বাবা ছিলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবিতে। সীমান্তের নিরাপত্তায় ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী। নিজের মতোই দেশের নিরাপত্তায় ছেলেকেও পাঠিয়েছিলেন। সেই ছেলের হাত ধরে এসেছে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়। সন্তানের এমন পারফরমেন্সে গর্বে ভরে উঠেছে বাবার বুক।
বলছি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট দলের সদস্য এবাদত হোসেনের কথা।
এই পেস বোলারের নায়কোচিত বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় দেখেছে বাংলাদেশ।
এবাদতের এমন সাফল্যে সারা দেশের সঙ্গে আনন্দে ভাসছে তার জন্মস্থান মৌলভীবাজারও। গর্বের সীমা নেই পরিবারের।
বাংলাদেশের অভাবনীয় জয়ে ছেলের অবদানে উচ্ছ্বসিত এবাদতের বাবা নিজাম উদ্দিন। বললেন, ‘নিজে বিজিবিতে চাকরি করেছি। দেশ রক্ষার কাছে সারাটা সময় নিয়োজিত থেকেছি। ছেলেও দেশের পক্ষে এতো বড় সুনাম বয়ে আনতে পেরেছে, এটা আমার জন্য খুবই গর্বের ।’
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলি গ্রামের ছেলে এবাদত হোসেন চোধুরী পরিচিত জিবান নামে। তার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, স্কুল শিক্ষক ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। বইছে আনন্দের বন্যা।
কাঁঠালতলি গ্রামের নিজাম উদ্দিন চৌধুরী ও সামিয়া বেগম দম্পতির ৭ সন্তানের মধ্যে এবাদত দ্বিতীয়।
এবাদত নিজ এলাকার পাঠাশালা শেষে ভর্তি হন স্থানীয় কাঁঠালতলি উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছোট বেলা থেকেই তার ক্রিকেটের প্রতি ছিল ঝোঁক। দিনে দিনে স্কুলের দল এবং স্থানীয় উপজেলাভিত্তিক ক্রিকেট দলে সবার প্রিয়-মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। আস্তে আস্তে নাম-ডাক আর জনপ্রিয়তা নিজ ইউনিয়ন, স্কুলের গণ্ডি ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা জেলায়। স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় দলে খেলার।
কিন্তু মধ্যভিত্ত পরিবারের সদস্য এবং পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয় স্বপ্ন পূরণের আগেই। বাবার অবসরের পরপরই চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন। এসএসসি পাস করার পরই যোগ দেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়ে প্রথমে ভলিবল খেলতেন। কিন্ত তার মন জুড়ে রয়েছে ক্রিকেট। আস্তে আস্তে বিমানবাহিনীতে ক্রিকেটে যুক্ত হন।
পরের ইতিহাস সবার জানা। বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ের নায়ক হয়ে এবাদত এখন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
এবাদতের পারফরম্যান্সে উল্লসিত তার মা সামিয়া বেগম নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমার ছেলে যেন আরও ভালো খেলতে পারে দেশবাসীর কাছে সেই দোয়া চাই। নামাজ পড়ে ছেলের জন্য দোয়া করেছি। আজ সকালে কথা হয়েছে। সে ভালো আছে এবং খুব খুশি।’
এবাদতের এ খুশি ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশীদের মধ্যেও। তাদের একজন ইমন চৌধুরী বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী। আমাদের বিশ্বাস ছিল সে একদিন দেশের মুখ আলোকিত করবে। আজ তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
এসএসসি পাস করে ২০০৮ সালে সৈনিক পদে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন এবাদত। সেখানেই চাকরির পাশাপাশি বিমান বাহিনীর নিয়মিত ভলিবল খেলতে শুরু করেন। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি তাঁর টান কমেনি মোটেও।
২০১৬ সালে রবি পেসার হান্টের শেষ রাউন্ডে ১৩৯.০৯ কিলোমিটার গতিতে বল করে সবাইকে চমকে দেন এবাদত। নজরে আসেন সবার। এরপর থেকে এবাদতকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ২০১৯ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এবাদতের অভিষেক হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই তাঁর টেস্টে অভিষেক।
তার পর যা হলো তা তো ইতিহাস!