বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাবলে থেকেও করোনা পজিটিভ, ঢাকা বলছে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না

  •    
  • ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:১৪

সাধারণত বাবলের ভেতরে থাকা ক্রিকেটারদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে। তারপরও বিপিএল চলাকালে মিনিস্টার ঢাকার শ্রীলঙ্কান পেসার ইসুরু উদানা আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। বায়ো বাবলে ঢোকার আগে বেশ কিছু ক্রিকেটার ও টিম স্টাফ করোনা আক্রান্ত হলেও টুর্নামেন্ট চলাকালীন করোনা আক্রান্ত প্রথম ক্রিকেটার এই উদানাই।

করোনা মহামারির ভেতর মাঠে খেলা ফেরাতে আবির্ভাব হয়েছিল বায়ো বাবলের। কোনো টুর্নামেন্ট বা সিরিজ আয়োজন করতে হলে আইসিসি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ঘোষণা দেয়া রয়েছে- সেটি অবশ্যই হতে হবে বায়ো বাবলের ভেতর থেকে।

বায়ো বাবল এমন একটি পরিবেশ, যেখানে ক্রিকেটার থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ, সাপোর্ট স্টাফ, গ্রাউন্ডসম্যানসহ টুর্নামেন্ট বা সিরিজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত সবার করোনা পরীক্ষা করানো হয়। এরপর সেই পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে, টুর্নামেন্ট চলাকালীন তাদের সবা‌ইকে আলাদা করে রাখা হয়। বাইরে কারো তাদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ থাকে না।

মূলত ক্রিকেটারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এই পন্থার উদ্ভাবন করেছিল আইসিসি।

অন্য সব টুর্নামেন্টের মতো বিপিএলের চলতি আসরটিও আয়োজিত হচ্ছে বায়ো বাবলের মধ্যে। আর নিয়ম অনুযায়ী বাবলের বাইরে থাকা কারো ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার শঙ্কা নেই।

‘এটা তো আসলে ভাই কন্ট্রোলে থাকে না। আমাদের যতটুকু ফলো করার আমরা করছি। তারপরও যদি হয়ে যায় তাতে কী করবো বলেন, এটার কন্ট্রোল তো কারো হাতে নেই।’

এমনকি টুর্নামেন্ট সংশ্লিষ্টদের থাকার হোটেল, যাতায়াতের বাহন সব কিছুই জীবাণুমুক্ত করে তারপর ব্যবহার করা হয়। যার ফলে বাবলের ভেতর থাকা ক্রিকেটারদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে।

তারপরও বিপিএল চলাকালীন মিনিস্টার ঢাকার শ্রীলঙ্কান পেসার ইসুরু উদানা আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। বায়ো বাবলে ঢোকার আগে বেশকিছু ক্রিকেটার ও টিম স্টাফ করোনা আক্রান্ত হলেও টুর্নামেন্ট চলাকালীন করোনা আক্রান্ত প্রথম ক্রিকেটার এই উদানাই।

কী করে কঠোর বায়ো বাবলে থাকার পরও একজন ক্রিকেটার আক্রান্ত হলেন করোনায়? প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। আর সেটিই জানতে নিউজবাংলা যোগাযোগ করেছে মিনিস্টার ঢাকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

তবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির মিডিয়া ম্যানেজার মিনহাজ উদ্দিন খান দিলেন দায়সারা উত্তর। করোনার বিষয়টি নাকি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। একইসঙ্গে তাদের কিছু করার নেই বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

মিনহাজ বলেন, ‘এটা তো আসলে ভাই কন্ট্রোলে থাকে না। এটা তো আমাদের কন্ট্রোলে নেই। আমাদের যতটুকু ফলো করার করছি। তারপরও যদি হয়ে যায় তাতে কী করবো বলেন, এটার কন্ট্রোল তো কারো হাতে নেই।’

এসময় জাতীয় দলের নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও আইপিএলের প্রসঙ্গ টেনে খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টাও করেন তিনি।

মিনহাজ বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড সিরিজে আমরা বায়ো বাবলে ছিলাম। তারপরও কিন্তু আমাদের প্লেয়াররা পজিটিভ হয়েছিলেন। আমাদের ট্রাভেলিং হচ্ছে, ট্রাভেলিংয়ের স্বার্থে হলেও আমাদের বাইরে যেতে হচ্ছে। এখন যে প্রটোকলটা বলে দেয়া হয়েছে সেটা মেইন্টেইন করতে হবে। আইপিএলেও এমন হয়েছিল, বাবল-টাবল ছিল। সেখানেও কিন্তু কোভিড সংক্রমণ হয়েছিল।’

