অবশেষে শুরু হলো বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় এ আসর। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই আয়োজনের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের আগামী অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
খেলোয়াড়দের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করবেন। আগামীতে যেখানেই অলিম্পিক হবে, সেখানে যেন অংশ আমরা অংশ নিতে পারি, এজন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
‘পরে এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দেশের উন্নতি হতে হলে আসলে সব দিক দিয়েই উন্নতি হওয়া দরকার। আর খেলাধুলা সবার জন্যই অপরিহার্য। শিশু থেকে যুবক-তরুণ সবারই উন্নতি দরকার।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজেও খেলতেন, তার বাবাও খেলতেন। আমার ভাইয়েরাও খেলত। এমনকি ভ্রাতৃবধূরাও খেলতেন। আমরা ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে চেষ্টা করেছি কীভাবে খেলাধুলার উন্নয়ন করা যায়।’
গত বছর বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস আয়োজন না হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘করোনার কারণে আয়োজন পিছিয়ে যায়। এখন আবার নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু আমি চাইব, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নজরে রেখেই খেলা অনুষ্ঠিত হবে।’
এ সময় গেমসের মশাল টুঙ্গিপাড়া থেকে জ্বালানোয় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়া থেকে মশাল প্রজ্বালন করা হয়েছে, যেখানে জাতির পিতা জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং যেখানে তিনি ঘুমিয়ে আছেন। সেখানে থেকে মশালটি ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এ জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘খেলাধুলা বিকাশে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করছে সরকার। এ ছাড়া সব ধরনের আন্তর্জাতিক খেলা যেন হতে পারে এ ব্যবস্থাও আমরা করছি।
‘করোনার কারণে ২০২০ সালে অনেক সমস্যা হয়েছে, আমি জানি। এখনও হচ্ছে। তবে আমরা তা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
সশরীরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় দুঃখও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি নিজেও খেলাধুলা পছন্দ করি এবং এ ধরনের আয়োজনে নিজে উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করি। এবার পারলাম না। সকলের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আসিনি।
‘আপনারা সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন। আমি চাই না এখানে কেউ করোনায় আক্রান্ত হোক। আয়োজকদের বলব স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন।’
বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমস আয়োজন করছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। দেশের খেলাধুলার সবচেয়ে বড় এ আসর গত বছর অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও করোনার কারণে হয়নি। আসরটি গত বছরের এপ্রিলের পরিবর্তে এ বছর এপ্রিলে নেয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় নবম বাংলাদেশ গেমসের আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতেই ৩১টি ডিসিপ্লিনের খোলায়াড়দের অংশগ্রহণে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ গানের সুরে অনুষ্ঠিত হয় কুচকাওয়াজ।
সব প্রতিযোগীর পক্ষে শপথ গ্রহণ করেন আর্চার রোমান সানা। বিচারকদের পক্ষে কামরুন নাহার হিরু।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গেমসটির আসর চলবে ১ থেকে ১০ এপ্রিল। প্রায় ছয় হাজার অ্যাথলেটের অংশগ্রহণে টোকিও অলিম্পিকের আদলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুজিববর্ষের বিশেষ এই গেমস।
সবশেষ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসের অষ্টম আসর বসেছিল। চার বছর পরপর আয়োজনের কথা থাকলেও, সাত বছর পর বসচে এ আসর।