বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বন্ধ ক্যাম্পাসে ফুলের রাজত্ব

  •    
  • ২২ মার্চ, ২০২১ ১০:৫৯

ক্যাম্পাসের ভেতরে ৬০ থেকে ৭০ ধরনের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। এ গাছগুলোর পরিচর্যা জন্য রয়েছেন প্রায় ৮০ মালি। তিন বছর ধরে মালিদের উৎসাহিত করতে দেয়া হচ্ছে পুরস্কার।

ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, বহে কিবা মৃদু বায়…

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে চারদিকে ফুটে থাকা হরেক রঙের ফুল দেখে এই গানের লাইনগুলো মাথায় এমনিতেই চলে আসবে। মনে হতে পারে এ যেন বিশাল এক ফুলের বাগান।

করোনা মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ব্যতিক্রম নয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন নীরব আবহ।

কোলাহলমুক্ত এই ক্যাম্পাসে এখন ঘুরতে আসেন অনেকে। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে যারাই আসছেন, তারা মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতি দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বর, হল, অ্যাকাডেমিক ভবন ও প্রশাসন ভবনের আঙিনায় ফুলের বাহার। সেদিক দিয়ে হাঁটলে যেমন চোখ জুড়ায়, তেমন প্রাণ জুড়ায় সুবাসে

যেদিকে চোখ যায়, মনে হয় প্রকৃতির ফুল-পাতা দিয়ে গড়া স্বর্গরাজ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে নানা রকম ফুলের বাগান। শহীদ মিনার চত্বরের ভেতরে, সিনেট ভবনের পাশে, জোহা চত্বরে চারপাশে, প্যারিস রোডের ধারে, উপাচার্য বাসভবন, বেগম রোকেয়া হল, মন্নুজান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল, হবিবুর রহমান হল, মতিহার হলসহ ক্যাম্পাসের প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে এসব বাগান।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের দুইপাশের পথে ও মাঝ বরাবর ফটক থেকে জোহা চত্বর পর্যন্ত লাগানো হয়েছে বটল পাম গাছ। আর জোহা চত্বরের চারপাশ ভরে গেছে গাঁদা ফুলে। ফুটেছে গোলাপ, রঙ্গন, সিলভিয়াও।

ফটক পেরিয়ে একটু সামনে যেতেই সুবর্ণজয়ন্তী টাওয়ার ঘিরে রয়েছে নানান ফুল। গাছ থেকে ঝড়ে পড়া ফুলে যেন রাস্তায় তৈরি হয় নানা রঙের গালিচা।

ফুল দেখার পাশাপাশি একটু খেয়াল করলেই দেখা মিলবে গাছের ডালে পাতার ফাঁকে লুকানো বুলবুলি, কাঠশালিক আর হলদে পাখি। কান পাতলে শোনা যাবে তাদের গুনগুনও।

মেয়েকে নিয়ে রাজশাহী বেড়াতে এসেছেন ঢাকার শামিমা আক্তার। সুযোগ পেয়ে ঘুরতে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বললেন, রাবি ক্যাম্পাস এমনিতেই সুন্দর। এই সময়টায় সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। দেখতে ভালো লাগছে। কিন্তু এত বড় ক্যাম্পাস নীরব হয়ে আছে এটা ভালো লাগছে না। ছাত্রছাত্রী থাকলে আরও সুন্দর লাগত।

ক্লাস না থাকলেও ক্যাম্পানে ঘুরতে আসেন গণিত বিভাগের সুমাইয়া রহমান। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে এলেই মন ভালো হয়ে যায়। আর সময়টাতে (বসন্তকালে) ক্যাম্পাস যেন অন্য রকম একটা রূপ নেয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন হারুনুর রশিদ। তিনি বললেন, ‘রাজশাহী শহরে কাজে এসেছিলাম। বাচ্চারা কোথাও ঘুরতে যেতে চাইল তাই ক্যাম্পাসে নিয়ে আসলাম। অনেক দিন পর এখানে আসলাম, অনেকটা অচেনা পরিবেশ। তবে খুব সুন্দর লাগছে ফুলবাগানগুলো দেখে।’

ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ধরনের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে বলে জানান শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফুলবাগানের দায়িত্বরত মালি মনছুর হাফেজ ও নাইমুল হক।

মালি মনছুর হাফেজ বলেন, দেশি ও বিদেশি জাত মিলিয়ে প্রায় ৭০ ধরনের ফুলগাছ আছে ক্যাম্পাসে। ডালিয়া, সাইলসিয়া, সালভিয়া, চায়না গাঁদা, স্টার, পিটনি, ক্যালেনডুলা, পলাশ, রঙ্গন, কামিনী, জবা, ডায়মন, ইন্টারাম, ড্রানথাস, কসমচ, গাজেনিয়া, ভারবেনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, সুনোবল, টাইগার ডালিয়া ফুলগাছ রয়েছে।

এ ছাড়াও আরও আছে অ্যালামন্ডা, মাসুন্ডা, করবি, কাঠবেলি, রজনীগন্ধা, বকুল, হাসনাহেনা, নয়নতারা, দুপাটি, ডেজি, জিনিয়া, শেরি, প্লক্স, টগর, কুপিয়া, ঘাসফুল, মাধবিলতা, স্থলপদ্ম, শিউলি, বকফুল, গন্ধরাজ ফুলগাছ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাগানের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মালি মোহম্মদ মুনসাদ বলেন, এই বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ইনকাগাঁদা, বিশ্বসুন্দরী, ক্ষয়রি, তাজমহল, বেগনীসহ নানা প্রজাতির ফুলগাছ।

তিনি আরও বলেন, ‘এ বাগানের বয়স প্রায় ১১ মাস হয়েছে। এগুলোতে জানুয়ারির শুরুতে ফুল আসা শুরু করে এবং মার্চ পর্যন্ত থেকে ঝরে যায়।

‘যখন ফুলগাছে কলি আসে তখন ডিএপি সার, পটাসিয়াম সার, ফসফেট সার, হাড়ের গুঁড়া, সরিষার খৈল ইত্যাদি দুই সপ্তাহ পচিয়ে গাছের গোড়ায় দেয়া হয়। এতে করে ফুলগুলো আকারে বড় হয়। পোকামাকড় থেকে সুরক্ষিত থাকে।’

ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন উপউপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের ফুলগাছের বাগান করা হয়েছে। এতে করে পুরো ক্যাম্পাস ফুলের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বাগান উপাচার্য, উপ-উপাচার্য বাসভবন, হলসহ ক্যাম্পাসে ৮০ জন মালি কাজ করে। মালিদের কাজের প্রতি আগ্রহী করতে তিন বছর ধরে তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তাদের পুরস্কারও দেয়া হচ্ছে।

প্রথম বছর আর্থিক পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। গত বছর শাড়ি, লুঙ্গি দেয়া হয়েছে। এ বছরও ২৫ জনকে পুরস্কার দেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর