গ্রামীণফোনের অব্যবহৃত সিম বিক্রির সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন বিটিআরসি একক সিদ্ধান্তে এই সিম বিক্রির সুযোগ দিল, সেটা জানতে সম্প্রতি বিটিআরসিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয় টানাপোড়েন।
এর মধ্যেই সোমবার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, গ্রামীণফোনর নতুন-পুরোনো সব ধরনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এ ঘটনায় হতাশা জানিয়ে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের এমন অবস্থান দেশে ডিজিটালাইজেশন এজেন্ডা ও গ্রাহকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি।
মন্ত্রণালয়-বিটিআরসি টানাপোড়েন যেভাবে
গ্রামীণফোন লিমিটেডের সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়া পর্যন্ত সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ রাখতে ২৮ জুন নির্দেশনা দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। পরদিন ২৯ জুন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় বিটিআরসি।
এর তিন মাস পর ১৮ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র সংবাদমাধ্যমকে জানান, গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মূলত এরপরই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিটিআরসির টানাপোড়েন শুরু হয়।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন বিটিআরসি একক সিদ্ধান্তে সিম বিক্রির সুযোগ দিল, তার কারণ জানাতে গত ১৯ অক্টোবর নোটিশ দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ শরিফুল ইসলামের সই করা ওই নোটিশে বলা হয়, ‘বিটিআরসি কর্তৃক গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর রিসাইকেল করা ১৩ লাখ সিম বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়েছে মর্মে জানা যায়। গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর সিম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এই বিভাগের অনুমোদন ব্যতীত বিটিআরসি কর্তৃক এককভাবে এই অনুমতি দেওয়ার কারণ এই বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
বিষয়টি নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও ক্ষোভ জানান। তিনি ২ নভেম্বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একদম সহজ হিসাব। মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বিটিআরসি সেই নিষেধাজ্ঞা অনুসারে গ্রামীণফোনের সব সিম বিক্রি বন্ধ করেছে। এরপর তারা যেটা করেছে সংগত কারণেই তাদের এর কারণ দর্শাতে নোটিশ দেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিআরসি যেটা বলছে, গ্রামীণফোন পুরোনো সিম বিক্রি করছে। কিন্তু কথা হলো গ্রামীণফোন পুরোনো গ্রাহকের কাছে পুরোনো সিম বিক্রি করছে না। তারা বিক্রি করছে নতুন গ্রাহকের কাছে। এখন নতুন গ্রাহকের কাছে যদি গ্রামীণফোন সিম বিক্রি করে, তাহলে মান্ত্রণালয় যে কনসেপ্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেই কনসেপ্টেরই ভায়োলেশন হয়।’
‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আমরা নিম্ন কোনো কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা সেটা বাস্তবায়ন করেছে। সেই নির্দেশের কোনো ব্যতিক্রম করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই করতে হবে।’
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সোমবার মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিটিআরসি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমি যা বলার গতকালের অনুষ্ঠানেই বলেছি। আপনার যদি আমার বক্তব্য প্রয়োজন হয় তাহলে গতকালের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যই লিখে দেন।’
রোববারের ওই অনুষ্ঠানে দেয়া বিটিআরসি চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
গ্রামীণফোনের সব ধরনের সিম বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারণটি হচ্ছে, যেদিন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয় সেদিন সেখানে নেটওয়ার্ক ভালো ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আমাদের সচিবকে ফোন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এর আগেও প্রচুর অভিযোগ ছিল এবং এখনও আছে। সেবার মান খারাপ। আদালতে রিটও ছিল। এগুলো বিবেচনায় মন্ত্রী গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রি বন্ধের জন্য বলেছিলেন।‘
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের ৩৪ লাখ গ্রাহক কমেছে। তবে বাজারে তাদের চাহিদা আছে। গত সেপ্টেম্বরে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে পুরোনো সিম বিক্রির যে অনুমতি দিয়েছিল, সেটা আবার প্রত্যাহার করা হয়েছে।
হতাশ গ্রামীণফোন
বিটিআরসির অবস্থান পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন গ্রামীণফোনের হেড অফ এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মোহাম্মাদ হাসান।
এতে বলা হয়, ‘গ্রাহকদের চাহিদার কারণে প্রাক-অনুমোদিত নম্বর বিক্রির অনুমতি দেয়ার আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
‘গ্রাহকদের পক্ষ থেকে, গ্রামীণফোন এই সিদ্ধান্তে গভীরভাবে মর্মাহত। আমরা বিশ্বাস করি যে এটি দেশের ডিজিটালাইজেশন এজেন্ডার জন্য এবং গ্রাহকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি।’
তবে তিনি বলেন, ‘আমদের নতুন-পুরোনো সিম বিক্রি বন্ধ থাকলেও সিম রিপ্লেস অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি তার নামের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করা সিম হারিয়ে ফেললে তিনি তার নম্বর তুলতে পারবেন। এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।’