শহুরে জীবনে আজকাল অনেকেই শখের বশে বিভিন্ন প্রাণী পুষছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘরে পোষা প্রাণী রাখায় শুধু শখ পূরণ নয়, মালিকের স্বাস্থ্যগত উন্নতিও ঘটছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর মালিকের স্মৃতিশক্তি ক্ষয়ের মাত্রা অন্যদের তুলনায় বেশ কম। সেই সঙ্গে বেশি বয়সে তাদের মস্তিষ্কের জ্ঞানমূলক অংশের সক্রিয়তা সহজে নষ্ট হয় না। এ ছাড়া পোষা প্রাণীর মালিকদের হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকটা কম।
ঘরে পোষা প্রাণী রাখার নানান স্বাস্থ্যগত উপকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন আমেরিকান একাডেমি অফ নিউরোলজির গবেষকরা। আর এ জন্য তারা বিশ্লেষণ করেছেন ছয় বছর মেয়াদি তথ্য।
এতে দেখা গেছে, বাসায় কোনো পোষা প্রাণী নেই এমন ব্যক্তিদের তুলনায় পোষা প্রাণীর মালিকদের বেশি বয়সে মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় পতনের হার তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় কম। এর মধ্যে যারা অন্তত পাঁচ বছর ধরে পশমযুক্ত (বা পালকযুক্ত) প্রাণী বুকে আগলে রেখেছেন, তাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য সবচেয়ে ভালো পাওয়া গেছে।
পোষা প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল কুকুর-বিড়ালের সংখ্যা। তবে গবেষণায় খরগোশ, হ্যামস্টার, পাখি, মাছ ও সরীসৃপের মালিকদের তথ্যও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
গবেষকরা ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের হেলথ অ্যান্ড রিটায়ারমেন্ট স্টাডির ডেটা ব্যবহার করেন। এই ডেটা তৈরি হয়েছে একটি বিস্তৃত পরিসরের সমীক্ষার ভিত্তিতে, যেখানে পোষা প্রাণী ও প্রাণীর মালিকদের মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় স্কোর তুলনা করা হয়েছে। গবেষণায় ছয় বছরের মেয়াদে স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানের মূল্যায়নে একাধিক পরীক্ষা পরিচালিত হয়।
গবেষকরা দেখেছেন দীর্ঘ মেয়াদে যারা প্রাণী পোষেন, তাদের মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষয় অন্যদের তুলনায় ১ দশমিক ২ পয়েন্ট কম। ৬৫ বছর বয়সের আশপাশের ১ হাজার ৩৬৯ জনকে চূড়ান্ত গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো পোষা প্রাণীর মালিক ছিলেন, আর ৩২ শতাংশ পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে এ ধরনের প্রাণী ঘরে রেখেছিলেন।
এর আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু মস্তিষ্ক নয়, পোষা প্রাণী সামগ্রিকভাবে মালিকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এমনকি পোষা প্রাণীর মালিকরা হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের মতো জটিলতায় কম ভোগেন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পোষা প্রাণী মানসিক চাপ লাঘব করতে সাহায্য করে বলেই এটি ঘটে থাকতে পারে।
মিশিগান ইউনিভার্সিটির স্নায়ুবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক টিফানি ব্র্যালি বলছেন, ‘মানসিক চাপ মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় কর্মকাণ্ডকেও নেতিবাচক দিকে প্ররোচিত করে থাকে। পোষা প্রাণী মালিকের এ ধরনের চাপ কমায়, ফলে মস্তিষ্কের সক্রিয়তাও এ কারণে বজায় থাকতে পারে।
‘এ ছাড়া একটি সহচর প্রাণী মানুষের শারীরিক সক্রিয়তাও বাড়িয়ে দেয়, এটাও মগজের জ্ঞানীয় স্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।’
ব্র্যালি ও তার সহকর্মীরা বলছেন, পোষা প্রাণী শিক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক ও পুরুষের মাথা ঝরঝরে রাখতে বেশি সাহায্য করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।