বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ময়মনসিংহ থেকে রোনালডোর দেশে যাচ্ছেন তিন নারী ফুটবলার

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:৩০

১১ জনের সঙ্গে পাঁচজনকে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত হিসেবে। ওই ১১ জনের দুজন হচ্ছেন শিখা ও স্বপা। তানিশা আছেন স্ট্যান্ডবাই পাঁচজনের কাতারে। 

ময়মনসিংহ থেকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালডোর দেশ পর্তুগালে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন নান্দাইলের তিন ফুটবলার সিনহা জাহান শিখা, স্বপ্না আক্তার ও তানিয়া আক্তার তানিশা। উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় দলের জার্সিতে সুনাম কুড়ানোর লক্ষ্য তিনজনেরই।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ক্রীড়া পরিদপ্তরের উদ্যোগে বঙ্গমাতা নারী ফুটবলের সেরা ৪০ খেলোয়াড়কে নিয়ে বিকেএসপিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে ১৬ জনের একটি দলকে বেছে নেয়া হয় উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য।

১১ জনের সঙ্গে পাঁচজনকে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত হিসেবে। ওই ১১ জনের দুজন হচ্ছেন শিখা ও স্বপা। তানিশা আছেন স্ট্যান্ডবাই পাঁচজনের কাতারে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ২০১৮ সালে রানার আপ ও পরের বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়া নান্দাইলের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন এ তিন ফুটবলার। বর্তমানে শিখা নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছেন। স্বপ্না ও তানিয়া অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

উপজেলার রাজাবাড়িয়া গ্রামের টমটমচালক বিপ্লব মিয়ার মেয়ে শিখা মূলত খেলেন লেফট উইংয়ে। একই এলাকার ইলাশপুরের কৃষক ফয়জুদ্দিন ফকিরের মেয়ে স্বপ্না গোলকিপারের দায়িত্ব পালন করেন। আর মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কুতুবপুর গ্রামের দিনমজুর দুলাল মিয়ার মেয়ে তানিশা মূলত ডিফেন্ডার।

নিজের ফুটবল মাঠের যাত্রার পেছনের গল্পটা নিউজবাংলাকে বলেন এই তিন ফুটবলার।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় শিখার মা মারা যান। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর সেই পরিবারে জায়গা পাননি তিনি। বাবা ভরণপোষণের খরচ দিলে দেখভালের দায়িত্ব নেন শিখার নানি।পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়ই ফুটবল নেশায় জড়ান শিখা। তারপর থেকে শুধু ওপরের দিকে চলা।

সেই পথটা সহজ ছিল না উল্লেখ করে শিখা বলেন, ‘তারপরও খেলেছি। নানির পুত্রসন্তান নেই। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকায় অতিকষ্টে তিনি আমাদের বড় করেছেন। ডিম বিক্রি করেও টাকা দিয়েছেন আর বাবা যতটুকু পেরেছেন খরচ জুগিয়েছেন।’

কঠিন সময় পেরিয়ে এসে বিশ্বসেরা প্রশিক্ষণ পাওয়ার দ্বারপ্রান্তে শিখা। এমন সুযোগে আনন্দিত তার পুরো পরিবার।

ঘরের উঠানে শিখা ও স্বপ্নার ফুটবল অনুশীলন। ছবি: নিউজবাংলা

শিখা বলেন, ‘এমনও সময় গেছে যখন বাড়িতে তিন বেলা রান্না হয় নাই। ক্ষুধা নিয়ে খেলতে মাঠে গেছি। ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছি। পর্তুগাল যাওয়ার খবরে পরিবারের সবাই আনন্দিত। জাতীয় দলে খেলতে পারলেই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে।’

স্বপ্না আক্তারের শুরুর গল্পটাও একই রকম। সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ক্লাস এইটের ছাত্রী স্বপ্না। ভাইবোনেরা গার্মেন্টসকর্মী। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফুটবলের সঙ্গে পরিচয় তার।

স্বপ্না বলেন, ‘অনেক মেয়ে ফুটবল খেলছে দেখতাম। আমারও ভালো লাগত। আমিও খেলা শুরু করলাম। সেই থেকে মনে স্বপ্ন জাগে একদিন দেশসেরা ফুটবলার হব।’

অনুশীলনের জন্য ২ কিমি রাস্তা হেঁটে ও অনেকখানি পথ গাড়িতে পাড়ি দিতে হতো স্বপ্নাকে। ঘরে অভাব-অনটনের পাশাপাশি ছিল আশপাশের মানুষের বাঁকা দৃষ্টি। তবে মা-বাবার সমর্থন পাওয়ায় সবকিছু উপেক্ষা করে চালিয়ে গেছেন নিজের খেলা।

স্বপ্না যোগ করেন, ‘অনেক সময় বাবা-মা ধার করেও খরচ জুগিয়েছে। ভালো খেলি বলে প্রতি সপ্তাহে চন্ডীপাশা মাঠে আমার খেলা দেখতে যেতেন বাবা। এ জন্য মনে আরও বেশি সাহস পেয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে যেন খেলতে পারি এবং দেশের সুনাম যেন বয়ে আনতে পারি এই লক্ষ্য নিয়ে খেলে যাচ্ছি।’

তানিয়া আক্তার তানিশার শুরুটাও স্কুলে। মায়ের উৎসাহে ফুটবল খেলা শুরু করেন তিনি। বাবা অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। অর্থাভাবে অনেক দিনই গেছে যখন অনুশীলনে যেতে পারেননি।

অনেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেও মন্দ কথা বলার লোকের অভাব ছিল না।

তানিশা বলেন, ‘অনেকে বাবা-মাকে বলেছে ফুটবল খেললে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবা না। এসব খেলাধুলা করা ঠিক না। কিন্তু আমার পরিবার তাদের কথায় কান দেয়নি৷ ফলে আমিও নিজের মতো প্র্যাকটিস চালিয়ে গেছি।’

মায়ের সঙ্গে মেডেল হাতে তানিশা। ছবি: নিউজবাংলা

জাতীয় দলের হয়ে খেলে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি তানিশার আরেকটি বড় লক্ষ্য মায়ের চিকিৎসা। গলায় টিউমারের রোগী তার মা।

তানিশা বলেন, ‘চিকিৎসক বলেছেন অপারেশন করলে সুস্থ হবে। টাকার অভাবে অপারেশন হচ্ছে না। যদি ভালো কিছু করতে পারি, টাকা ইনকাম করতে পারি, তাহলে অপারেশন করে প্রথমে মাকে সুস্থ করব।’

এই তিন নারী ফুটবলারকে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মকবুল হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, তিন ফুটবলার অভাব-অনটনসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এ পর্যন্ত আসতে পরেছে। এই তিনজন ছাড়াও নান্দাইলের ১৫ সদস্যের একটি ফুটবল দলকে তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বাকিরাও ওই তিনজনকে দেখে উৎসাহ নিয়ে খেলছে।

এ বিভাগের আরো খবর