প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে গ্লাডিয়েটরদের নির্মম জীবনকাহিনি মোটামুটি সবার জানা। কখনও হিংস্র পশু, আবার কখনও প্রতিপক্ষ গ্লাডিয়েটরের মুখোমুখি হতেন তারা। অভিজাত রোমান দর্শকদের তুমুল হর্ষধ্বনির মাঝে চলত তুমুল লড়াই। এই লড়াইয়ে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। অ্যারেনা থেকে প্রাণ নিয়ে বের হতে হলে অবশ্যই হত্যা করতে হবে প্রতিপক্ষ গ্লাডিয়েটর বা হিংস্র পশুকে।
সেই রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে বহুকাল আগে, গ্লাডিয়েটর-প্রথাও বিলুপ্ত। তবে আধুনিক কালে ভিন্ন রূপে আবার ফিরে আসছে প্রাণঘাতী খেলা।
দ্য ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জের মতো অনলাইন ‘সুইসাইড গেম’-এর কথা সবার জানা। বিশেষত টিনএজারদের আকৃষ্ট করা এ ধরনের গেম কেড়ে নিয়েছে অনেকের জীবন।
এবার এমন এক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) হেডসেট তৈরির খবর বেরিয়েছে, যেটি পরে ভিডিও গেম খেললে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। খেলায় হারামাত্র সত্যি সত্যি খুন হয়ে যাবেন হেডসেট পরা মানুষটি।
প্রতিরক্ষা ঠিকাদার ও আধুনিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জনক পামার লাকি এমন ভিআর হেডসেট তৈরির কথা জানিয়েছেন। ব্যবহারকারীরা এটি পরে ভিডিও গেম খেলার পর হেরে গেলে ভিআরসেটটি তাকে মেরে ফেলবে।
সোর্ড আর্ট অনলাইন গেমটির কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করেছেন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওকুলাস-এর প্রতিষ্ঠাতা পামার। একটি ব্লগ পোস্টে তিনি তিনি সোর্ড আর্ট অনলাইন সিরিজের একটি কাল্পনিক ইভেন্ট বর্ণনা করেছেন। এতে ১০ হাজার খেলোয়াড় একটি ভিআরএমএমএমওআরপিজি পরিবেশে আটকে পড়েন। এর মধ্যে ৪ হাজার খেলা চলাকালীন বিভিন্ন ভুলের কারণে মারা যান।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ম্যাসিভ মাল্টিপ্লেয়ার অনলাইন রোল-প্লেয়িং গেম (ভিআরএমএমএমওআরপিজি) হলো ভিডিও গেম ইন্টারফেসের একটি ফর্ম যেখানে মাথার সঙ্গে যুক্ত ডিসপ্লে, অডিও এবং ইনপুট ডিভাইস থাকে। এর মাধ্যমে খেলোয়াড়রা ভিডিও গেমের পরিবেশের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম হয়ে যান।
সোর্ড আর্ট অনলাইনের ইভেন্টটি ৬ নভেম্বর শুরু হয়েছে। আর এ উপলক্ষেই ব্লগ পোস্টে নিজের 'প্লে-অর-ডাই' ভিআর হেডসেট তৈরির তথ্য জানিয়েছেন পামার।
পামার তার ওকুলাস কোম্পনি ২০১৪ সালে ফেসবুকের কাছে ২০০ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেন। এরপর তার ভার্চুয়াল প্রযুক্তি মেটার ভিত্তি হিসেবে রিব্র্যান্ড করেন মার্ক জাকারবার্গ।
পামারের উদ্ভাবিত প্রাণসংহারী হেডসেটটি দেখতে অনেকটা মেটা কোয়েস্ট প্রো-এর মতো। তবে এর স্ক্রিনের ওপরে তিনটি বিস্ফোরক চার্জ মডিউল যুক্ত রয়েছে। এই মডিউলগুলো সরাসরি ব্যবহারকারীর কপালের সঙ্গে যুক্ত এবং খেলায় হেরে গেলেই তা বিস্ফোরিত হয়ে ব্যবহারকারীর খুলি উড়িয়ে দেবে।
