ইতালি ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালডো। তুরিনে যখন প্রথমবার পৌঁছান তখন তিনি রাজা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে রাজা প্রবেশ করলেন নতুন রাজ্যে। সেই রাজ্য তাকে বুকে টেনে নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সময়ের জল আছড়ে পড়ল দুঃখভরা আকাশে।
শেষে রাজা সম্রাজ্য ছাড়লেন অনেকটা ক্লান্ত-কষ্টে ভরা শরীর নিয়ে।
এই পর্তুগিজ সুপারস্টারকে নিয়ে ইউভেন্তাসের উচ্চ স্বপ্ন মিলিয়ে গেল অপরিপক্বতার জালে।
২০১৮ সালে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে রোনালডোকে দলে ভেড়ায় ওল্ড লেডিরা। ক্লাবের আশা, ১৯৯৬ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হবে রোনালডোকে দিয়ে। তাকে প্রতি মৌসুমে ৬৫ মিলিয়ন ইউরোর বেতন দিয়ে চলল দলটা।
খালি হাতে ফেরেনি ইউভেন্তাসও। হাত ভরে স্পন্সরদের টাকা মিলল আর লাখে লাখে ফলোয়ার জমালো ইতালির জায়ান্টরা। কিন্তু তাতে লাভ হলো কি? কাজের কাজটা ঠিকমতো করতে পারল কই। পুনরায় চ্যাম্পিয়নস লিগের জেতার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন রয়ে গেল।
৩৩ বছর বয়সী টগবগে রোনালডোর পুরো সামর্থকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ বলা যায় ইউভেন্তাসকে। ১৩৪ ম্যাচে রোনালডোর ১০১ টা গোল আর ক্লাব ইতিহাসের দ্রুততম শত গোলের রেকর্ড আর পরিসংখ্যান বলে পরিপক্কতার অভাব রয়েছে দলটির।
মাঝমাঠটা নড়বড়ে থেকেই গেল। প্রসিদ্ধ কোচ আলেগ্রিকে বিদায় করা হলো। নবাগত আন্দ্রেয়া পিরলোও তার স্বপ্নের কৌশল সাজানোর যে সময়টা দরকার তার আগেই বিদায় নিল। কাজের কাজ হলো না। টানা ৯ মৌসুমে লিগ জেতা দলটা লিগও হারাল। শেষ পর্যন্ত গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার যোগ্যতা হারাতে হারাতে টিকে গেল।
মাঝে এই তিন বছরে কাজের কাজ হলো অল্প। দল সাজানো হলো না। এদিকে করোনাভাইরাসের মহামারিতে ক্লাবও ক্ষতির মুখে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে হিমশিম খাওয়া দলটার জন্য তখন রোনালডোর এই বিশাল বেতন দেয়াও কষ্টসাধ্য।
শেষ পর্যন্ত রোনালডোকে বিদায় করে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে ক্লাবটি। এখন পুনরায় ভবিষ্যত সাজাতে হবে দলটাকে। ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে হবে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ মঞ্চের জন্য।
তবে মাঝের এই সময়টা ভেস্তে গেল। ‘রোনালডো প্রজেক্ট’ ধসে পড়ল মাটিতে। রোনালডোর ক্যারিয়ারে এটা প্রথমবার হলো। ইংল্যান্ড-স্পেন জয়ের পর ইতালি থেকে খালি হাতে ফিরেছে পাঁচ বারের ব্যলন ডর জয়ী এই পর্তুগিজ সুপারস্টার।
এখন ১৩ বছর পর ঘরেই ফিরেছে রোনালডো। যেখান থেকে তারকার খ্যাতি পেয়েছিলেন সেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরে গেছেন। ৩৬ বছর বয়সে তিনি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ইতালির মতো ইংল্যান্ডেও এক পরিণতি হবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
এই সময়টাতে ইউভেন্তাসেরও ঘুরে দাঁড়াবার লড়াই শুরু হবে। ইউরোপের শ্রেষ্ঠ মঞ্চে নিজেকে ফিরে পাবার লড়াই। আর কত সময় লাগবে সেটাও বলে দেয়া মুশকিল। তবে, পরিবর্তনটা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছিল।