ট্রফি দিয়ে বছর শেষ। শিরোপায় নতুন বছর শুরু। এবার ঘরোয়া ফুটবলে টানা দুটি শিরোপা ঘরে তুলেছে ঢাকা আবাহনী। বছর তিনেক পর ডাবল শিরোপার উদযাপন তাই বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাঙাল দেশের ফুটবলের সফলতম ফুটবল দলটি।
রাজধানীর একটি হোটেলে মঙ্গলবার উৎসবের মধ্য দিয়ে ডাবল শিরোপার উদযাপন সারল আবাহনী।
এ উৎসবে স্ত্রী-সন্তানসহ শামিল হোন ডাবলজয়ী খেলোয়াড়রা। আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক খেলোয়াড়, টিম ম্যানেজমেন্ট, সংগঠক ও ভক্তরা।
আবাহনীর সঙ্গে অন্যান্য ক্লাবের পার্থক্য সংবাদমাধ্যমকে জানালেন দলের মিডফিল্ডার ইমন বাবু।
তিনি বলেন, ‘আমি যদি ভালো সিএনজি চালাইতে পারি তাহলে আমাকে কেউ বলবে না ভালো ট্রাক চালায়া দেখাও। আবাহনীর সঙ্গে অন্যান্য ক্লাবের পার্থক্য এই দিকটায়। এই ক্লাব সবাইকে আপন করে নেয়। একটা পরিবারে পরিণত হয়।’
আবাহনীকে পরিবার মনে করেন দলের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল আগুস্তো। তিনি বলেন, ‘যখন থেকে এখানে এসেছি তখন থেকে পরিবারে পরিণত হয়েছে। এখানে আসার পর সবাই ভালোভাবে ট্রিট করেছে আমাকে। খেলোয়াড় হিসেবে আমি সব সময় ক্লাবের জন্য যুদ্ধ করেছি। এবং আশা করি আরও অনেক ট্রফি জিতব।’
উদযাপনে উপস্থিত আবাহনীর কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়রা। ছবি: সংগৃহীতদলের এ সাফল্যকে জাদুকরি বলছেন ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কাজী নাবিল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান মুহূর্তটি আমাদের কাছে একটা জাদুকরি মুহূর্ত। পরপর ২০ দিনের মধ্যে দুটি ট্রফি জেতা দারুণ কিছু। শক্তিশালী সব দলকে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে পেয়েছি। কিংস, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও সাইফের মতো দলগুলোকে পেয়েছি। সব দলকে মোকাবিলা করে এখানে পৌঁছাতে হয়েছে।’
২০১৮ সালের পর উদযাপনের এমন মুহূর্ত পেয়েছে আবাহনী। মাঝে সম্ভাব্য প্রায় সকল শিরোপা গেছে বসুন্ধরা কিংসের শিবিরে। দলের এমন কামব্যাকে আবেগতাড়িত ক্লাবের টিম ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু।
তিনি বলেন, ‘এবার দলবদলে অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিছু খেলোয়াড় ছেড়ে দিতে হয়েছে। কিছু খেলোয়াড় নিতে হয়েছে। তার ফল মাঠে এসেছে। আবাহনী কখনও দ্বিতীয় হওয়ার জন্য খেলে না। সব সময় মাঠে নামে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’
ডাবল শিরোপায় ট্রফি খরা কাটল আবাহনীর হেড কোচ মারিও লেমসের। দুই মৌসুম ব্যর্থতার বেড়াজালে কাটিয়ে বলা চলে নিজের ‘গুডবাই’ মৌসুমে দলকে ডাবল শিরোপা জেতালেন এ পর্তুগিজ কোচ। তবে ডাবল ট্রফি জেতা মোটেও সহজ ছিল না বলে মন্তব্য করেন লেমস।
ডাবল শিরোপার সুবাদে দলকে ৭৫ লাখ টাকার পুরস্কার তুলে দেয় ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। ছবি: সংগৃহীতআবাহনীর হেড কোচ বলেন, ‘স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে আমরা দাপট নিয়ে খেলেছি। কিন্তু ফেডারেশন কাপে সত্যিকার লড়াই হয়েছে। অনেক খেলোয়াড় বাদ পড়েছে। অনেকে ইনজুরিতে ছিল। রীতিমতো যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছিল দলে। এর মধ্য দিয়ে জয় বের করে আনতে হয়েছে।’
আবাহনীর লক্ষ্য এখন ট্রেবল জয়ের দিকে। প্রিমিয়ার লিগ জিতে ঘরোয়া ফুটবলের সম্ভাব্য সকল শিরোপা জিততে চান দলের অধিনায়ক নবীব নেওয়াজ জীবন।তিনি বলেন, ‘সামনে লিগ শুরু হচ্ছে। আমরা যাতে লিগ জিতে ট্রেবল জিততে পারি সেই আশাই থাকবে।’
মাঝে দলের ফরোয়ার্ড ও বিশ্বকাপ খেলুড়ে কোস্টারিকান ফুটবলার ড্যানিয়েল কলিনদ্রেস এসে সবাইকে চমকে দিলেন। বাংলায় আধো আধো কণ্ঠে স্বাগত জানালেন সবাইকে। বলেন, ‘শুভরাত্রি সবাইকে। আমি এখানে আসতে পেরে খুশি। আবাহনী গ্রুপকে ধন্যবাদ।’ বক্তব্য শেষে পুরস্কার হিসেবে দলকে ৭৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। স্বাধীনতা কাপের জন্য ২৫ ও ফেডারেশন কাপের জন্য ৫০ লাখ টাকা তুলে দেয়া হয়।
পরে বড় কেক কেটে ডাবল জয়কে স্মরণীয় করে রাখে আবাহনী।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জিতেছে আবাহনী। স্বাধীনতা কাপ জিতেছে দুবার। আর ফেডারেশন কাপ জিতেছে সর্বোচ্চ ১২বার।