২০২১ সালের ‘দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার’ নির্বাচনে ১১ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। ১১ জনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি, পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো ও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার নেইমার জুনিয়র।
পাশাপাশি সম্ভাবনার দৌড়ে আছেন ইতালির জর্জিনিয়ো, যিনি কিনা চেলসির হয়ে ইউরো ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের অন্যতম নায়ক। আছেন গোলমেশিন রবার্তো লেভানদোভস্কি, ফ্রেঞ্চ তারকা কিলিয়ান এমবাপে ও করিম বেনজেমার মতো ফুটবলাররা।
সোমবার নিজেদের অফসিয়াল ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশ করে ফিফা।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের অগাস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের বিচারে ফিফার একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করেছে এই তালিকা।
ফিফার বর্ষসেরা হওয়ার তালিকায় সম্ভাবনার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি। বার্সেলোনায় নিজের শেষ মৌসুমটা খুব একটা রাঙাতে না পারলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল।
লা লিগার গত মৌসুমে ৩০ গোল করে অষ্টমবারের মতো পিচিচি ট্রফি নিজের করে নিয়েছিলেন এই জাদুকর। একই সঙ্গে আটবার এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে গড়েন রেকর্ড।
ক্লাবের হয়ে রাঙাতে না পারলেও জাতীয় দলে মেসি ছিলেন আপন আলোয় উদ্ভাসিত। চলতি বছরের জুলাইয়ে ব্রাজিলকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ে নেতৃত্ব দেন তিনি।
আর এর মধ্য দিয়ে ঘোচান আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের ২৮ বছরের শিরোপা খরা। টুর্নামেন্টে চার গোল করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি পাঁচটি গোলে ছিল তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা।
এর আগে রেকর্ড ছয়বার ফিফার এই বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন মেসি। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখানো এই মহাতারকার সেরা হওয়ার সংখ্যাটা এবার সাত হওয়ার জোর সম্ভাবনা দেখছেন অনেকেই।
এদিকে দলের সাথে থেকে বড় কোনো সাফল্য না পেলেও ব্যক্তিগত ঝুলিতে বেশ কিছু অর্জন পুরেছিলেন পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়নো রোনালডোর। ইউভেন্তাসের হয়ে ২০২০-২১ সিরিআয় সর্বোচ্চ ২৯ গোল করেন তিনি। গড়েন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা ও সিরিআয় আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড।
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে গিয়েও বেশ কিছু রেকর্ডের মালিক হন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার। পর্তুগাল শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিলেও তার আগেই আসরের সর্বোচ্চ পাঁচটি গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে আগের রেকর্ড গোলদাতা আলি দাইকে স্পর্শ করেন রোনালডো।
অন্যদিকে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) হয়ে গত মৌসুমটা পুরোপুরি হতাশার ছিল নেইমারের জন্য। তবে জাতীয় দলের হয়ে সময়টা বেশ কেটেছে তার। কোপা আমেরিকার ফাইনালে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ভাঙলেও আসর জুড়ে তার পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। মেসির সঙ্গে যৌথভাবে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
অনেকটা লাইমলাইটের বাইরে থেকেই আচমকা মাথাচাড়া দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জর্জিনিয়ো।
গত বছরের শেষভাগে ভুগতে থাকা চেলসির নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোয় তার ভূমিকা ছিল অনাবদ্য। সিটিকে হারিয়ে চেলসির ইউরোপ সেরার ট্রফি বাগিয়ে নেয়ায় অসামান্য ভূমিকা ছিল তার। এরপর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ইতালি, সেখানেও মাঝমাঠে তার নেতৃত্ব বেশ প্রশংসিত হয়।
২০২০-২১ মৌসুমের উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন জর্জিনিয়ো। ফুটবল বোদ্ধাদের মতে তার হাতে ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কারটি উঠলেও সেটি অবাক করার মতো কিছু হবে না।
পুরুষদের তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি নারীদেরও বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের লড়াইয়ে জায়গা পাওয়া ১৩ জনের নাম প্রকাশ করেছে ফিফা।
আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফিফার ওয়েবসাইটে বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচনের ভোট দিতে পারবেন ফুটবলপ্রেমীরা। জানুয়ারির প্রথম দিকে তিন জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর আগামী ১৭ জানুয়ারি ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।
১১ জনের তালিকা:
করিম বেনজেমা (ফ্রান্স/রিয়াল মাদ্রিদ)
কেভিন ডে ব্রুইনে (বেলজিয়াম/ম্যানচেস্টার সিটি)
ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো (পর্তুগাল/ইউভেন্তুস/ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
আর্লিং হলান্ড (নরওয়ে/বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
জর্জিনিয়ো (ইতালি/চেলসি)
এনগোলো কঁতে (ফ্রান্স/চেলসি)
রবের্ত লেভানদোভস্কি (পোল্যান্ড/বায়ার্ন মিউনিখ)
কিলিয়ান এমবাপে (ফ্রান্স/পিএসজি)
লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা/বার্সেলোনা/পিএসজি)
নেইমার (ব্রাজিল/পিএসজি)
মোহামেদ সালাহ (মিশর/লিভারপুল)