বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘সাফল্যের আনন্দে আঘাতের যন্ত্রণা ভুলে যাই’

  •    
  • ১২ জুন, ২০২২ ১৭:৫৭

বাংলাদেশের বক্সার সুরো কৃষ্ণ চাকমা প্রস্তুতি নিচ্ছেন জুলাইয়ের কমনওয়েলথ গেমসের। বক্সিংয়ে নিজের পথযাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে।

ঢাকায় গত মাসে আয়োজিত পেশাদার আন্তর্জাতিক বক্সিং টুর্নামেন্ট ‘ফাইট নাইটে’ স্বর্ণ জিতে পরিচিতি পান সুরো কৃষ্ণ চাকমা। বাংলাদেশের এ বক্সার এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন জুলাইয়ের কমনওয়েলথ গেমসের।

বক্সিংয়ে নিজের পথযাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সুরো কৃষ্ণ কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। পাঠকদের জন্য সে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

ফাইটনাইটের মতো আন্তর্জাতিকমানের আসরে অংশ নিলেন। কেমন লাগল?

আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশে এমন একটা ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং টুর্নামেন্ট হবে। আগে থেকে এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। জেতার পর এত মানুষের উচ্ছ্বাস ও শুভকামনা অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। মনে করেছিলাম এত মানুষ দেখবে না। কিন্তু জেতার দুই-তিন দিন পর দেখেছি পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে গেছে বিষয়টি যা অনেক ভালো লেগেছে।

কতদিন ধরে বক্সিং করছেন?

২০০৭ থেকে ২০২২ সাল, প্রায় ১৫ বছর আমি বক্সিংয়ে আছি।

ক্রিকেট, ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলা রেখে বক্সিংয়ে কীভাবে আগ্রহী হলেন?

২০০৭ সালে আমি যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হই, তখন ফুটবলের জন্য চেষ্টা করেছিলাম। ছোটবেলা রাঙামাটিতে আমি ফুটবল খেলতাম। তখন ফুটবল খেলতেই বেশি ভালো লাগত। বড় হয়েছি ফুটবল নিয়ে। খেলাধুলা মানে বুঝতাম ফুটবল বা ক্রিকেট। এর বাইরে যে বক্সিংও আছে সেটা জানা ছিল না। অ্যাকশন মুভি দেখার কারণে আসলে আমি মার্শাল আর্টের ভক্ত ছিলাম। বিকেএসপিতে ফুটবলে চেষ্টা করে যখন সুযোগ পাইনি তখন বক্সিংয়ে আসলাম।

পরিবার থেকে কেমন সমর্থন পেয়েছেন? বক্সিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খেলা নিয়ে সবার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?আমার পরিবারের সবাই সব ধরনের খেলা পছন্দ করে। আমার বাবা খেলোয়াড় ছিলেন। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাসা থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি। বাসা থেকে আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করাতে চেয়েছে। ভালো পরিবেশে পড়াশোনার পাশাপাশি যেন ভালো খেলোয়াড় হতে পারি। বক্সিং বা অন্য যে খেলাই হোক। পরিবার থেকে এটা চাচ্ছিল। পরিবার আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

পরিবারে কে কে আছেন?

১১ বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। আমার ছোট ভাই চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে স্পোর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করছে। ও নিজেও বিকেএসপির ছাত্র। আমিই ওকে ভর্তি করিয়েছি। সে টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। জাতীয় দলেও খেলেছে।খেলাধুলায় মনোযোগের পাশাপাশি পড়াশোনা কীভাবে চালাতেন?

ক্লাস সেভেন থেকে বক্সিং শুরু করি। সে সময় থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত বিকেএসপিতে ছিলাম। পড়াশোনা ও খেলাধুলা দুটোই ওখানে ছিল। ২০১৩ সালে যখন ওখান থেকে বের হয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার পর খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারিনি। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর আমার মনে হলো অন্তত গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ করতে হবে। ২০১৪ সালের পর থেকে বক্সিংয়ে অনেক ন্যাশনাল ক্যাম্প থাকত। এখনও ক্যাম্প হয়। সেগুলোতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা অনেক সাহায্য করেছেন। অনেক সময় ক্লাস করতে পারতাম না। তখন ডিপার্টমেন্ট থেকে জাতীয় খেলোয়াড় বিবেচনা করে শুধু পরীক্ষা দেয়ার জন্য বলত। আমি কোনো পরীক্ষা মিস করতাম না। এভাবেই আমি অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করলাম।

অনুশীলনের ফাঁকে বক্সার সুরো কৃষ্ণ চাকমা। ছবি: ফেসবুক

বক্সিং যারা শুরু করতে চায় তাদের কী পরামর্শ দেবেন?

আমি মনে করি বাংলাদেশের সবাই কম-বেশি বক্সিং সম্পর্কে জানে। কিন্তু প্রচলিত বেশি রাজশাহী, যশোর ও বরিশালে। সব জেলায় এখনও বক্সিং পৌঁছেনি। সব জেলায় বক্সিংয়ের জন্য সঠিক কোচ ও পরিবেশ নেই। আমি মনে করি যারা করতে চায় তারা বিকেএসপিতে ভর্তি হতে পারে তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি বক্সিংও করতে পারবে। বাইরে থেকে বক্সিংয়ে থাকাটা একটু কঠিন কারণ পড়াশোনা আর খেলাধুলা তখন আলাদা হয়ে যায়। নিয়মিত অনুশীলন আর পড়াশোনা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া কঠিন। যারা বিকেএসপির বাইরে থেকে বক্সিংয়ে আসতে চায় বিশেষ করে ঢাকাতে, তারা সে ক্ষেত্রে ভালো কোচের আন্ডারে গেলে ভালো করবেন।

সামনে কী কী টুর্নামেন্ট আছে?

