রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম আকাশি-নীল রঙে ছেয়ে গেছে। ৩০ বছর পর স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জেতার উল্লাসে যে মেতেছে ঢাকা আবাহনী। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে তিন গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ শিরোপা জিতে নিয়েছে ধানমণ্ডির জায়ান্টরা।
রাকিব হোসেনের গোলে লিডের পর ডরিয়েল্টনের জোড়া গোলের বদান্যতায় প্রথমবারের মতো শিরোপার স্বাদ পেলেন আবাহনীর কোচ মারিও লেমস।
টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলের মুখোমুখি মানেই টান টান উত্তেজনা হবে তা আগে থেকেই অনুমান করা গিয়েছিল। আবাহনী-কিংস ম্যাচে গ্যালারি ভরা দর্শকে অনন্য এক ম্যাচের স্বাদ পেল দেশের ফুটবল।
শুরু থেকে দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। চিৎকার-উল্লাসে মাঠের খেলাকে আরও তাতিয়ে দিচ্ছিলেন সমর্থকরা।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের লাগামটা নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় আবাহনী।
কিংসের রক্ষণে লাগাতার আক্রমণে একের পর এক সুযোগ তৈরি করেছে লেমস বাহিনী।
ম্যাচের ২৫ মিনিটে লিড নেয়ার দারুণ একটা সুযোগ হাতছাড়া করে আবাহনী। ডিফেন্স দেয়ালের ওপর দিয়ে মিলাদ শেখের বল একেবারে ফাঁকায় পেয়ে যান রাফায়েল আগুস্তো। সহজ সুযোগে দুর্বল শট নিয়ে সমর্থকদের হতাশ করেন আবাহনীর এ ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।
ঠিক ১২ মিনিট পর লিড নেয়ার আরেকটি ভালো সুযোগ তৈরি করে আবাহনী। বাম প্রান্ত থেকে রাফায়েলের ক্রসে আরেক ব্রাজিলিয়ান ডরিয়েল্টনের হেড প্রতিপক্ষের খুব একটা বিপদ ডাকতে পারেনি। সহজভাবে বলটি গ্লাভস করতে সমস্যায় পড়তে হয়নি কিংসের গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকোকে।
আবাহনীকে রুখে দিয়ে গোলশূন্য ব্যবধানের স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় কিংস। দ্বিতীয়ার্ধে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে ম্যাচের কাঙ্ক্ষিত লিড নিয়ে নেয় আবাহনী।
রাফায়েলের বাড়ানো পাস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে আকাশি-নীলদের এগিয়ে নেন আবাহনীর ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেন। টুর্নামেন্টে তার নিজের প্রথম গোলে উল্লাসে মাতে আবাহনী সমর্থকরা।
লিড নেয়ার পরও থেমে থাকেনি আবাহনীর দাপট। ম্যাচের ৬১ মিনিটে কিংস বাহিনীকে ভড়কে দিয়ে পেনাল্টি আদায় করে নেয় আবাহনী। ইমনের বাড়ানো চিপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন কলিনদ্রেস। তাকে কিংসের ডিফেন্ডার রিমন ফাউল করলে পেনাল্টি দিয়ে দেন রেফারি।
পেনাল্টি থেকে ব্যবধান বাড়াতে এতোটুকু ভুল করেননি ডরিয়েল্টন। টপ কর্নারে বল ঢুকিয়ে দলের দ্বিতীয় গোলে আবাহনীকে ম্যাচে বেশ এগিয়ে দেন এ ব্রাজিলিয়ান।
পিছিয়ে থাকা কিংস ম্যাচে ফেরার তেমন সুযোগই তৈরি করতে পারছিল না। কিংসকে আরেকবার ধাক্কা দিতে পারত আবাহনী। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেয়া ইমনের শট প্রাথমিকভাবে রুখে দেন জিকো। ফিরতি বলে হেড করেন রাকিব। তার হেডটাও দ্বিতীয়বারের মতো রুখে দিয়ে বিপদমুক্ত করেন জিকো।
ম্যাচের ৭১ মিনিটে কিংসের ফেরার সকল আশা যেন ফিকে করে দেয় আবাহনী। কর্নার কিক থেকে নেয়া রাফায়েলের ক্রস দারুণ হেডে সিক্স ইয়ার্ডের সামনে রাখেন আবাহনীর ডিফেন্ডার মিলাদ শেখ। বল পায়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জালে জড়াতে এতোটুকু ছাড় দেননি ডরিয়েল্টন।
দলের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় গোলে টুর্নামেন্টের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে চার গোল করেন এ ব্রাজিলিয়ান।
তিন গোলে পিছিয়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া কিংস ব্যবধান কমানোর দারুণ সুযোগ মিস করে বসে। ম্যাচের ৮২ মিনিটে আবাহনীর রক্ষণের ভুলে ডি-বক্সের ডান পাশে ফাঁকায় বল পেয়ে যান কিংসের স্ট্রাইকার স্টোয়ান ব্রানিয়েস। বসনিয়ান ফরোয়ার্ডের নেয়া বুলেট শট দারুণভাবে রুখে দেন আবাহনীর গোলকিপার প্রিতম।
এরপরে আর ফেরা সম্ভব হয়নি কিংসের। বড় জয়ে ১৯৯০ সালের পর প্রথমবার শিরোপা ঘরে তুলল আকাশি-নীল বাহিনী। আবাহনী সবশেষ স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে খেলেছিল ২০১৬ সালে।
সেবার চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হেরে রানার আপ হয়েছিল আবাহনী। এবার স্বাধীনতা কাপের শিরোপা দিয়ে মৌসুম শুরু করেছে মারিও লেমসের বাহিনী। আর শিরোপা খুইয়ে মৌসুম শুরু অস্কার ব্রুজনের কিংসের।