মৌলভীবাজারের বড়লেখায় তার জন্ম। সেখানেই বেড়ে ওঠা। বাবা চাকরি করতেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি)। বাবার দেখানো পথেই ২০১২ সালে এবাদত হোসেন সৈনিক পদে যোগ দেন বিমান বাহিনীতে।
সৈনিকের দায়িত্ব পালন করলেও খেলার প্রতি ভালোবাসা ছাড়তে পারেননি। সে ভালোবাসা থেকেই নাম লেখান বিমান বাহিনীর ভলিবল দলে।
তাতেও যেন ঠিক মন ভরছিল না। ৬ ফুটের বেশি উচ্চতার এবাদত নামলেন ক্রিকেট মিশনে।
বিমান বাহিনীতে যোগ দেয়া এবাদত ২০১৪ সালে নাম লেখালেন ২২ গজের ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে। ঢাকার সিটি ক্লাবের হয়ে শুরু করলেন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট।সেই থেকে শুরু। গতির ঝড় তুলে নজর কাড়েন সবার।
২২ গজের লড়াইয়ে নিজের স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে ২০১৬ সালে অংশ নেন পেইসার হান্টে। সেখানে ১৪ হাজার ৬১১ প্রতিযোগীকে টপকে সেরা হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এবাদত। ঢাকায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্বে তার করা বলটির গতি ছুঁয়েছিল ১৩৯.৯ কি.মি/ঘণ্টা।
পেইসার হান্টে ঝড় তোলার পুরস্কার হিসেবে এবাদত সরাসরি জায়গা করে নেন জাতীয় দলের হাই-পারফরম্যান্স ইউনিটে (এইচপি)। সে বছরের নভেম্বরে অনেকটা ভোজবাজির মতো করেই জায়গা পেয়ে যান নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য ঘোষিত ২২ জনের স্কোয়াডে।
গতির ঝড় তুলে নজর কেড়েছিলেন সাবেক পাকিস্তানি সিমার আকিব জাভেদ। তার বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়ে তো আকিব বলেছিলেন যে এবাদতই হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ স্পিড স্টার।
আকিব মন্তব্য করেছিলেন, ‘এবাদতকে দেখে আমার মোহাম্মদ ইরফানের কথা মনে পড়ে যায়। ইরফানকে আমরা ছয় মাসের মধ্যে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের জন্য তৈরি করেছিলাম। এবাদত ঘণ্টায় ১৩৮/৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। শরীরটা গড়ে তুলতে পারলে ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বোলার হবে।’
এবাদত নজর কেড়েছিলেন তৎকালীন এইচপি দলের বোলিং কোচ চাম্পাকা রামানায়েকেরও। গতি দুর্দান্ত থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় লাইন লেন্থ। বল ডেলিভারির আগে একদিকে ঝুঁকে যেত এবাদতের মাথা। আর তাতেই নিশানা চুকে সব হয়ে যেত এলোমেলো।
বিষয়টি নিয়ে লম্বা সময় কাজ করেছেন রামানায়েকের অধীনে। সমস্যা ঠিক করে ফিরে এসেছিলেন সেরা ছন্দে।
তবে পুরোপুরি সমাধান না হওয়ায় দিনের পর দিন তাকে বসে থাকতে হয়েছে সাইড বেঞ্চে। ক্রিকেটে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দল পেয়েও ছিলেন বেঞ্চে।
একই ভাগ্য ছিল জাতীয় দলেও। তাসকিন আহমেদ দুর্দান্ত ফর্মে থাকায় আলোচনার ও চিন্তার বাইরে থেকে যান দিনের পর দিন।
সাদা বলে অভিষিক্ত হওয়ার তিন বছর পর ২০১৯ সালে এবাদতের অভিষেক হয় টেস্ট ক্রিকেটে। অভিষেকটা রাঙাতে না পারলেও খুব একটা খারাপ ছিল না তার পারফরম্যান্স।
গড় ও উইকেটের অভাবে তাকে বারবার দাঁড়াতে হয়েছে সমালোচনার কাঠগড়ায়। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সমালোচনাকে পিছু ছাড়াতে পারেননি ডানহাতি এবাদত।
ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজে তার পারফরম্যান্স দেখে প্রশ্ন উঠেছিল কেন তাকে নেয়া হলো নিউজিল্যান্ড সিরিজে। আবু জায়েদ রাহিকে বাদ দিয়ে কেন তাকে নেয়া হলো দলে।
উত্তরটা এবাদত দিলেন মাঠের পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে মাঠে নামার আগে তার বোলিং গড় ছিল এক শর ওপর। ১০ টেস্টে উইকেট ছিল ১১টি। কিন্তু মাউন্ট মঙ্গাইনু টেস্ট শেষে সেই গড় নেমে এসেছে ৫৬.৫৬-তে। আর উইকেট ১৮টি।
বাংলাদেশের টেস্ট দলে নিয়মিত হওয়ার পরও বিমান বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দেননি এবাদত। প্রতিবার উইকেট নেয়ার পর নিজের সার্ভিসেস সতীর্থদের উদ্দেশে স্যালুট করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং লাইন আপে একাই ধস নামিয়ে দেন এবাদত। যার সুবাদে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪০ রানের। হেসেখেলেই ঐতিহাসিক এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন টাইগাররা।
যার দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়েই উঠেছিল প্রশ্ন, সেই বনে যান ম্যাচসেরা। আর বাংলাদেশও পেয়ে যায় টেস্টে তাদের এক নম্বর পেইসারকে।