কর্মশালার বিষয়ের বাইরে গিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের ওপর চটেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
সচিবালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বুধবার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের করণীয়বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটে।
ওই কর্মশালার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ২৮ মিনিট কথা বলেন ইয়াফেস ওসমান। এরপর অনুমতি নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে চাইলে ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘বলো ভাই, তোমাদের তো আবার সময়ের দাম আছে। তো এতগুলো কথা বললাম, এগুলো কি একটাও কাজের কথা হয় নাই? আচ্ছা বলো।’
এরপর ওই সাংবাদিক বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল সরবরাহে কত দেরি হতে পারে?’
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই ব্যাপারে এখন কিছু বলব না। এত কথার মধ্যে তোমরা চলে গেলে রূপপুরে।’
ওই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, ‘আজকের ওয়ার্কশপের সঙ্গে এই প্রশ্ন সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’
পরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুঝি না, তোমরা প্রফেশনাল না? আর ইউ প্রফেশনাল? লেট মি দিস অ্যান্সার? ইউ আর প্রফেশনাল, লাইক মি আর্কিটেকচার। তোমরা তো প্রফেশনাল। তোমাদের রেগুলার প্রফেশনাল স্টাডির কোনো ব্যবস্থা আছে? নাই।’
ওই সময় কয়েকজন সাংবাদিক মন্ত্রীকে জানান, সাংবাদিকদের জন্যও সেই ব্যবস্থা রয়েছে।
তখন মন্ত্রী বলেন, ‘ঘোড়ার ডিম আছে তোমাদের। আমাদের একটা ইনস্টিটিউট আছে। ওখান থেকে যদি সার্টিফিকেট না পাও, ইউ ক্যান নট প্রাকটিস। কারণ হলো, ওটার (ইনস্টিটিউট) শুরুটা হয় আমার হাত দিয়ে। ওইগুলো করো আগে। বিকজ বাংলাদেশকে আমরা ওই জায়গায় নিতে চাই।’
এরপর একজন সাংবাদিক বলেন, ‘সনদ ছাড়া সাংবাদিকতা করা যাবে না সেই বাধ্যবাধকতা নেই।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, ‘ওইটাই তো প্রবেলম। তোমার যদি একটা ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে, কালকে বলে দিলা তুমি সাংবাদিক। তুমি তো প্রফেশনালিজমের কিছু বোঝোই না। একটা প্রফেশন মাস্ট নো দ্যাট সাবজেক্ট। তার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। একটা কথা বলে দিলা যেকোনো জায়গা থেকে চলে আসলে। তার মানে তোমাদের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নাই।
‘তোমার প্রফেশনালি যদি জ্ঞান-গরিমা থাকে, নেচারালি তখন তুমি একভাবে বলবা, আর যদি না থাকে আরেকভাবে বলবা। তারপরও তুমি বলছো আমরা আসতে পারি যেকোনো জায়গা থেকে? এনিওয়ে ভাই, আমি তোমার এই কথায় যেতে চাই না। একদিন আইসো, তোমাদের বসদের সাথে কথা হয় তো, ওদের সাথেই কথা বলব। তোমাদের সাথে বলে আর লাভ নাই।’
সাংবাদিকরাও এসব বিষয়ে কথা বলতে শুরু করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা এই সাবজেক্ট বাদ দিয়ে দাও। আমি ওই জন্য বলছি তোমরা এই সাবজেক্টের ওপর ধরো না কেন? এটা বাদ দিয়ে তুমি চলে গেলে অন্য জায়গায়। এটা নিয়ে আর কোনো কথাই হবে না।
‘তুমি এখানে আসছো কী জন্য? তুমি রূপপুরের ব্যাপারে কথা বলতে আসছো? এখান থেকে তোমার প্রশ্ন বের করতে হবে, উত্তর নিতে হবে। সেটা হলে তুমি প্রোপার জিনিসটা করলা।’
ওই সময় একজন সাংবাদিক মন্ত্রীকে বলেন, ‘আমরা যারা সাংবাদিকতা করি তাদের সাবজেক্টের বাইরেও প্রশ্ন করতে হয়। আপনাকে আমরা পাই না, গত ৮-৯ মাসে আপনার প্রোগ্রামে আসিনি, এই প্রথম আসলাম। তাও আবার জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলেছেন। ১১টার প্রোগ্রাম, ১১টা ১০ মিনিটে আমাদেরকে জানিয়েছেন। আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে চলে এসেছি।
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে জনগণের জানার আগ্রহ আছে। জনসাধারণের ভিউ থেকে আমাদেরও অনেক কিছু জানতে হয়।’
তখন মন্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে ধমকের সুরে বলেন, ‘আমি একটা কথা পরিষ্কার বলে যাই। ইউ লিসেন টু মি। আপনারা যদি না আসতে চান, চলে যান। গেট গোয়িং।’
এরপর সেখানে উপস্থিত থাকা সাংবাদিকরাও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ছাড়তে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ইউ শুড গো। আমি বললাম প্রশ্নটা ওটার ওপর না করে এটার ওপরে করেন। এটা বলতে পারব না আমি?’