লাল-সবুজ জার্সিতে খেলার স্বপ্ন নিয়ে ইংল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে ছুঁটে এসেছেন প্রবাসী ফুটবলার ইউসুফ জুলকারনাইন হক। কোচ মারুফুল হকের অধীনে ট্রায়ালে আছেন এই স্ট্রাইকার।
দেশকে নিয়ে স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর ট্রায়াল অভিজ্ঞতার কথা ইউসুফ জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে। দেশের ফুটবলে নতুন সেনসেশন ইউসুফের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের চুম্বক তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
বাংলাদেশে এসে এবার অভিজ্ঞতা কেমন হচ্ছে?
১০ বছর পর দেশে এসেছি। ভালো লাগছে। আমি এই দেশকে ভালবাসি। দেশের জন্য খেলার সুযোগ পেয়ে এখন পর্যন্ত বেশ ভালই লাগছে।
যুব দলের জন্য যখন প্রথম যখন ডাক পান তখন কেমন অনুভূতি ছিল?
প্রথমেই আমার দাদার কথা মনে হয়েছে। উনাকে আমি গত বছর হারিয়েছি। উনি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। আমিও দেশের হয়ে খেলতে চাই।
দাদা মুক্তিযোদ্ধা, আপনি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে এসেছেন সবমিলে বিষয়টা আপনার পরিবারের জন্য কতখানি আবেগের?
আমি আব্বুর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, দাদু বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তিনি সবসময় দেশের মানুষদের কথা বলতেন। আমি শুনে সরাসরি বলেছি, দাদুর জন্য বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিয়ে খেলতে চাই।
আরও আগেই আসতে পারতেন। দেরি হওয়ার কারণ কী ছিল?
হ্যাঁ তা হয়তো পারতাম। তবে পাসপোর্ট ইস্যু ছিল। সবকিছু হাতে পেয়ে আসার ব্যাপার ছিল।
বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তরা স্ট্রাইকার হিসেবে আপনাকে জাতীয় দলে দেখতে চায়। তার প্রথম ধাপ হিসেবে আপনি অনূর্ধ্ব ২৩ দলে ডাক পেয়েছেন। কেমন লাগছে?
আমি খুশি। জাতীয় দল হোক অথবা বয়সভিত্তিক দল হোক, বাংলাদেশের হয়ে খেলাটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি খুশি বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। এই জার্সিটা পড়তে পারছি। হাসতে পারছি। আমি অনেক খুশি।
খেলার প্রসঙ্গে আসি। ট্রায়াল কেমন যাচ্ছে?
সামান্য চাপ কাজ করছে। তবে চাপ নিয়ে কাজ করতে আমি ভালোবাসি। কারণ এটা আপনাকে আরও পরিশ্রম করতে সাহায্য করবে। এই দেশের গরম, আবহাওয়া একটু ভিন্ন। তবে আমি কিছু মনে করছি না। আমি খেলতে ভালোবাসি।
বাংলাদেশে আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে?
এটা বলা আমার জন্য কিছুটা কঠিন, কেননা সবার খেলা এক ধরনের নয়। জামাল ভূঁইয়ার খেলা আমার খুব ভালো লাগে। তিনি দলকে যেভাবে লিড দেন ভালো লাগে। তিনি অনেক দক্ষ খেলোয়াড়। খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন ফুটবলার।
আপনি তো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অথবা লেফট উইঙ্গার পজিশনে খেলেন। ট্রায়ালে দেরি করে অংশ নেয়ার ফলে পজিশন, দল ও কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে পারাটা কেমন ছিল?
এটা কঠিন। পুরো দল বেশ কিছুদিন ধরেই অনুশীলন করছে এখানে। অবশ্যই আপনাকে এসে তাদের পর্যায়ে যেতে হবে। আশা করছি দ্রুত মানিয়ে নিব। পুরো দল আমাকে সাহায্য করছে। ক্যাম্পেও যেন আমি সহজ হতে পারি সে জন্য সবাই সাহায্য করেছেন।
আপনার রুমমেট কে?
জামিল।
আপনার কোচ মারুফুল হকের সাথে আপনার কথা হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে?
হ্যাঁ। দেশে আসার আগে থেকেই তার সঙ্গে আমার কথা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমরা একসাথে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। আমি কখন আসছি সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। এখন এসেছি। তিনি আমাকে দেশের হয়ে সেরাটা খেলাতে আমরা কাজ করছি।
আপনার কোচ আলাদা করে কোনো পরামর্শ দিয়েছে?
তিনি সবসময়ই আমাকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তার বলার পদ্ধতি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আমি যেখানে ভুল করছি সেখানে তিনি কথা শোনাচ্ছেন না। বলছেন, ‘আবার যাও। আমি চাই না তুমি বলো যে আমি তোমার আত্মবিশ্বাস শেষ করে দিয়েছি। আমি তাকে পছন্দ করেছি অনেক’।আপনার সবথেকে বড় শক্তি আপনার ড্রিবলিং ও ড্রিবলিং থেকে গোলে শট নেয়া। কিন্তু আমাদের দেশের ফুটবলাররা ফিজিক্যালি খেলতে পছন্দ করেন। এই ব্যাপারটি আপনি কিভাবে দেখছেন?
আমি যখন ফিজিক্যালি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব না তখন আমাকে স্মার্ট হতে হবে। যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে উপায় থাকবে। সুতরাং তারা ফিজিক্যাল খেললে আমি বুদ্ধি দিয়ে খেলব।
ফুটবলে এখন আপনার আইডল কে?
নেইমার। সে আমার স্বপ্নের ফুটবলার।
তাহলে আপনি নেইমার থেকে অনুপ্রাণিত?
তার খেলার কৌশলে আমি মুগ্ধ। তাছাড়া রোনালডোও আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। কারণ তার মানসিকতা ও তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন।আপনি তো ইংলিশ জায়ান্ট চেলসির ট্রায়ালে গিয়েছেন। কেমন ছিল সেই গল্পটা?
আমি চেলসিতে যাই ট্রায়াল দিতে। যখন আমি ছোট ছিলাম ইপসউইচ এফসি আমার সঙ্গে চুক্তি করতে চাওয়ার পর আমি তাদের সঙ্গে খেলতে রাজি হই।
নিজেকে আগামী ৫ বছর পর কোথায় দেখতে চান?
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলতে চাই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে চাই।
আপনি তো ইংল্যান্ডে খেলেছেন, ওই জায়গার ফুটবল থেকে এসে এখানে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন?
ভিন্ন দুইটা ধরন। বাংলাদেশে কাউন্টার অ্যাটাক ফুটবল খেলে। আমি এই ধরনের খেলা পছন্দ করি। ইংল্যান্ডে সব ধরনের খেলাই হয়। স্কিল, স্পিড, স্ট্যামিনা সব। বাংলাদেশে ফিজিক্যাল, স্পিড এসব। আমি এই স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি। যদি সুযোগ পাই তাহলে ভবিষ্যতে ট্রফি উপহার দিতে চাই।
বাংলাদেশের ফুটবলে মাঠে বল পেতে হলে অনেক জোরে ডাকতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুটা কমতি দেখছেন নিজের?
বল পেতে হলে আমাকেও ডাকতে হবে। চেষ্টা করছি এভাবে ডাকতে। ট্রেনিং শেষে এগুলো নিয়ে কাজ হয়। এটা নিয়ে প্রথম কাজ করছি।
চূড়ান্ত দলে সুযোগ পাওয়া ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
আমার সেরাটা দিতে চাই। বাকিটা আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিতে চাই। তিনি যদি চান আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলি আমি খেলব।