২০১৮ সালে দায়িত্ব নিয়ে গত দুই মৌসুমে তার অধীনে ঢাকা আবাহনীর অর্জন ছিল শূন্য। এএফসি কাপে ইন্টার জোনাল সেমিফাইনাল আর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ২০১৯ সালে রানার্স-আপ। এই ছিল সর্বোচ্চ অর্জন।
অবশেষে শিরোপা খরা কাটলো আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমসের। হেড কোচ হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপার দেখা পেলেন তিনি।
স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা জিতেছেন এ পর্তুগিজ কোচ।
তবে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না তার জন্য। আবাহনীর মতো দলের দায়িত্ব নিয়ে বরাবরই হতাশ ছিলেন লেমস।
দুই বছরে ঝুলিতে নেই কোনো অর্জন। দেশের সর্বোচ্চ শিরোপাধারীদের দায়িত্ব নেয়ার যে রিস্ক তিনি নিয়েছিলেন প্রথম দুই বছরে ট্রফিহীন তাকে সমালোচনার কাঠগড়ায় তুলেছে বহুবার।
এরপরেও আবাহনী আশ্বাস রেখেছে তার ওপর। এবার নতুন আঙ্গিকে দলকে সাজান। বিশ্বকাপার ড্যানিয়েল কলিনদ্রেস, চীনের শীর্ষ লিগে খেলা ব্রাজিলিয়ান ডরিয়েল্টন, ইরানি ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ এবার সুশান্ত ত্রিপুরা, রাকিব হোসেন, ইমন বাবুর মতো প্লেয়ারদের দলে ভিড়িয়ে দলকে কাগজে-কলমে ফেবারিট তকমা পেলেন।
তবে কাগজের হিসেবে মাঠেও প্রমাণ করার গুরু দায়িত্বটা ছিল লেমসের কাঁধে। টিম ম্যানেজমেন্টকে তারই ভরসা দিতে হবে সবুজ ঘাসে সাফল্য কুড়িয়ে।
মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট হিসেবে পেলেন স্বাধীনতা কাপ। কিন্তু প্রথমেই হোঁচট। টুর্নামেন্ট যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখনও দুই বিদেশি কলিনদ্রেস আর ডরিয়েল্টন নেই ক্যাম্পে। সঙ্গে সার্ভিসেস দলের জন্য স্কোয়াডের বাইরে ভরসার গোলকিপার সোহেল।
এমন অবস্থাতেও হাল ছাড়েননি। নেমে পড়েন বাকিদের নিয়েই। গ্রুপ পর্বে টেনেটুনে শীর্ষস্থানের স্বস্তি নিয়ে নকআউটে পা রাখে আবাহনী। স্বাধীনতা কেসির সঙ্গে ২-১ ব্যবধানের কষ্টের জয়ে শুরু করে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ৩-১ এর জয়। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেও খেলাতে আবাহনীর দাপটটা অনুপস্থিতই ছিল।
কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমবার মনে হলো আবাহনী দাপট নিয়ে খেলেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে লেমস প্রথমবার জানান দিলেন- আবাহনী এবার কঠিন পরীক্ষা নেবে সবার।
সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় এবারের মৌসুমের অন্যতম ভারসাম্য দল সাইফের। ডিয়েগো ক্রুসিয়ানির অধীনে এবার যেন অন্য এক সাইফ আবির্ভূত হয়েছে স্বাধীনতা কাপে। হাই প্রেসিং আর ভেঙেচুরে আক্রমণে যাওয়া সাইফ-পরীক্ষাতেও পাস করে গেলেন লেমস। ২-০ ব্যবধানে জয়টা মোটেও সহজ ছিল না।
তবে জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে আবাহনী আরেকবার শিরোপার দ্বারপ্রান্তে। ২০১৬ সালে এই আসরের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়েছিল আবাহনী।
এবারও কী তাই হবে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে?
সব প্রশ্নের জবাব লেমস দিলেন মাঠে। তপু, জোনাথন আর তারিক কাজীকে ছাড়া ছন্নছাড়া কিংসের ওপর আধিপত্য নিয়ে খেলল আবাহনী। পুরো ম্যাচে একবারও মনে হয়নি কিংস ম্যাচে ফিরতে পারে। টুর্নামেন্ট জুড়ে ভয়ংকর কিংসকে নিষ্ক্রিয় করে রাখে আবাহনী।
দাপট নিয়ে ৩-০ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লেমসের দল। মৌসুমের প্রথম শিরোপা ঘরে তোলে আবাহনী। প্রথমবার শিরোপা জিতে আবাহনীর টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসার প্রতিদান দেন লেমস।
এখানেই থেমে থাকার কোনো সুযোগ নেই লেমসের। শিরোপা জিতে সমর্থকদের প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। এবার এএফসি কাপ, লিগ ও ফেডারেশন কাপ অপেক্ষা করছে তার জন্য। এখানেও প্রমাণ করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার সময় আসছে।
কঠিন সময় মানেই সুযোগ। এ সুযোগগুলো কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন লেমস সেটা সময়ই বলে দেবে।