বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোশ্যাল মিডিয়া মরে গেছে

  •    
  • ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ১৭:২২

এখন আমরা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত প্রযুক্তি সব সময় আদর্শ কমিউনিটি তৈরির জন্য একে অপরের সঙ্গে একত্র হয় না। বরং এই নেটওয়ার্কগুলোর পক্ষে কোনো গণহত্যাকে উসকে দেয়া, মানসিক স্বাস্থ্যসংকট সৃষ্টি করা, মানুষকে উগ্রবাদী করা, কোনো দেশকে ব্ল্যাকআউট করা ও নির্দিষ্ট জনসংখ্যার ওপর নজরদারি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

টুইটার অধিগ্রহণের পর ইলন মাস্কের ধ্বংসযজ্ঞ আর ফেসবুকের ১০ বছর মেয়াদি মেটাভার্স তৈরির পরিকল্পনার পর বিনিয়োগকারীদের অসন্তুষ্টি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে তুমুল আলোচনা। সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন ভাষান্তর করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।

অনেকেই শঙ্কায় ভুগছেন, মাস্ক হয়তো টুইটার ধ্বংস করে দেবেন। তবে এ নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই, কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এরই মধ্যে মরে গেছে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, গত এক দশক ধরে আমরা যে প্ল্যাটফর্মগুলোকে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম’ হিসেবে জানি, সেই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারের সঙ্গে টাম্বলার বা আরও পেছনে গেলে মাইস্পেস- এগুলোর অধিকাংশকেই নতুন নতুন প্ল্যাটফর্ম নতুন ধরনের অনলাইন যোগাযোগের মডেল দিয়ে পেছনে ফেলে দিচ্ছে।

বহু বছরের বিতর্কের কারণে ফেসবুক নিজস্ব চাপেই ধসে পড়েছে। ইনস্টাগ্রাম অনেকে এখনও ব্যবহার করেন, তবে বন্ধুর চেয়ে অগণিত বিজ্ঞাপনের কারণে এর প্রতি মানুষের অপছন্দ বাড়ছে। আর মাস্ক টুইটার দখল করে নেয়ার পর প্ল্যাটফর্মটি থেকে অনেকেই বের হওয়ার চেষ্টায় আছেন। ফাঁস হওয়া রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমন দাবিও করা হয়েছে, টুইটার আদতে এখন এক ‘মৃত্যুপুরী’। কারণ এর ৯০ শতাংশ ট্রাফিক আসে মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছ থেকে, আর এসব ‘হেভি ইউজাররা’ এখন আর প্রতিদিন পোস্ট করছেন না।

মার্ক জাকারবার্গ চেয়েছিলেন ব্যবহারকারীরা এখন মেটাভার্স বা ওয়েব থ্রিতে চলে আসবেন, সেটাও হচ্ছে না। এ দুটোই বিকেন্দ্রীকৃত, টোকেন ও ক্রিপ্টোনির্ভর ইন্টারনেট। এটি নিয়ে বিনিয়োগকারী, ক্রিপ্টো মালিক ও পুঁজিপতিরা বেশ হইচই ও পিরামিড স্কিম তৈরি করেছিলেন। তাদের আশা ছিল, এ থেকে তারা আরও ধনী হবেন।

তবে এর বদলে সবাই এখন ইউটিউব, টিকটক, টুইচ ও অসংখ্য নতুন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন। তারা প্রচলিত বহুমুখী ও শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত আলোচনার স্ট্রাকচারসমৃদ্ধ প্ল্যাটফর্মের বিকল্প হিসেবে একমুখী প্ল্যাটফর্ম বেছে নিচ্ছেন। তারা পছন্দ করছেন ‘সম্প্রচার’ মডেল, যেখানে পারস্পরিকতার চেয়ে একজন কন্টেন্ট নির্মাতা ও তার দর্শক রয়েছেন।

ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তার শীর্ষে বা দুই নম্বরে থাকা টিকটকই এখন ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম’। যে কেউ টিকটক বানাতে পারেন, কিন্তু একে আদতে লঘু ব্যবহারের (passive consumption) জন্য তৈরি করা হয়েছে। টিকটকে ইনফ্লুয়েন্সার ও সেলিব্রিটি মডেল তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের প্রিয় নির্মাতাদের ফলো করেন বা পরোক্ষভাবে তাদের তৈরি কন্টেন্ট ব্যবহারকারীদের ফর ইউ পেজে প্রদর্শিত হয়। ইনস্টাগ্রামও এদিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যদিও ব্যবহারকারীরা একে অপছন্দ করেন।

আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিদায়ে শোকাহত হতে পারি বা এই পরিবর্তন কেন হচ্ছে তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। এর একটা কারণ হতে পারে, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মগুলোর অর্থ উপার্জন করা উচিত নয় এবং লাভের আশায় তারা নানা পথ অবলম্বন করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথবা এ-ও বলা যেতে পারে এখন সত্যিকার অর্থে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলে কিছু নেই, কখনও ছিল না।

আদতে যা আছে আর আমরা মাঝে মধ্যে যেটা উপভোগ করি সেটা হলো যোগাযোগের নেটওয়ার্কগুলোর একটি সিরিজ। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের আসলে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেই’, আদতে এগুলো ভোগনির্ভর এবং অনুমোদনের মুখাপেক্ষী নয় এমন বন্ধন ও গ্রুপের নেটওয়ার্ক।

এটাকে এমনভাবেই দেখা যেতে পারে যে একক কোনো ইন্টারনেট নেই। যা রয়েছে তা হলো জোড়া দেয়া ডিজিটাল ভুবন ও নেটওয়ার্ক, যাদের প্রত্যেকের আলাদা ইতিহাস, ভূরাজনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি ও প্রণোদনা রয়েছে। এগুলোকে আমরা একসঙ্গে ইন্টারনেট বলি।

বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট যেভাবে ব্যবহৃত হয় সেটার এক ধরনের সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন ব্রাউজ করা, কেনাকাটা করা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো সাম্প্রতিক উন্নয়ন যেগুলো আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার একেবারে ভিন্ন ধরনের অবকাঠামো, আইন, রাজনৈতিক অবস্থা, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সৃষ্টির সময়ে ধারণা করা হচ্ছিল, ইন্টারনেটের শক্তি, বৈশ্বিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ও অন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা একটা জায়গা তৈরি করতে পারব, যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর তৈরি হতে পারে ও বিস্তার লাভ করতে পারে।

এটি হবে এমন এক স্থান যেখানে আমরা পুরো বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব, বন্ধুরা কী করছে জানতে পারব, নতুন বন্ধু বানাতে পারব, নতুন পরিচয় গ্রহণ করতে পারব ইত্যাদি ইত্যাদি। এটি আশ্চর্যজনক সরলমনা একটি চিত্র।

এখন আমরা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত প্রযুক্তি সব সময় আদর্শ কমিউনিটি তৈরির জন্য একে অপরের সঙ্গে একত্র হয় না। বরং এই নেটওয়ার্কগুলোর পক্ষে কোনো গণহত্যাকে উসকে দেয়া, মানসিক স্বাস্থ্যসংকট সৃষ্টি করা, মানুষকে উগ্রবাদী করা, কোনো দেশকে ব্ল্যাকআউট করা ও নির্দিষ্ট জনসংখ্যার ওপর নজরদারি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে অনেকটা সময় ধরে। বছরের পর বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের বেছে নেয়া বন্ধু ও যাদের অনুসরণ করছি তাদের পোস্টের অবাধ প্রবাহ ছিল আমাদের ফিডে। আর এখন আমরা সবচেয়ে বেশি যা দেখতে পাচ্ছি, তা অ্যালগরিদম নির্বাচন করে দেয় ও বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের পোস্টগুলোকে উৎসাহিত করতে বা প্রচার করতে অর্থ প্রদান করে। একে খুব কমই ‘সামাজিক’ বলা যেতে পারে- এখানে লক্ষ্য হলো ব্যস্ততা বাড়ানো ও পেজে ধরে রাখা।

