রাজশাহী শহরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নভোথিয়েটার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার।’
আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজশাহীর গণপূর্ত অধিদপ্তর চলতি বছরের জুলাইয়ে নভোথিয়েটারটির পুরো কাজ শেষ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল অনুযায়ী যেকোনো সময় নভোথিয়েটারটির উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৮ সালে রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সামনের অংশে শুরু হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’-এর নির্মাণকাজ।
করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় চলতি বছরের জুলাইয়ে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা দেশের সর্ববৃহৎ পরিধির এ প্রকল্পের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে প্ল্যানেটেরিয়ামসহ ফাইভজি হল ও আধুনিক অবজারভেটেড টেলিস্কোপ, যা দেশে প্রথম। এটি দিয়ে গবেষকরা নভোমণ্ডলের গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে পারবেন।
এ নভোথিয়েটারে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে তিন তলায় যেতে ভেতরে দুটি বড় সিঁড়ি ছাড়াও রয়েছে লিফট ও এস্কেলেটর। তৃতীয় তলায় পূর্ব-উত্তর কোনায় বসানো হয়েছে ডোম বা গম্বুজ। সফটওয়্যার চালুর সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলেই গম্বুজের চারপাশ থেকে হালকা আলোয় আলোকিত হতে শুরু করবে মাথার ওপরের সাদা পর্দা।
চার পাশের মোট পাঁচটি প্রজেক্টর একসঙ্গে চালু হয়ে শুরু হবে পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য দ্য বিগ ব্যাং শো। কক্ষটিতে প্রবেশ করতে হচ্ছে জুতা খুলে। কারণ ভেতরে খুবই স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।
নভোথিয়েটারটি প্রতিটি ফ্লোরে লাইটিং, ভবনের সামনে সুদৃশ্য পানির ফোয়ারাসহ করা হয়েছে আধুনিক ডেকোরেশন। পুরো ভবনে সেন্ট্রাল এসি স্থাপন, টিকেটিং সিস্টেম পুরোপুরি অটোমেটেড ও ডিজিটাল। এ ছাড়া মেঝেতে বিছানো হয়েছে মূল্যবান মাদুর।
বসার জন্যে সারি সারি লাল রঙের আরামদায়ক চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
পুরো নভোথিয়েটারে আধুনিক ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশন ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লাগানো হয়েছে ১৪০টির বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে অন্তত ১০০টি কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
সম্প্রতি পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে দেখা যায়, নভোথিয়েটারে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি, সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র সবই এক পর্দায় ভেসে উঠছে নিমেষেই। নিখুঁত সাউন্ডের জন্য পুরো হলে লাগানো হয়েছে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, যা দর্শকদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিয়ে যাবে সরাসরি মহাশূন্যে গ্রহ-নক্ষত্রের খুব কাছে।
একসঙ্গে ১৫০ জন আসনগুলোতে বসে অসীম মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে ও দেখতে পারবেন। এখানে দিনে অন্তত ছয় থেকে সাতটি শো চালানো সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিজ্ঞান গবেষণা ও মহাকাশ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ভবন হতে যাচ্ছে জানিয়ে রাজশাহী গণপূর্ত-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন, প্রকল্পে শুধু ভবন তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় হয় নভোথিয়েটারের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য খাতে। শুধু প্ল্যানেটেরিয়াম ছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল জায়গা। যেকোনো বিজ্ঞান প্রদর্শনী ছাড়াও চাইলে শিক্ষাবিষয়ক নানা অনুষ্ঠান এখানে করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান রাজশাহী এসে নভোথিয়েটার পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিস্তারিত অবহিত করে উদ্বোধনের জন্য শিডিউল নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল পেলে চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই নভোথিয়েটারটির উদ্বোধন হবে।’
স্থপতি ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজশাহী শিক্ষানগরী হওয়ায় স্থানীয় ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে নভোথিয়েটারটি।’
ঢাকার পরে দ্বিতীয় বিভাগীয় শহরে নভোথিয়েটার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষানগরী ও প্রকৃষ্ট জায়গা বলেই ঢাকার বাইরে রাজশাহীকে নভোথিয়েটার নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে নভোথিয়েটার অত্যন্ত প্রয়োজন। এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল।’