হারে শুরু, হারে শেষ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হারের ধারা অব্যাহত থাকল পাকিস্তান সিরিজে এসেও। টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর এবার বাংলাদেশকে ক্লিন সুইপ হতে হয়েছে টেস্ট সিরিজে।
সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ইনিংস ও ৮ রানে পরাজিত হয়েছে মুমিনুল বাহিনী। আর এর ফলে টানা ১০টি ম্যাচে জয়ের দেখা না পেয়েই মাঠ ছাড়তে হলো ডমিঙ্গো শিষ্যদের।
শেরেবাংলার উইকেটকে ধরা হয় স্পিনারদের স্বর্গভূমি। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এসে সব বাংলাদেশের বেলায় যেন বদলে গেল ভোজবাজির মতো।
যে উইকেটে টাইগার স্পিনারদের ধারহীন আক্রমণ ছিল, সে উইকেটেই পাকিস্তানের স্পিনারদের ভয়াল থাবা দেখলেন লিটন-মুশফিকরা।
এক সাজিদ খানেই ধসে পড়ল স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইনআপ। একাই ৮ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসে ফলোঅনে ফেলেন বাংলাদেশকে।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের করা ৩০০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ হারায় ৭ উইকেট।
পঞ্চম দিনের প্রথম আধা ঘণ্টার ভেতর পাকিস্তানি বোলারদের সামলাতে না পেরে ৮৭ রানে শেষ হয় স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস। বাকি লড়াই ছিল ইনিংস পরাজয় এড়ানোর ও ড্রয়ের।প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বনাশের শুরু হয় সাজিদ খানের হাত ধরে। আর সাকিবের উইকেট পতনের মধ্য দিয়ে সেই সাজিদ খানেই শেষ হয় সম্ভাবনা।
প্রথম ইনিংসে স্পিন বিষে নীল হয়ে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে নাজেহাল হয় পাকিস্তানের পেস তোপের সামনে। ২৫ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরে যান জয়, সাদমান, শান্ত ও মুমিনুল।
আর এর ফলে প্রথম সেশনে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।
একের পর এক উইকেট পতনে দিশা হারায় বাংলাদেশ। এমন সময় দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৭৩ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস ।
মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জুটি ভাঙে সাজিদের কল্যাণে। ৮১ বলে ৪৫ করা লিটনকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু দেন এ স্পিনার।
এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে রানের গতি বাড়িয়ে দেন সাকিব আল হাসান। মুশফিকের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানোর কাছাকাছি নিয়ে যান দলকে।
রানের গতি বাড়াতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন মুশফিকুর রহিম।
চা বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে রান আউটের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রানের ইনিংস। সাকিব-মুশির ৪৯ রানের জুটিতে ভর করে পাকিস্তানের চেয়ে ৬৬ রানে পিছিয়ে থেকে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
উইকেটের এক প্রান্ত আগলে ধরে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাকি সময়ে প্রায় একাই লড়েন সাকিব আল হাসান। দেখেশুনে খেলার পাশাপাশি এ অলরাউন্ডার পূর্ণ করেন তার ২৬তম টেস্ট ফিফটি।
ফিফটির সঙ্গে সাকিব পূর্ণ করেন টেস্ট ক্রিকেটে চার হাজার রান। একই সঙ্গে চার হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবল অর্জন করা ষষ্ঠ ক্রিকেটার বনে যান তিনি।
তবে এই অর্জনে তিনিই দ্রুততম। সাকিব এই ডাবল অর্জন করেন ৫৯ টেস্টে।
মিরাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে সাকিব দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ড্রয়ের দিকে। কিন্তু বেরসিকের মতো বাবর আজম বাধা দেন সেখানে। দুজনের গড়া ৫১ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজকে ফিরিয়ে।
পরের ওভারে সাজিদের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশের শেষ ভরসা সাকিবকে। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ৬৩ রান করা সাকিবকে ফিরিয়ে সাজিদ অনেকটা নিশ্চিত করেন স্বাগতিকদের পরাজয়।
এরপর আর প্রভাব রাখতে পারেননি জাতীয় দলের টেইল এন্ডাররা। কমিয়েছেন শুধু পরাজয়ের ব্যবধান।
শেষ পর্যন্ত ২০৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংসের চাকা। আর পাকিস্তান সেই সঙ্গে পেয়ে যায় ইনিংস ও ৮ রানের বড় জয়।
এর আগে ঢাকা টেস্টের শুরু দিন থেকেই শেরেবাংলায় ছিল বৃষ্টিবাধা। প্রথম দিন আলোক-স্বল্পতায় ৩৩ ওভার খেলা কম হলেও দ্বিতীয় দিন খেলা হয়েছিল মোটের ওপর সাড়ে ছয় ওভার।
আর তৃতীয় দিন পুরোটাই গিয়েছিল বৃষ্টির পেটে। চতুর্থ দিন দেড় ঘণ্টা দেরিতে খেলা শুরু হয়। শুরুতে দ্রুত ২ উইকেট তুলে নিলেও পাকিস্তানের রানের চাকার গতি কমাতে পারছিলেন না বাংলাদেশি বোলাররা।
আর দায়িত্বহীন বোলিংয়ের কারণে বাংলাদেশের সামনে ৩০০ রানের পুঁজি দাঁড় করায় পাকিস্তান।
দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন সাজিদ খান।