‘এখানে যেটা হতে পারে, ও (উদানা) হয়তো দেশ থেকেই করোনা নিয়ে এসেছিল। আমাদের এখানে এসে পরীক্ষা করানোর সময় হয়তো তার শরীরে ভাইরাসটা সুপ্ত অবস্থায় ছিল বা আমাদের অথবা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের করানো পরীক্ষায় ফলস নেগেটিভ এসেছিল।’

তবে এ বিষয়ে বায়োবাবলকে দোষ দিতে নারাজ বিসিবি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসক মানজুর আহমেদের দাবি, বিদেশি ক্রিকেটাররা তাদের দেশ থেকে করোনা নিয়ে আমাদের দেশে আসছেন। আসার পর সেটি সুপ্ত অবস্থায় থাকার কারণে তাৎক্ষণিক ধরা পড়েনি।

আর যখন সেটি দেহে উপস্থিতির জানান দিয়েছে তখন টেস্টের পর ধরা পড়েছে। এখানে বায়ো বাবলে কোনো ফাটল দেখছেন না তিনি।

মানজুর বলেন, ‘এখানে যেটা হতে পারে, ও (উদানা) হয়তো দেশ থেকেই করোনা নিয়ে এসেছিল। আমাদের এখানে এসে পরীক্ষা করানোর সময় হয়তো তার শরীরে ভাইরাসটা সুপ্ত অবস্থায় ছিল, বা আমাদের অথবা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের করানো পরীক্ষায় ফলস নেগেটিভ এসেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন চট্টগ্রামে গিয়ে তার ভেতর ভাইরাসটি জেগে উঠেছে। যার ফলে এখন পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে। যারা কোভিড পজিটিভ হচ্ছে তারা আগে থেকেই বাহক ছিলেন। আমাদের বাবলে এসে কেউ পজিটিভ হননি।’

তবে বিসিবির এই চিকিৎসকের মতে, খেলোয়াড়দের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াতের বিষয়টি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। আর বড় বড় ইভেন্টে এমন দুই-একজন করোনা পজিটিভ হতেই পারে।

মানজুর বলেন, ‘বায়ো বাবল ঠিকই আছে। সংক্রমণ তো হয় বাতাসে। আর প্লেয়াররা যে ট্রাভেল করছে সেটা তো রিস্কি। সবই ঠিক আছে। কিন্তু তারপরও তো হচ্ছে। আসলে এটা (করোনা) তো অদৃশ্য। কোথা থেকে হচ্ছে সেটা তো ট্রেস করা যাচ্ছে না। এতো লোকবল, এতো বড় ইভেন্ট, সেখানে দু-একটা এমন কেস তো হবেই। তো বায়ো বাবলের ভেতর থেকেও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা সব বাবলেই হচ্ছে।’

যদিও বেশকিছু চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে- করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি খুব কাছাকাছি থাকলে বায়ুর মাধ্যমে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে খেলোয়াড়দের কাছাকাছি বাবলের বাইরে থাকা কেউ যেতে পারে না।

যদি দেশ থেকে উদানা ভাইরাসটি দেহে বহন করে না আনেন সেক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

করোনা আক্রান্ত কেউ কতটা কাছে এসেছিল ক্রিকেটারদের যার ফলে বাতাসের মাধ্যমে করোনা প্রবেশ করলো তার দেহে? তাহলে এখনে দোষটা আসলে কার? বজ্র আঁটুনি ফসকা গেড়ো বায়ো বাবলের, না এই বায়ো বাবল নিশ্চিত করা যাদের দায়িত্ব ছিল তাদের দায়িত্বে অবহেলার?

বাংলাদেশের বায়ো বাবল প্রশ্নবিদ্ধ ছিল আগে থেকেই। গত বছর অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দেখা গিয়েছিল ইনডোর থেকে ক্রিকেটারদের যাওয়া-আসার পথে সাধারণ মানুষের আনাগোনা। খুব কাছ থেকে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারদের তারা দেখছেন। অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। এমনকি ক্রিকেটারদের মুখেও দেখা যায়নি মাস্কের উপস্থিতি।

এখানেই শেষ নয়, পাকিস্তান সিরিজে চট্টগ্রাম টেস্ট চলাকালে বিসিবির ফটোগ্রাফার রতন গোমেজ বায়ো বাবলে থাকা সত্ত্বেও বোর্ড পরিচালক আকরাম খানের এক অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন সাংবাদিক ও অন্যদের সঙ্গে। আর ঢাকায় তো এক দর্শক নিরাপত্তা বলয় ভেঙে মাঠেই ঢুকে পড়েছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর