গিনেস রেকর্ড গড়তে বাইসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামার ঘোষণাটা দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৬ মিনিটে। সে অনুযায়ী শনিবার সকাল ৮টা ৩ মিনিটে শুরু করেন সাইক্লিং। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু তিন ঘণ্টা পর প্রবল বাতাসে আর টিকতে পারেননি; পড়ে যান সাইকেল নিয়ে। ততক্ষণে ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন তাম্মাত বিল খয়ের।
চট্টগ্রামের এই সাইক্লিস্ট আজ রাজধানীর রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট এলাকায় হাত ছেড়ে (নো হ্যান্ডস) সাইকেল চালিয়ে এ পথ পাড়ি দেন। যদিও ইনজুরির কারণে রেকর্ড গড়া হয়নি তার।
তাম্মাতের এ সাইক্লিংয়ের প্রতি মুহূর্ত লাইভ করা হয় তার ফেসবুক পেজ থেকে। অনেকেই সে দৃশ্য দেখছিলেন, তবে হঠাৎ সাইক্লিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে দুঃখ পান। কেউ কেউ আবার তাকে পরেরবারের জন্য উৎসাহ দেন।
ভিডিওর একটি অংশে দেখা যায়, ক্ষতস্থান দেখছেন তাম্মাত। তার আশপাশে কয়েকজন। পরবর্তী সময়ে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
তাম্মাতের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত শনিবারের ইভেন্টের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
প্রচেষ্টা নেয়ার পরও চূড়ান্ত সাফল্য না পাওয়া নিয়ে জানতে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয় তাম্মাতের মোবাইলে, তবে তাকে পাওয়া যায়নি।
বেলা ৩টা ৫৬ মিনিটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে তাম্মাতের বক্তব্য পাওয়া যায়। সে স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘স্পোর্টস লাইফ ইজ আ চয়েস। বাট ইফ ইউ থিংক ইট’স অল অ্যাবাউট উইন, দেন ইউ আর রং! আই অলওয়েজ বিলিভ দ্যাট হ্যাপিনেস ইজ সাকসেস।’
স্ট্যাটাসে তাম্মাত বলতে চেয়েছেন, ব্যক্তি নিজে থেকেই ক্রীড়াজীবন বেছে নেন। এখানে সবসময় জয় আসবে মনে করাটা ভুল। সাফল্য মানে সুখ।
ব্যর্থতাকে গ্রহণ করার মানসিকতা আছে জানিয়ে তাম্মাত লেখেন, ‘নিজের সফলতাকে যেভাবে আমি গ্রহণ করি, ব্যর্থতাকে ঠিক একইভাবে গ্রহণ করি। গত ৭ বছরে আমি অনেক কিছু শিখেছি ও পেয়েছি। যাই হোক আলহামদুলিল্লাহ ফর এভ্রিথিং।’
সাইকেল নিয়ে পড়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে তাম্মাত বলেন, ‘৫০ কিমি শেষ হওয়ার পর বাতাস হঠাৎ বেড়ে যায় এবং ক্রস উইন্ড হচ্ছিল। খুব চেষ্টা করার পরও ৭০ কিমির সময় হঠাৎ বাতাস সোজা রাস্তায় এক কর্নারের দিকে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যায়। বিশ্বাস করেন, পড়ে যাচ্ছি দেখেও শেষবারের মতো হ্যান্ডেল বারে হাত না দিয়ে আবার মাঝখানে আনার চেষ্টা করলাম, কিন্তু হলো না!’
মনোবল অটুট আছে জানিয়ে এ যুবক বলেন, ‘আমি ভেঙে পড়ার মতো ছেলে না। হলে গত ৭ বছরে হয়তো শতবার ভেঙে পড়ে যেতাম। সবকিছু গুছিয়ে বাসায় আসলাম। মন ভালো আছে। আমার সামনের মাসে ন্যাশনাল গেমস। আমি বাড়ি ফিরছি না। এখানেই সুস্থ হয়ে ট্রেনিং করে ন্যাশনাল গেমস খেলব।
‘আমরা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের জন্য আবারও ডেট ফাইনাল করব। ইনশাআল্লাহ আমরা পারব। নতুন তারিখে সব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা দ্বিতীয় অ্যাটেম্বট নিব। সবাই দোয়া করবেন ‘
কে এই তাম্মাত
২০২১ সালের নভেম্বরে ইউটিউবভিত্তিক একটি চ্যানেলে আপলোড হওয়া ভিডিওতে তাম্মাত সম্পর্কে বড় পরিসরে ধারণা পাওয়া যায়। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত ভিডিওতে নিজের বিভিন্ন অর্জন ও পুরস্কারের বিষয়ে ধারণা দেন এ তরুণ।
তাম্মাত সাক্ষাৎকারগ্রহীতাকে বলেন, ‘আমি গত চার-পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সাইক্লিং ও রানিং ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছি এবং আমার বেশ কিছু পুরস্কার ও অর্জন আছে।’
এ সাইক্লিস্টের চট্টগ্রামের বাসায় ধারণ করা ভিডিওতে অনেক মেডেল ও সনদ দেখানো হয়। সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাম্মাত বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে প্রথম বাইসাইকেলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ২৫ দিনে পাড়ি দিয়েছিলাম। তার পর থেকে আমি বিভিন্ন স্পোর্টস অ্যাকটিভিটির সঙ্গে জড়িয়ে যাই। বিভিন্ন রানিং প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করি, সাইক্লিং ইভেন্টে।
‘গত চার-পাঁচ বছরে দেশে আমি প্রায় ৬০টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছি। আর দেশের বাইরে আমরা পাঁচটা ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছি। এসব হচ্ছে আমরা সাইক্লিং ও রানিং ইভেন্টের অর্জন।’
সে সময় সাক্ষাৎকারগ্রহীতা চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারির ইভেন্ট নিয়ে তাম্মাতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। প্রশ্ন ছিল- ‘আপনি তো ১৩০ কিলোমিটার ফ্রি হ্যান্ড চালাবেন। এ রকম কোনো রেকর্ড আছে কি না, শর্ট ভার্সনে?’
উত্তরে তাম্মাত বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে দেশে আমার তিনটি রেকর্ড আছে। একটি হচ্ছে ২০১৭ সালে ২৫ দিনে সাইকেলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা পাড়ি দেয়া। আরেকটি হচ্ছে, ২০১৮তে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এক হাজার কিলোমিটার ২৪ দিনে পাড়ি দিয়েছিলাম। তখন ওটা একা সবচেয়ে কম সময়ের রেকর্ড ছিল। যদিও বর্তমানে আরও কম সময়ের রেকর্ড আছে।
‘এরপর ২০১৯ সালে আমার নিজের ২০১৭ সালের যে রেকর্ডটা ২৫ দিনে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা পাড়ি দেয়া, সেটি ভেঙে ১৪ দিন ২০ ঘণ্টায় নতুন একটা রেকর্ড গড়ি। ওটা শর্টেস্ট টাইমে সাইকেলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা পাড়ি দেয়ার বর্তমান ন্যাশনাল রেকর্ড।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তরুণ এই সাইক্লিস্ট বলেন, ‘আমার একটাই স্বপ্ন এবং আমি সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। সেটি হচ্ছে বাইসাইকেলে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পদক এনে দেয়া।’
অলিম্পিক ইভেন্টে অংশ নেয়ার ইচ্ছার বিষয়ে জানতে চাইলে তাম্মাত বলেন, ‘আমাদেরকে যদি সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং যদি কোম্পানিগুলো আরও বেশি করে পৃষ্ঠপোষকতা করে আমাদেরকে, আমাদের সাইক্লিং ফেডারেশনকে, তাহলে তা আমাদের জন্য বেশি ভালো হয়। আসলে আর্থিক ব্যাপারটার কারণে প্রশিক্ষণের দিক দিয়ে আমরা সবসময় পিছিয়ে যাই।
‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস ট্রেনিং নেয়াটা খুব এক্সপেনসিভ (ব্যয়বহুল)। ওই ধরনের ট্রেনিংয়ের খরচ কোনো কোম্পানি থেকে পেলে ইনশাল্লাহ আমরাও একদিন আন্তর্জাতিক পদক পাব।’