ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় ২৬ দশমিক ২ মাইল পথ পাড়ি দিতে হয় প্রতিযোগিদের। গত রোববার নিউ ইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত ম্যারাথনও এর ব্যতিক্রম ছিল না।
এবার নিউ ইয়র্ক ম্যারাথনে প্রায় ২৫ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেন। এর মধ্যে ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট ২২ সেকেন্ডে সবার আগে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে ১ লাখ ডলার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন কেনিয়ার নাগরিক অ্যালবার্ট কোরির।
এই দৌড়ে সবার শেষে যিনি চূড়ান্ত গন্তব্যে পা রাখেন তিনি হলেন ফ্রেডেলিন বাঙ্গোয়া বা ফ্রেডি। ৪২ বছর বয়সী এই নারী পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
নিউ ইয়র্ক ম্যারাথনে ফ্রেডি যখন নির্ধারিত গন্তব্যে গিয়ে হাজির হন, ততক্ষণে অন্য প্রতিযোগিরা নিঃসন্দেহে দৌড় শেষ করে বাসায় ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কারণ দৌড় শেষ করতে ফ্রেডির সময় লেগেছিল ১০ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড।
বলা বাহুল্য, সবার ‘লাস্ট’ হয়ে ফ্রেডি এবার- না জিতেছেন কোনো পুরস্কার, না গড়েছেন কোনো রেকর্ড। তবু কঠিন সংকল্প নিয়েই তিনি পুরো পথটুকু পাড়ি দিয়েছেন। দৌড়ের ক্ষেত্রে তার দর্শনটি হলো- ‘যদি তুমি প্রথম না হতে পারো, তবে সবার শেষ হওয়াই ভালো।’
এবারের আগে আরও চারটি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন ফ্রেডি। প্রতিবারই প্রতিযোগিতা শেষ করতে তার সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লেগেছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ম্যারাথনে তিনি মাঝপথেই থেমে গিয়েছিলেন। তাই এবার দৌড় শেষ করতে পারাই ছিল তার কাছে অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার বিষয়ে ফ্রেডি বলেন, ‘আমি সবসময়ই একজন মন্থর গতির দৌড়বিদ। তবে, এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
আরেকটি ব্যাপার হলো- গত বছরই রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসিস ধরা পড়েছে ফ্রেডির। ফলে ভয়ানক বাতের ব্যাথাও এখন তাকে নিয়মিত সহ্য করতে হয়। এ অবস্থায়ই এবার ম্যারাথন শেষ করার সংকল্প ছিল তার।
ফ্রেডি দৌড় শেষ করার এমন সংকল্পের অনুপ্রেরণা পান তার পরিবার আর বন্ধুদের কাছ থেকে। প্রতিবারই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার আগে দৌড় শেষ করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে খুব সন্দিহান থাকেন তিনি। তবে, বন্ধু আর পরিবারের লোকেরাই তাকে উৎসাহ দেন। তাই দৌড়ে কোনো পুরস্কার জেতার চেয়ে ট্রেক শেষ করাই তার লক্ষ্য।
এবার দৌড় শেষ করার পর ফ্রেডি বলেন, ‘ট্রেক শেষ করাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালের ম্যারাথনে মাঝপথেই থেমে গিয়ে আমি খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তাই এবার নতুন করে জ্বলে উঠতে চেয়েছি।’
মজার ব্যাপার হলো- ২০১৯ সালের ম্যারাথনে ফ্রেডি যেখানে থেমে গিয়েছিলেন, কয়েক সপ্তাহ পর সেখান থেকেই শেষ আট মাইল পথ তিনি দৌড়ে পাড়ি দেন।
গত রোববারের ম্যারাথনেও মাঝপথে ফ্রেডির গোড়ালিতে প্রচণ্ড ব্যাথা শুরু হয়। এ সময় তিনি বেশ কয়েকবারই প্রতিযোগিতা থেকে সরে যাওয়ার চিন্তা করেন। ১৬ মাইল পথ পাড়ি দেয়ার পর দৌড়ের মাঝখানেই তার বড় দুই বোন তার সঙ্গে দেখা করে একটি ওয়াকার ছুঁড়ে দেন। বাকি ১০ মাইল পথ এই ওয়াকারের সাহায্যেই পাড়ি দিয়েছেন ফ্রেডি।
এবার সবার শেষে ম্যারাথন শেষ করলেও ফ্রেডিকে সবচেয়ে মন্থর দৌড়বিদ বলা যাবে না। এই রেকর্ডটি যার দখলে তিনি হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহোতে বাস করা নারী রোজান্না র্যাডাকোভিচ। ২০১৫ সালে ৩৫তম নিউ ইয়র্ক ম্যারাথনে তিনি ১২ ঘণ্টা ২১ মিনিট ৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছিলেন।
৭৪ বছর রোডাকোভিচ নিউ ইয়র্ক পোস্টকে বলেন, ‘কোনো পুরস্কার না জেতায় আমার কিছু যায় আসে না। কারণ এটা আমি করি শুধু নিজের জন্য।’