বিপিএলের অষ্টম আসরের প্লে-অফ থেকে মাঠে দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেয় বিসিবি। এলিমিনেটর, কোয়ালিফায়ারে মাঠে চোখে পড়ার মতো দর্শক না থাকলেও শুক্রবারের ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে থেকে স্টেডিয়াম এলাকায় ছিল উপচে পড়া দর্শক।
বিপিএলে দর্শক মাঠে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দিলেও টিকিট বিক্রি করার রাস্তায় হাঁটেনি বিসিবি। প্রতি ম্যাচের চার হাজার টিকিট ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে বিসিবি।
ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও প্লে-অফের প্রথম ম্যাচ থেকে সেগুলো চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে। প্রথম থেকে টিকিটের গায়ে লেখা মূল্যের দেড় থেকে দুই গুণ দামে বিক্রি করা হতো টিকিট।
ফাইনালের দিনের ছবি আরও ভয়াবহ। পাঁচ থেকে সাত গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে এক-একটি টিকিট।
স্টেডিয়াম-সংলগ্ন এলাকায় কালোবাজারিরা প্রকাশ্যেই টিকিট বিক্রি করছিলেন। দেড় শ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছিল ৭০০ টাকায়। স্থান ও লোক ভেদে ছিল দামের হেরফের।দর্শকদের কাছে ৭০০ টাকার টিকিট ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকাতেও বিক্রির অভিযোগ এসেছে নিউজবাংলার কাছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খেলার সময় বোর্ডের পক্ষ থেকে গেটে টিকিট চেকিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও সিকিউরিটির দায়িত্বের থাকা কর্মীরা কমিশনের ভিত্তিতে কালোবাজারিদের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করছেন। কমিশনের অঙ্কটা শতাংশের হিসাবে দাঁড়ায় ৭০-৩০।টিকিট বিক্রির ৭০ শতাংশ অর্থ চলে যাচ্ছে গেটে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেই কর্মী বা সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির কাছে। বাকি ৩০ শতাংশ যাচ্ছে যারা টিকিট বিক্রি করে দিচ্ছেন তাদের হাতে।
টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত একজন নিউজবাংলাকে এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো আসলে ভাই মিডলম্যান যাকে বলে। ওদের সঙ্গে চুক্তি থাকে যে এতগুলা টিকিট দেবেন। প্রতি টিকিটে একটা কমিশন তাদের দেয়া লাগে। ১০০ টাকার টিকিট ওরা দিয়ে বলে ৩৫০ টাকা তাদের দিতে হবে। এখন যত দামেই বিক্রি করি না কেন আমি, তাদের ৩৫০ টাকা দিতে হবে আমাকে। আর বাকিটা আমার। এখন ৫০০ টাকায় বিক্রি করি আর ১ হাজার টাকাতেই করি। ৩৫০ ওদের। বাকিটা আমার। ওদের তো লস নেই। ফ্রি টিকিট পায়। যা পায় তাই লাভ।’
মিরপুর ১ নম্বর থেকে খেলা দেখতে আসা রাইয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৭০০ টাকার টিকিট কিনলাম ভাই ২ ঘণ্টা ঘুরে। ২ হাজার টাকা দিয়ে কিনে এই ঢুকছি মাঠে।’
এখানেই শেষ নয়। ছেঁড়া টিকিটেও বাণিজ্য চালিয়েছেন সিকিউরিটিজ কমিটির কর্মীরা। কালোবাজারিদের মাধ্যমে কেনা টিকিট প্রথমে গেট দিয়ে ঢোকার সময় একজন এজেন্ট গেটের টিকিট চেকারকে জানিয়ে দেন বিষয়টি। তাদের ভাষায় ‘গেস্ট’ বলে সম্বোধন করা হয় সেই দর্শকদের।
ওই টিকিট কিছুটা ছিঁড়ে তাদের ভেতরে ঢোকানো হয়। এরপর গ্যালারিতে প্রবেশের সময় আরও একবার সেখানে তাদের গেস্ট বলে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। তাদের টিকিট তখন গেটকর্মী না ছিঁড়ে নিজের কাছে রেখে দেন। সেই টিকিট দিয়ে কয়েক দফায় দর্শক মাঠে ঢোকানোর নজির চোখে পড়েছে নিউজবাংলার।
এটি নিয়ে সিকিউরিটিজ কমিটির এক কর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তিনি। উল্টো সাংবাদিকদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন তিনি। কথা বলার সময় তিনি নিজের পরিচয়পত্রটি পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন।
সেই কর্তা বলেন, ‘এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। আমরা সবাই কঠোরভাবে চেক করিয়ে তারপর মাঠে দর্শক প্রবেশ করাচ্ছি। আপনারা সাংবাদিকরাই তো আরেকজনের কার্ড দিয়ে দর্শক মাঠে ঢোকান।’
বিষয়টি নিয়ে বিসিবির লজিস্টিক বিভাগের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তাদের অগোচরে যে হচ্ছে পুরো টিকিট বাণিজ্য এমনটা নয়। বিসিবির কাছে এ অব্যবস্থাপনা ওপেন সিক্রেট।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু কর্মী চুক্তিভিত্তিক সিরিজের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। তারাই এই ঘটনা ঘটায়। রাজনৈতিক লবিংয়ে তারা বেশ কিছু টিকিট পায়। সেগুলোই তারা কালোবাজারি করে। এটা বোর্ডের কর্তারাও জানেন। এটা ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে।’