বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারী খেলোয়াড়রা বিশ্বজুড়ে বেতন বৈষম্যের শিকার

  •    
  • ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:২৮

ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবলের মতো জনপ্রিয় বৈশ্বিক খেলাগুলোতে পুরুষ অ্যাথলিটরা নারীদের চেয়ে অনেক বেশি পারিশ্রমিক পান। এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে অধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের।

সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের আনন্দের পাশাপাশি নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়দের বেতন বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন অনেকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে বুধবার রাত থেকেই চলছে আলোচনা।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়দের মধ্যে তীব্র বেতন বৈষম্য রয়েছে।

ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবলের মতো জনপ্রিয় বৈশ্বিক খেলাগুলোতে পুরুষ অ্যাথলিটরা নারীদের চেয়ে অনেক বেশি পারিশ্রমিক পান। এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে অধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের।

ক্রিকেটের দিকে তাকালে বৈষম্যের পরিষ্কার চিত্র চোখে পড়ে।

২০১৭ সালের সবশেষ বেতন কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা এ-প্লাস শ্রেণির পুরুষ ক্রিকেটাররা প্রতি মাসে বিসিবি থেকে বেতন পাচ্ছেন চার লাখ টাকা করে। এ-শ্রেণির ক্রিকেটাররা পান তিন লাখ টাকা। বি-শ্রেণির ক্রিকেটাররা দুই লাখ টাকা। সি-শ্রেণিতে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ডি-শ্রেণির ক্রিকেটাররা পান মাসে এক লাখ টাকা করে।

চলতি বছর জুনে সাকিব-তামিমদের মূল বেতন ১০-১২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

নারী ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও একই হারে বেতন বাড়িয়েছে বোর্ড। তবে বৈষম্যের মাত্রা নারী ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে ভয়াবহ।

২০ শতাংশ বেতন বাড়ার পরেও এ-ক্যাটাগরিতে নারী ক্রিকেটারদের মাসিক বেতন এখন ৬০ হাজার টাকা। বি-ক্যাটাগরিতে ৪০ হাজার। সি-ক্যাটাগরিতে ৩০ ও ডি-ক্যাটাগরিতে ২০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন সালমা-জাহানারারা।

নারী ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আগে ওয়ানডেতে ম্যাচ ফি ছিল ১০০ ডলার ও টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ ফি ছিল ৭৫ ডলার। এখন ওয়ানডেতে ম্যাচ ফি করা হয়েছে ৩০০ ডলার ও টি-টোয়েন্টিতে করা হয়েছে ১৫০ ডলার।

সাফ অনূর্ধ্ব ১৯ নারী ফুটবলে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের পর নারী খেলোয়াড়দের বেতন বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন অনেকে

ক্রিকেটের অন্যতম দুই পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও রয়েছে একই ধরনের বৈষম্য।

অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বছরে সাড়ে ৭ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পারিশ্রমিক পান বোর্ডের কাছ থেকে। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৬৩ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বড় তারকা অ্যালিস পেরির বাৎসরিক পারিশ্রমিক তিন লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। এ হিসেবে মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় তার বেতন প্রায় ১৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার একজন চুক্তিবদ্ধ পুরুষ ক্রিকেটার বছরে দুই লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার আয় করেন। নারীদের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক মাত্র ৬৫ হাজার ডলার।

ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের আয়ের ক্ষেত্রেও আছে প্রবল লিঙ্গবৈষম্য। জফ্রা আর্চার ও বেন স্টোকসের মতো চুক্তিবদ্ধ সেরা ক্রিকেটাররা বোর্ড থেকে বছরে প্রায় সাড়ে নয় লাখ পাউন্ড আয় করেন, বাংলাদেশি মুদ্রায় মাসে যা প্রায় ৮৬ লাখ টাকা।

তবে গড়পড়তা বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ পাউন্ড আয় করেন জাতীয় দলের একজন পুরুষ ক্রিকেটার।

