সিনেমায় হ্যারি পটারের ছিল অদৃশ্য হওয়ার পোশাক। আলখাল্লার মতো পোশাকটি গায়ে দিলেই অদৃশ্য হয়ে যেতেন হ্যারি। সেই সিনেমা দেখে অনেকের হয়তো হ্যারির মতো অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে জাগতে পারে।
এমন সব রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষের জন্য সুখবর দিল চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্র। তারা হ্যারির সেই পোশাকের আদলে একটি কোট তৈরি করেছেন। তবে এটি কেবল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আইএ) ক্যামেরার নজর এড়াতেই সক্ষম!
এক গবেষক বলেন, ‘আমাদের চারপাশে গোপনে নজরদারি চালাচ্ছে এআই প্রযুক্তির নিরাপত্তা ক্যামেরা। এগুলো আমাদের জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে; আমাদের গোপন বিষয়গুলো সবার সামনে প্রকাশ করে দেয়।
হ্যারি পটার সিমেনার একটি দৃশ্য
খালি চোখে এটিকে অন্যসব সাধারণ কোটের মতোই দেখায়। তবে এটি পরলে যে কেউ স্রেফ অদৃশ্য যাবেন...ধরা পড়বেন না নিরাপত্তা ক্যামেরায়।
কোটের কাস্টমাইজড ক্যামোফ্লেজ প্রিন্টটি অ্যালগরিদমের সাহায্যে ডিজাইন করা। এ কারণে দিনের আলোয় ক্যামেরায় ধরা পরে না এটি।
রাতের বেলা সাধাণরত ইনফ্রারেড থার্মাল ইমেজিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে শনাক্ত করে নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলো। এই প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে বিশেষ এই কোটে যুক্ত করা হয়েছে থার্মাল ডিভাইস; যেগুলো কোট থেকে বিভিন্ন তাপমাত্রা ছাড়ে। তাপের এমন অস্বাভাবিক আচরণের কারণে কোটটি রাডারকে ফাঁকি দিতে পারে।
চীনের উহান ইউনিভার্সিটির চার ছাত্র মিলে ‘অদৃশ্য প্রতিরক্ষামূলক’ কোটটি তৈরি করেছেন। এটি এমন একটি প্রকল্প যা ‘হুয়াওয়ে কাপ’-এ প্রথম পুরস্কার জিতেছে।
হুয়াওয়ে কাপ হলো সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে একটি উদ্ভাবন প্রতিযোগিতা; চীনা প্রযুক্তিগত জায়ান্ট হুয়াওয়ে এটির আয়োজক।
কোটের মূল অ্যালগরিদম ডিজাইন করেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র ওয়েই হুই। তিনি বলেন, ‘এই কোট তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি আমরা। এটি নিরাপত্তা ক্যামেরায় ব্যবহৃত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) মানুষ শনাক্ত করার প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে পারে।’
ছাত্ররা শুরুতে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ক্যামেরায় কোটটি পরীক্ষা করেন। এ সময় ক্যামেরার মানুষ শনাক্ত করার ক্ষমতা ৫৭ শতাংশ কমে যায়।
গবেষকরা বলছেন, কোটটি তৈরিতে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে ছিল ক্যামেরা এবং মানুষের চোখ। এ দুটোকেই বোকা বানানোর জন্য ভারসাম্য রাখতে হয়েছে।
ওয়েই বলেন, ‘আমরা এই কোটটিকে “অন্যায়ভাবে” শনাক্তকরণের বিরুদ্ধে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা রক্ষায় ডিজাইন করেছি।’
নজরদারির জন্য চীন সরকারের পরিচিত অনেক আগে থেকে। সবচেয়ে বেশি নগরদারি হয় এমন শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় ২০১৯ সালে চীন ছিল আট নম্বরে। বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ক্যামেরা ব্যবহার করে জিনজিয়াং প্রদেশের ‘সন্দেহজনক’ মুসলিমদের শনাক্ত করা হয়। পাশাপাশি গভীর রাতে শিশুদের গেম খেলাকেও নজরদারি চালায় চীন সরকার।