প্রফেশনাল ও অ্যামেচার মিলিয়ে অনেকগুলো ম্যাচ আছে। জুলাইয়ে কমনওয়েলথ গেমস ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচ হবে। সেখান থেকে দেশে ফেরার পর র‍্যাঙ্কিং ফাইটে প্রফেশনাল আরও একটি ম্যাচ হতে পারে। আগামী বছর জাতীয়-আন্তর্জাতিক মিলিয়ে আমার ৩-৪টা টুর্নামেন্ট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

বক্সিং নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

বক্সার হিসেবে আমার লক্ষ্য র‍্যাঙ্কিং উন্নতি করা। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমার পরিকল্পনা আছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি। এশিয়া প্যাসিফিক চ্যাম্পিয়নশিপ টাইটেল আছে সেটা অর্জন করার চেষ্টা করছি। সে লক্ষ্যে এখন কাজ করছি। ওই টাইটেল জিততে পারলে তা হবে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

বক্সিংয়ে আপনার অনুপ্রেরণার উৎস কে? প্রিয় বক্সার কে?

সবার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাই। আশপাশের মানুষের ভালোবাসা, পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এসব কিছু থেকেই অনুপ্রেরণা পাই। তাছাড়া পরিবার, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি, পার্বত্যাঞ্চলসহ সারা দেশের মানুষের কাছ থেকে উৎসাহ পাই। তবে যখন খেলি তখন মানুষের যে ভালোবাসা পাই তা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দেয়। যখন বক্সিং প্রথম শুরু করি তখন মোহাম্মদ আলির নামই শুনেছিলাম প্রথম। পছন্দের বক্সারদের তালিকায় তিনি সবার ওপরে। বর্তমানে অনেক বক্সার আছে যাদের আমি পছন্দ করি। ম্যানি প্যাকিয়াও, ফ্লয়েড মেওয়েদারের মতো অনেকেই আছে যাদের আমি পছন্দ করি।

বক্সিংয়ে উন্নতির জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন?

বক্সিংয়ে উন্নতি করতে হলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ থাকা উচিত ৬টার বেশি। যদি বাইরের দেশের অ্যামাচারদের কথা বলি তাহলে অন্তত ৩-৪টা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলতে হবে। এখন যেহেতু পেশাদার ম্যাচ শুরু হবে, সেটা বাংলাদেশে নিয়মিত হবে। আশা করছি বছরে ৪-৫টা ম্যাচ থাকবে আর উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। নিয়মিত দেশের বাইরে অনুশীলন ও খেলার ব্যবস্থা যত বাড়বে, বাংলাদেশের বক্সিং তত উন্নত হবে।

দক্ষিণ এশীয় গেমসে ভারতের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়ছেন সুরো কৃষ্ণ চাকমা। ছবি: এএফপি

ফাইটনাইটে সারা পাওয়ার পর কেমন লাগছে?

যারা এখন আসছে আমার সঙ্গে কথা বলছে, এটা অবশ্যই ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি। এগুলো আমি উপভোগ করি। সবাই বক্সিং নিয়ে আগে তেমন জানত না বা আমরা ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি। হয়তো কোনো ত্রুটি ছিল বা খেলার উপস্থাপনায় হয়তো ভুল ছিল। বেশি করে খেলার আয়োজন ও বেশি প্রচার করা হলে হয়তো আরও আগে এ প্রতিক্রিয়াটা পেতাম। বক্সিংয়ে প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে হয়, বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?

আসলে স্পোর্টসের বিষয়টাই হচ্ছে শ্রদ্ধার। বিশেষ করে বক্সিংয়ের ক্ষেত্রে। আমরা যখন রিংয়ে নামি সে হয়তো আমার প্রতিপক্ষ কিন্তু রিংয়ের বাইরে মনে হয় তার চেয়ে কাছের বন্ধু কেউ নেই। মার্শাল আর্টসের খেলায় যে সম্মান প্রতিপক্ষের জন্য, সেটা আমি অন্য কোনো খেলায় দেখি না। আরেকজনকে মেরে রক্তাক্ত করলেও খেলা শেষ হওয়ামাত্র সে আমার ভাই। একদম আপন ভাইয়ের মতো।

১৫ বছরে বক্সিং করতে গিয়ে বড় কোনো চোটে পড়েছেন?

খেলাধুলায় চোটের ঝুঁকি থাকবেই। ফুটবল-ক্রিকেট সব জায়গাতেই চোট আছে। তবে বক্সিংয়ের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় ব্যাপারটা আলাদা। এটা যে কেউ খেলতে পারবে না। বক্সিংয়ের জন্য সাহস দরকার। এখানে চোট বেশি দিন থাকে না। সর্বোচ্চ ৭ দিন। আর আপনার অর্জন সারা জীবন থাকবে। সাফল্যের সে আনন্দে আঘাতের যন্ত্রণা ভুলে যাই। তবে আমি অনেক ভাগ্যবান যে কখনও বড় চোটে পড়িনি।

এ বিভাগের আরো খবর