আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সঙ্গেই একসময় নাম উচ্চারিত হতো কেনিয়ার। আফ্রিকার দেশটি মরিস ওডুম্বে, স্টিভ টিকোলোর মতো তারকা ক্রিকেটার উপহার দেয়ার পাশাপাশি আয়োজন করে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির।
কেনিয়ার ক্রিকেটের সেরা মুহূর্ত আসে ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেবার একমাত্র নন-টেস্ট প্লেয়িং দেশ হিসেবে সেমিফাইনাল খেলে দেশটি। দুঃখজনকভাবে এর পর থেকে পতন শুরু হয় কেনিয়ার।
একসময়ের আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে নিয়মিত দেশটি এখন বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের তলানির দিকে। কেনিয়াকে ছাড়িয়ে ওপরে উঠে এসেছে নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, হল্যান্ড ও নেপালের মতো দল। একসময় কেনিয়ার চেয়ে ক্রিকেটীয় সামর্থ্যে অনেক পিছিয়ে থাকা আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড এখন টেস্ট খেলুড়ে দেশ।
ক্রিকেট বোর্ডে দুর্নীতি ও অন্তর্কোন্দলের কারণে কেনিয়ার ক্রিকেট সাফল্য এখন ইতিহাসের অংশ, তবে আশার কথা, ধীরে ধীরে দেশটিতে ফিরছে ক্রিকেট সংস্কৃতি। হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে খেলাটি।
এর নেপথ্যে রয়েছেন কেনিয়া ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের অন্যতম কান্ডারি তিন ভাই। কেনেডি ওটিয়েনো ওবুইয়া, ডেভিড ওবুইয়া ও কলিনস ওবুইয়া মিলে শুরু করেছেন ওবুইয়া ক্রিকেট একাডেমি (ওসিএ), যা আবারও পথ দেখাচ্ছে নাইরোবির তরুণদের।
নিজের একাডেমিতে বোলিং অনুশীলন দেখছেন ডেভিড ওবুইয়া। ছবি: এএফপি
ওসিএতে অনুশীলন করতে আসা অধিকাংশ তরুণই এসেছে শহরের সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলো থেকে। এখান থেকেই পরবর্তী ওডুম্বে বা টিকোলোকে খুঁজে বের করার চেষ্টা একাডেমির।
ডেভিড ওবুইয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘তরুণদের উন্নয়ন ক্রিকেট উন্নয়নের মূল শর্ত। আমাদের লক্ষ্য ছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দেয়া ও তাদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা। আমাদের প্রচেষ্টায় অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি।’
২০০৬ সালে নাইরোবির অভিজাত এলাকা ল্যাভিংটনে শুরু হওয়া একাডেমিটির সদস্য সংখ্যা শতাধিক। তাদের অধিকাংশের বয়স পাঁচ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো নাইরোবির এনপিসিএ সুপার লিগে নিজস্ব দল খেলায় ওসিএ।
একাডেমির অন্যতম উদীয়মান তারকা ১৪ বছরের কেন মোয়াংগি। ছয় বছর বয়সে ওসিএতে যোগ দেন এ অলরাউন্ডার। আর এখন তাকে ধরা হচ্ছে কেনিয়া ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।
ওসিএকে তার উত্থানের কৃতিত্ব দিলেন কেন। তিনি বলেন, ‘যখন এখানে যোগ দিই তখন ভাবিনি যে এতদিন এখানে থাকব বা সুপার লিগে খেলব। এখন আমার স্বপ্ন কেনিয়া জাতীয় দলে খেলা।’
এখানের শিক্ষার্থীদের স্কুলের খরচও বহন করে একাডেমিটি। প্রতিদিন বিনা মূল্যে দেয়া হয় দুপুরের খাবার। এ কারণে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ক্রিকেট শেখাতে ওসিএতে পাঠাতে দ্বিধাবোধ করেন না।
ওবুইয়া বলেন, ‘পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেট খেলোয়াড়দের আমরা অনুপ্রাণিত করতে পারছি, এ বিষয়টা আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের।’
এখন তিন ভাইয়ের লক্ষ্য তাদের একাডেমির কার্যক্রম রাজধানী নাইরোবির বাইরে ছড়িয়ে দেয়া।
ওবুইয়া একাডেমিতে চলছে বোলিং অনুশীলন। ছবি: এএফপি
কেনেডি ওবুইয়া বলেন, ‘কেনিয়া ৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ। এর মধ্যে যদি মাত্র ৫ শতাংশ লোকও ক্রিকেট খেলেন, তাহলে ক্রিকেটকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্য সেটাতে আমরা সফল।
‘তবে সে জন্য আমাদের নাইরোবির বাইরে ক্রিকেটকে নিয়ে যেতে হবে। ওখানেই প্রতিভা লুকিয়ে আছে।’
কেনিয়ার ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের অন্যতম তারকা ছিলেন তিন ওবুইয়া। তাদের স্বপ্ন বিশ্ব ক্রিকেটে কেনিয়াকে তাদের হারানো জায়গা ফিরিয়ে দেয়া। তেমনটা সত্য হলে এটি শুধু দেশটির জন্যই নয়, ক্রিকেট বিশ্বের জন্যও হবে দারুণ স্বস্তির খবর।