুল হাকিম ১৯৪৯ সালের ৪ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত কাজীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। এক ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানের বাবা তিনি। ১৯৬৩ সালে যশোর উপশহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তার পরিবার।
শিক্ষা জীবনে ১৯৬৬ সালে যশোর মুসলিম অ্যাকাডেমি থেকে এসএসসি ও ১৯৬৮ সালে যশোর এমএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৬৫ সালে যশোর মডেল হাইস্কুলের পক্ষে আন্তঃস্কুল খুলনা বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হন। ওই বছর তিনি যশোর জেলা ফুটবল দলের হয়ে খেলায় অংশ নেন।
কর্মজীবনে ১৯৬৮ সালে খুলনা জুট মিলে পার্চেস অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে ইস্ট পাকিস্তান যুব দলে যশোরের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনি সুযোগ পান। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে অংশ নেন।
তার খেলার মূল পজিশন ছিল রাইট ব্যাক। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে লেফট ব্যাক হিসেবে খেলেছেন। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে ঢাকা লিগে দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে অংশ নেন। সেবার রানার্সআপ হয় তার দল। ১৯৭০ থেকে ৭৬ ইপিআইডিসিতে (বর্তমান বিজেএমসি) যোগদান করেন। সে সময় তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত আগাখান গোল্ডকাপে অংশ নিয়ে বিদেশি দলগুলোর বিপক্ষে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
১৯৭২ সালে তিনি আসামের বরদুলই শিল্ড ও একই বছরে ঢাকা স্টেডিয়ামে কলকাতা মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে খেলায় অংশ নেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও ১৯৭৮ সালে ওয়ারী ক্লাবের পক্ষে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে খেলেন। ১৯৭৩ এবং ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মারদেকা আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে ভারতের এলাহাবাদ, বিহার, বেনারস, পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেন শেখ আবদুল হাকিম।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় শেখ আবদুল হাকিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান যশোর-৩ আসনের এমপি ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদসহ যশোর জেলার ক্রীড়াঙ্গনের অন্যান্যরা।