প্রাণঘাতী প্রকল্পে জড়িত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ব্লগ পোস্টে পামার লিখেছেন, ‘আপনার বাস্তব জীবনকে ভার্চুয়াল অবতারের সঙ্গে যুক্ত রাখার ধারণাটি আমাকে সব সময় উদ্দীপ্ত করেছে। আপনি সর্বোচ্চ স্তরে বাজি ধরেছেন এবং লোকজনকে মৌলিকভাবে ভাবতে বাধ্য করেছেন তারা কীভাবে ভার্চুয়াল জগৎ এবং এর ভেতরের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাস্তবের মতো যোগাযোগ করতে পারেন।’
তিনি বলছেন, ‘নিখুঁত গ্রাফিক্স একটি গেমটিকে আরও বাস্তবধর্মী হিসেবে দেখাতে পারে, তবে গুরুতর পরিণতির হুমকির পরিবেশই কেবল পারে একটি গেমকে প্রতিটি মানুষের কাছে বাস্তবসম্মত করে তুলতে।’
পামার মনে করছেন, জাপানের মতো দেশে অ্যানিমেশন এবং হালকা ঢঙের গল্পের সিরিজ সোর্ড আর্ট অনলাইন মানুষকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আগ্রহী করে তুলছে।
এই গেমে খেলোয়াড়রা একটি নার্ভগিয়ার ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট পরে একটি নতুন গেমে লগ ইনের পর একজন পাগল বিজ্ঞানীর সন্ধান পান, যিনি তাদের ভার্চুয়াল জগতে আটকে রেখেছেন। পালানোর জন্য খেলোয়াড়দের ১০০ তলা অন্ধকূপের পথে পথে লড়াই চালাতে হয়।
ব্লগ পোস্টে পামার লেখেন, ‘সুসংবাদটি হলো আমরা একটি সত্যিকারের নার্ভগিয়ার তৈরির অর্ধেক পথে রয়েছি। আর খারাপ খবর হলো, এখন পর্যন্ত আমি ব্যবহারকারীকে হত্যার কেবল অর্ধেক উপায় সেখানে খুঁজে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সোর্ড আর্ট অনলাইন গেমে নার্ভগিয়ার একটি মাইক্রোওয়েভ ইমিটার দিয়ে খেলোয়াড়দের হত্যা করে। তবে আমি বেশ স্মার্ট লোক, আমি এই হেডসেটটিকে বিশাল যন্ত্রপাতির সঙ্গে যুক্ত না করে আসল কাজটি (ব্যবহারকারীকে হত্যা) করার কোনো উপায় বের করতে পারিনি।’
সত্যি সত্যি হত্যার ঘটনা ঘটাতে পামার তার হেডসেটে বিস্ফোরক মডুলার যুক্ত করেছেন। তিনি এগুলোকে একটি সরু ব্যান্ড ফটো সেন্সরের সঙ্গে বেঁধে দেন। হেডসেটের স্ত্রিনে ‘গেম-ওভার’ লেখা প্রদর্শিত হলেই চার্জগুলো গরম হয়ে বিস্ফোরিত হয় এবং খুলি উড়িয়ে দেয়।
প্রাণঘাতী হেডসেটে তিনটি বিস্ফোরক চার্জ ব্যবহার করলেও এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেননি পামার। তবে বিস্ফোরক সম্পর্কে তার ধারণা ব্যাপক। পামার আন্দুরিল নামের একটি কোম্পানিরও প্রতিষ্ঠাতা। এই কোম্পানি অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ঠিকাদার হিসেবে আমেরিকার বিশেষ বাহিনীর জন্য যুদ্ধাস্ত্র, অ্যান্টি-ড্রোন প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে।
তিনি হেডসেটটির আরও ‘উন্নয়নের’ পরিকল্পনা করছেন। সে ক্ষেত্রে জালিয়াতি করে বা ভয় পেয়ে খেলার মাঝে হেডসেট খুলে ফেলা যাবে না।
পামার বলেন, ‘আমার একটি অ্যান্টি-টেম্পার মেকানিজমের পরিকল্পনা আছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে হেডসেট অপসারণ বা ধ্বংস করা অসম্ভব হয়ে যাবে।
‘যতদূর জানি, এটি একটি ভিআর ডিভাইসের প্রথম নন-ফিকশন উদাহরণ, যা ব্যবহারকারীকে হত্যা করতে পারে।‘