নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে মারদাঙ্গা ব্যাট করে দলকে জয় এনে দেয়া আসিফ আলি এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারের নাম। দুই ম্যাচে ধুন্ধুমার ব্যাটিং দেখে ভক্তরা তার তুলনা দিচ্ছেন সাবেক পাকিস্তানি অলরাউন্ডার শাহিদ আফ্রিদির সঙ্গে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বল আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছেন সাত বল। আর এই ১৯ বল তাকে এনে দিয়েছে তারকাখ্যাতি। কারণ এতটুকু সময়ে আসিফ আলি হাঁকিয়েছেন সাতটি ছক্কা আর একটি চার। জিতিয়েছেন দুই ম্যাচ।
আসিফ আলির ক্যারিয়ারে এমন ঝলমলে সময় আগে কখনও আসেনি। এমনকি এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তান স্কোয়াডে তার থাকা নিয়ে কম সমালোচনা করেননি বিশ্লেষকরা। সবকিছুর জবাব ব্যাট হাতে দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী এ ব্যাটার।
ক্যারিয়ারে শুরু থেকে লড়াই করতে হয়েছে আসিফকে। লোহার কারখানায় কাজ করতেন পাঞ্জাবের ফয়সালাবাদে জন্ম নেয়া আসিফ আলি। ২০১০ সালে খেলা শুরু করেন ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট। ২০১১ সালে তাকে স্থানীয় ক্রিকেট থেকে খুঁজে বের করেন তখনকার জাতীয় দলের অধিনায়ক মিসবাহ উল হক।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল সুপার এইট টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ফয়সালাবাদের নেতৃত্বে ছিলেন মিসবাহ। সেখানে তিনি আসিফকে দেখে নিজের দলে নেন। পরে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে সাফল্য পান আসিফ।
আসিফের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার মেন্টর মিসবাহ। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘সে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে এবং তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে। এতে আমি আনন্দিত।’
২০১৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় আসিফের। শুরুর দিকে ধারাবাহিকতার অভাবে ভোগা এই ব্যাটার মন জয় করতে পারেননি নির্বাচকদের। দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে চলছিল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এর মাঝেই ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডির শিকার হয় তার পরিবার।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে ১৮ মাসের কন্যাসন্তান নুর ফাতেমাকে ক্যানসারের কাছে হারান আসিফ। বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকেও বাদ পড়েন।
সবকিছু ছাপিয়ে দুই বছরের মাথায় নিজের ক্যারিয়ারে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। চড়াই-উতরাই পার হয়ে পাকিস্তান ভক্তদের কাছে এখন সুপারস্টার এই হার্ড হিটার।
নিজের চলার পথকে ‘বেদনাদায়ক যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেন আসিফ। মিসবাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কঠিন একটি পথ পাড়ি দিয়েছি। মিসবাহকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমাকে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তার কাছে আমি চিরকালের জন্য কৃতজ্ঞ।’
টানা তিন ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের একবারে কাছে আসিফ ও পাকিস্তান। মঙ্গলবার নামিবিয়ার বিপক্ষে জিতলে গ্রুপ-টু থেকে সবার আগে শেষ চার নিশ্চিত করবে তার দল। আর আসিফ যেমন ফর্মে আছেন তার দলের বিপক্ষে বাজি ধরার লোক এখন হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না।