সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতার পর থেকে আলোচনায় আছেন রাঙ্গামাটির মেয়ে রিতুপর্ণা চাকমা।
শিরোপা জয়ের আনন্দের মাঝেও রিতু এবং তার শিক্ষক ও প্রশিক্ষকরা জানান বেশ কিছু আক্ষেপের কথা।
তারা বলছেন, নিজেদের উদ্যোগে ও চেষ্টায় রিতুর এতদূর আসা। প্রশাসন থেকে তারা তেমন কোনো সাহায্য পাননি। শিরোপা জয়ের পর দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনা ফুটবলারদের কোনো খোঁজ নেননি রাজনৈতিক নেতারাও।
রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে গত ২২ ডিসেম্বর সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দল।
এরপর গত ৩১ ডিসেম্বর কাউখালী উপজেলার ৩ নম্বর ঘাগড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাগড়া সদ্ধর্ম বৌদ্ধবিহারে রিতুর হাতে তুলে দেয়া হয় সম্মাননা স্মারক। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিহার পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় লোকজন।
এই অনুষ্ঠানে রিতুও তার শিক্ষক বীর সেন চাকমা, ফুটবল প্রশিক্ষক শান্তিমুনি চাকমাকে সম্মাননা স্মারক দেন।
রিতু বলেন, ‘আমি এতদূর আসার পেছনে বীর সেন চাকমা, শান্তিমুনি চাকমাসহ আমার স্কুলের অনেকে বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছেন। শুধু তারাই নন, স্থানীয় অনেকেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আপনারা আশীর্বাদ করলে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করতে পারব।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে রিতু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার ক্যাম্প থেকে বাড়ি আসার পর কেউ কোনো সংবর্ধনা বা পাশে থাকার আশ্বাস দেয়নি। শুধু ঘাগড়া সদ্ধর্ম বৌদ্ধবিহার পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় লোকজন একসঙ্গে সংবর্ধনা দেবে বলে বাড়ি এসেছি।’
শিরোপা জয়ের পর ২৯ ডিসেম্বর ফুটবলার আনাই ও আনুচিং-এর বাড়িতে যান খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।
মামুনুর রশিদ যখন জেলা প্রশাসক ছিলেন তখন খেলোয়াড়দের কিছু সাহায্য করেছেন আর বর্তমান যিনি আছেন, তিনি জুতা কেনার জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা আর কোনো সাহায্য পায়নি।
তিনি তাদের চার লাখ টাকাসহ নলকূপ স্থাপন ও রাস্তা মেরামতের আশ্বাস দেন। তবে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক রিতু ও রূপনার খোঁজ নেননি বলে জানান তাদের প্রশিক্ষক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এর আগে রিতু ও রূপনাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তাদের আবার ডাকা হবে। তাদের যা যা প্রয়োজন সেই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।’
রিতুর প্রশিক্ষক শান্তিমুনি চাকমা বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে নিজের বেতনের টাকা দিয়ে খেলোয়াড়দের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। জেলা ক্রীড়া সংস্থা, পার্বত্য জেলা পরিষদ বা কোনো রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য করেনি।
‘মামুনুর রশিদ যখন জেলা প্রশাসক ছিলেন তখন খেলোয়াড়দের কিছু সাহায্য করেছেন আর বর্তমান যিনি আছেন তিনি জুতা কেনার জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা আর কোনো সাহায্য পায়নি।’
রিতু ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বিকেএসপিতে চলে যান।
তার শিক্ষক বীর সেন চাকমা জানান, রিতুসহ স্কুলের খেলোয়াড়দের যাবতীয় খরচ এই স্কুলই বহন করছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুনীল কান্তি দে বলেন, ‘সঠিক সময়ে কোনো প্রতিভাকে মূল্যায়ন করতে না পারলে তা আর বিকশিত হয় না। তাই রিতু, রূপনাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের যা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করতে হবে।’
রিতুদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুসা মাতব্বর বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে পরে কথা বলব।’