আফগানিস্তানে যুদ্ধে রকেট চালিত গ্রেনেডের আঘাতে বাম হাত হারান। বাম পাশের ফুসফুস ধসে যায়। শরীরের ভেতরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, বাম পায়ের গোড়ালি ভেঙে যায়। এতো এতো আঘাত সামলাতে তাকে ১১ বার অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে!
এই অবস্থার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা যখন অসম্ভব ছিল সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে অসম্ভবটাই সম্ভব করেন। প্যারালিম্পিকে জিতে নেন স্বর্ণ।
বলা হচ্ছে ইংল্যান্ডের অ্যাথলিট জ্যাকো ভ্যান গাসের কথা। এবার টোকিও প্যারালিম্পিকসে ৩৩ হাজার মিটার সাইক্লিংয়ের ব্যক্তিগত ইভেন্টে চ্যাম্পিয়নের পদক গলায় ঝুলিয়েছেন এই সাইক্লিস্ট।
এই স্বর্ণ জেতার থেকেও বড় কঠিন ছিল তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার গল্পটা।
সালটা তখন ২০০৯। ইংল্যান্ডের সামরিক বাহিনীকে সৈন্য হিসেবে কাজ করছিলেন সাউথ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া ভ্যান গাস। দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করতে যান তিনি। সফর শেষে সেই বছরেই দেশে ফেরার কথা ছিল তার।
এভাবে ফিরতে হবে নিজেও হয়তো ভেবে দেখেননি। ওই বছরে আফগানিস্তানে তালেবানের রকেট চালিত গ্রেনেড হামলায় নিজের বাম হাত হারান। হারান সামরিক চাকরিও। সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ায় ভেবেছেন মৃত্যুর কথা।
ভ্যান গাস সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর অনেক সময় লেগেছে নিজেকে বোঝাতে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু সময় এমন ছিল যে ভাবতাম আমি বেঁচে আছি কেনো? মরে গেলেইতো হতো।’
তার মনোবল একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়নি। মনটাকে শক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। জীবনের ফুল ফোটান ট্র্যাকে। ভাঙা হাত নিয়ে ১১ টি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুন করে চিনতে শেখেন গাস।
এবারের টোকিও প্যারালিম্পিকসে আসে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। গাসের ভাষায়, ‘আমি দারুণ কিছু জিনিসি করেছি। সবারই নিজস্ব সমস্যা থাকে। আজও ছিল। এই অর্জন নিশ্চয়ই সকল কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।’
ভ্যান গাসের গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে যেন জীবনের মর্ম। যত খারাপ কিছুই ঘটুক না কেন, হার মানা যাবে না। তাহলে বেজে উঠবে জয়গান।