এরপরেও আমরা প্রযুক্তির দিকে এভাবে তাকাই যেন এটি এমন এক হাতিয়ার যা দিয়ে শান্তিপূর্ণ, আদর্শ সমাধান সম্ভব। আমরা মনে করি সঠিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স–এআই) দেয়া নির্ভুল এলগরিদম কন্টেন্টের যথাযথতাকে নিশ্চিত করবে, বৈশিষ্ট্যকে যাচাই করবে ও নিখুঁতভাবে বাছাই করবে, ভুল তথ্যের প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে না ও যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দিকে আমাদের মনোযোগ ফেরাতে সহায়তা করবে।

তার আগে আমাদের এ প্রশ্ন করতে হবে, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলতে কী বুঝি? একে রক্ষা করতে যে হাতিয়ারগুলো দরকার সেগুলোকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

গত ১০ বছর ধরে বড় বড় কোম্পানিগুলো যেভাবে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম’ নামটিকে ব্যবহার করেছে তা হলো এটা এমন কিছু প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারী বৃদ্ধির সংখ্যাকে বিজ্ঞাপনদাতার আয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, নতুন পণ্য ও সার্ভিসের সঙ্গে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য বিজ্ঞাপনদাতার রাজস্বের জন্য সুবিধা দেয়া হয় এবং এমন আরও অনেক কিছু।

এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারকারীদের একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ করে দেয়। একই সঙ্গে সমস্ত সংযোগ প্রক্রিয়ার ডেটা জমা রাখে। যা অন্য কোম্পানি কিনে নেয় যাতে তারা প্রাসঙ্গিক পণ্য ও সার্ভিস অফার করতে পারে।

এটাও আসলে প্রকৃত সত্য নয়। এ সমস্ত কিছুর পেছনে থাকা রাজনৈতিক অর্থনীতির দিকে তাকালে ভয়াবহ কিছু দৃশ্য চোখে পড়বে। সামাজিক মিডিয়ার প্রতিটি প্রধান বিষয় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ও পরিচালিত।

আমরা যে ডেটা তৈরি করি, যে ডেটা সেন্টারগুলো এটি জমা রাখে, যে অ্যালগরিদমগুলো একে বিশ্লেষণ করে, যে সার্ভারগুলো একে হোস্ট করে, অ্যানালিস্টদের যে দল একে চিহ্নিত, বাছাই ও তার সঙ্গে ইন্টরঅ্যাক্ট করে, যে তার দিয়ে তথ্য ভ্রমণ করে, যে প্ল্যাটফর্ম আমরা ব্যবহার করি, তাদের অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান কোনোটিই আমাদের নয়।

এমনকি বিকল্প পদ্ধতি বিকাশের জন্য আমরা যে ডেটা ব্যবহার করতে পারি সেগুলোও এমন কোম্পানি জমা রাখে যারা নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক মডেলে কাজ করে এবং সম্পূর্ণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে। সেই ডেটা নিয়ে পরীক্ষা করার জন্য আমরা যে কম্পিউটেশনাল রিসোর্সগুলো ব্যবহার করতে পারি সেগুলো ব্যক্তিগতভাবে টেক কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন। অথবা রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের মালিকানাধীন, যারা ইন্টারনেট অবকাঠামোকে বাণিজ্যযোগ্য আর্থিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে।

আমাদের যে প্ল্যাটফর্মগুলো রয়েছে, যেগুলো মৃতপ্রায় বা মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে সেগুলোকে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম’ বা ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কস’ বললে ভুল হবে। কারণ এ থেকে মনে হয়ে যে, এগুলো হয়ত সামাজিকতার ওপর নির্ভরশীল কোনো প্ল্যাটফর্ম। আদতে আমরা এমন কিছু তৈরি করেছি যা আমাদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত সিস্টেম এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাহিদা, আগ্রহের কারণে সামাজিক সম্পর্কের প্রতিরূপ অফার করে।

যে প্ল্যাটফর্মগুলো শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করেছে তার বদলে সত্যিকার অর্থে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটাই যারা একমুখী সম্প্রচার মডেলকে সহজভাবে গ্রহণ করতে, আবিষ্কার করতে ও সেটি নিয়ে জরুরি কাজ করতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেসব দেশে অন্য অ্যাপগুলো জনপ্রিয় সেখান থেকে আমরা যেসব বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা যায় বা বাতিল করা যায় তার আভাস পেতে পারি। উদাহরণ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং অ্যাপের কথা বলা যায়। এটি ব্রাজিল বা ভারতের মতো দেশে দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ফেসবুক এখনও হোয়াসঅ্যাপের মালিক। হোয়্যাটসঅ্যাপ বিজ্ঞাপনদাতাদের আয়কে (বা অতিরিক্ত রাজস্বের পথ তৈরির চেষ্টা) সফলভাবে নগদীকরণ করেনি ও পুনর্গঠিত হয়নি। তবে এটিও বিভ্রান্তি, ভুল তথ্য ও জনতার সহিংসতা ছড়ানোর দোষে দুষ্ট।

বিকল্প অন্বেষণের অর্থ হতে পারে যে ম্যাস্টোডনের মতো কিছুর দিকে অগ্রসর হওয়া। মাস্কের টুইটার দখলের পর থেকে এই হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এটি এখনও ত্রুটিমুক্ত হওয়া থেকে অনেক দূরে। একটি বাস্তব বিকল্প খুঁজে বের করার জন্য মানবিক বিশৃঙ্খলা ও ছলচাতুরির ঝুঁকি ও ধাক্কা সামাল দিতে হবে। এমন নয় যে আমরা এখন তা করছি না।

আরও পড়ুন: টুইটার ছেড়ে এবার কি ম্যাস্টোডনে যাবেন?

সত্যিকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরির পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় প্রভাবশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলোর পেছনে থাকা সমস্ত জটিল সিস্টেম।

এত কিছুর পরেও এটা ঠিক, আমরা যে যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলোকে বলি ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম’, সেটা আজ আধিপত্য বিস্তার করছে। আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে শীতল যুদ্ধের ভূরাজনীতি সিলিকন ভ্যালির জন্ম দিয়েছে।

আমরা যাকে ইন্টারনেট বলি তার পেছনেও রয়েছে সামরিক সহযোগিতা। এটি এমন এক বিশ্ব যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনীতি একটি নজরদারি ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে, যেন উৎপাদন ও ভোগ পুঁজিবাদের একটি স্বর্ণযুগ বজায় থাকে। আমাদের এই বিশ্ব এমন যেখানে একক নেতৃত্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুবিধা বা প্রাধান্য পায় মুনাফাখোর, একচেটিয়া ব্যবসায়ী ও সম্পদ ব্যবস্থাপকের স্বার্থ।

এগুলোর কারণে আমরা সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে পারব সে রকম একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হবে বিষয়টি তেমন নয়। সেটার বদলে আমরা অন্যদেরকে কী পরিমাণে দেখি ও আমাদেরকে দেখে আরও সক্রিয়ভাবে বৃহত্তর, বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলি কীভাবে লাভ করতে হয় তা খুঁজে বের করতে আগ্রহী (পাশাপাশি সরকারগুলো তাদের নাগরিকদের পর্যবেক্ষণ বা নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী)। মৌলিক কোনো পরিবর্তন হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা সত্যিকার অর্থে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পাব না।

এ বিভাগের আরো খবর