তবে নারীদের ক্ষেত্রে এ অঙ্কটা অনেক কম। ইংল্যান্ডের হিদার নাইট ও ট্যামি বিউমন্টের মতো সেরা তারকাদের বছরে বেতন এক লাখ পাউন্ড বা মাসে সাড়ে নয় লাখ টাকা।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানেও রয়েছে তীব্র লিঙ্গ বৈষম্য। ভারতে ভিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাদের মতো তারকাদের বাৎসরিক বেতন সাত কোটি রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় মাসে ৬৬ লাখ টাকা।

আর ভারতীয় নারী দলের অধিনায়ক হারমানপ্রিত কউর ও তারকা খেলোয়াড় স্মৃতি মান্ধানা বোর্ড থেকে বেতন পান বছরে ৫০ লাখ রুপি বা মাসে প্রায় ৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।

আরেক পরাশক্তি পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন পান পুরুষ দলের অধিনায়ক বাবর আজম। তার বেতন বছরে ১ কোটি ৩২ লাখ পাকিস্তানি রুপি। টাকার অঙ্কে ও মাসের হিসেবে যা প্রায় ৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

সেখানে নিদা দার ও সানা মিরের মতো পাকিস্তানের সেরা নারী ক্রিকেটাররা বেতন পান মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পাকিস্তানি রুপি বা প্রায় ৫৮ হাজার টাকা।

চুক্তিবদ্ধ নারী ও পুরুষ ক্রিকেটাররা বেতনের বাইরেও টুর্নামেন্ট চলাকালীন ম্যাচ ফি, প্রতিদিন ভাতা পেয়ে থাকেন। এটি নির্ধারিত হয় সিরিজ ও ফরম্যাট অনুযায়ী।

এর বাইরে ব্যক্তিগত স্পন্সরশিপ, মিডিয়া বিজ্ঞাপনে কাজ করার অর্থও যোগ হয় ক্রিকেটারদের আয়ের সঙ্গে। তবে এসব ক্ষেত্রেও নারীর চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে পুরুষ খেলোয়াড়েরা।

ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও রয়েছে বিশ্বব্যাপী বৈষম্য।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) মারিয়া-মোগিনিদের নামমাত্র সম্মানি দিচ্ছে। পুরুষ ফুটবলারদের বাফুফে কোনো বেতন না দিলেও তাদের বড় আয়ের উৎস লিগ ও ক্লাব।

নারীদের লিগে সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পান একজন খেলোয়াড়। অন্যদিকে, পুরুষদের লিগ থেকে একজন খেলোয়াড় আয় করেন সর্বোচ্চ ৭০-৮০ লাখ টাকা।

পুরুষদের সমান পারিশ্রমিকের দাবিতে আমেরিকার জাতীয় দলের ২৮ নারী ফুটবলার ২০১৯ সালে আদালতে গিয়েছিলেন

২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয় আমেরিকার পুরুষ জাতীয় দল, আর পরের বছর বিশ্বকাপ জয় করে নারী দল। এরপর নারীরা বর্ধিত ম্যাচ ফির দাবি তোলেন।

তবে গত বছর নারী ফুটবলারদের দাবি খারিজ করে দেয় আদালত। বিচারক গ্যারি ক্লাউসনারের যুক্তি ছিল, নারীদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তারা খেলুক বা না খেলুক বেতন দেয়া হবে। অন্যদিকে, পুরুষদের যদি খেলার জন্য ক্যাম্পে ডাকা হয় এবং তারা ম্যাচে অংশ নেন, তাহলেই কেবল টাকা পান।

ক্লাউসনার বলেন, “বাদীদের বক্তব্য ‘একটি প্রকৃত বিরোধ প্রতিষ্ঠার জন্য অপর্যাপ্ত।”

যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দল এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে উচ্চ আদালতে।

এ বিভাগের আরো খবর