বিষণ্নতা ভুলতে ফেসবুকের নিউজ ফিডে ক্রমাগত স্ক্রল করার দিকে ঝুঁকলে অথবা রকমারি সব স্ট্যাটাস দিতে থাকলে আপনি ভুল করছেন। গবেষণা বলছে, বিষণ্ন মানুষের ফেসবুক আসক্তি মনকে আরও বিবর্ণ করে তোলে।
গবেষণাটি সম্প্রতি কম্পিউটার্স ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার সাময়িকীতে প্রকাশ হয়েছে। এতে তুলে ধরা হয়েছে মানসিক সুস্থতার ওপর ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব।
গবেষকেরা বলছেন, যারা যত বেশি সময় ফেসবুক ব্যবহার করেন তত বেশি হতাশায় আক্রান্ত হন। আত্মমর্যাদার ঘাটতিতে ভুগতে থাকে মানুষ। বিষয়টিকে ‘ফেসবুক ডিপ্রেশন’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন গবেষকেরা।
অবশ্য ফেসবুকের পেছনে ব্যয় করা সময়ের চেয়ে এই মাধ্যমের প্রতি আসক্তিকে বেশি বিপজ্জনক হিসেবে পাওয়া গেছে গবেষণায়। দেখা গেছে, ফেসবুকে অতিরিক্ত আসক্তি মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা।
গবেষণাটির মূল লেখক মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সুন লি লি বলেন, ‘প্রযুক্তির ওপর আমাদের নির্ভরতা বাড়ছে। এই নির্ভরতা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা জানা প্রয়োজন।’
মালয়েশিয়ায় আড়াই শ ফেসবুক ব্যবহারকারীর ওপর চালানো হয়েছে গবেষণাটি, যাদের প্রত্যেকেই বিষণ্নতায় ভুগছেন। অংশগ্রহণকারীরা দুটি অনলাইন জরিপে অংশ নেন। প্রথম জরিপটি করা হয় গবেষণার শুরুতে। এর ছয় মাস পর চালানো হয় দ্বিতীয় জরিপ। অংশগ্রহণকারীদের ফেসবুকনির্ভরতা ও নিজের প্রতি হতাশার প্রবণতা পর্যালোচনা করেন গবেষকেরা।
গবেষক সুনের মতে, যারা অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার করেন তারা অন্যদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে চান। এ জন্য তারা নিয়মিত তাদের পরিচিতদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপডেট জানান। এটি করার মাধ্যমে হয় তাদের ফেসবুকনির্ভরতা আরও বাড়ে, নয়তো নিজের দুর্বলতা নিয়ে হতাশাবোধ বাড়ে। এতে মানুষের আত্মমর্যাদার ঘাটতি তৈরি হওয়ার পাশাপাশি বিষণ্নতার মাত্রা বাড়তে থাকে।
গবেষণার সামগ্রিক ফল বলছে, ফেসবুকের অতি ব্যবহার হতাশাগ্রস্ত মানুষের জন্য আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আরও দুর্বিষহ করে তোলে। এমনকি ফেসবুকের অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসাকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সুন লি লির মতে, বিষণ্নতায় আক্রান্তদের ফেসবুক ব্যবহার নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যারা তীব্র হতাশায় ভুগছেন তাদের জন্য আমাদের গবেষণাটি সহায়ক হবে। কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির অতি ব্যবহার বিষণ্নতার তীব্রতাকে বাড়িয়ে তোলে।’