মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণফোনের সিম (সাবসক্রাইবার আইডেনটিটি মডিউল) বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রণকারী স্বাধীন সংস্থা বিটিআরসি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে।
দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল টেলিযোগাযোগ কোম্পানি গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রির ওপর মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) তা শিথিল করে ১৩ লাখ অব্যবহৃত সিম বিক্রির সুযোগ দেয়।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন বিটিআরসি একক সিদ্ধান্তে এই সিম বিক্রির সুযোগ দিল, সেটা জানতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
গত ১৯ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে পাঠানো এই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিটিআরসি কর্তৃক গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর রিসাইকেল করা ১৩ লাখ সিম বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়েছে মর্মে জানা যায়। গ্রামীণফোন লিমিটেড-এর সিম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এই বিভাগের অনুমোদন ব্যতীত বিটিআরসি কর্তৃক এককভাবে এই অনুমতি দেওয়ার কারণ এই বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, মন্ত্রণালয় নতুন সিম বিক্রির নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা সেই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করিনি। আমরা শুধু গ্রামীণফোনকে পুরাতন সিম বিক্রির অনুমতি দিয়েছি।’
তাহলে মন্ত্রণালয় কেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দিল- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের শোকজের ব্যাপারটা... কী নোটিশ দিল না দিল এটা মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করেন। এটা আমি বলব না, আমি আমার বক্তব্য বললাম।’
তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একদম সহজ হিসাব। মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বিটিআরসি সেই নিষেধাজ্ঞা অনুসারে গ্রামীণফোনের সকল সিম বিক্রি বন্ধ করেছে। এর পরে তারা যেটা করেছে সঙ্গত কারণেই তাদেরকে এই কারণ দর্শনো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের আদেশ, তাদের অনুমতি ছাড়া সেই আদেশের বরখেলাপ করার কোনো এখতিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। এরা মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন গ্রহণ করে নাই, তাই মন্ত্রণালয় তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাইবেই যে তোমরা আমাদের মতামত ছাড়া এই অনুমতি দিয়েছ কেন?’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিটিআরসি যেটা বলছে, গ্রামীণফোন পুরাতন সিম বিক্রি করছে। কিন্তু কথা হলো গ্রামীণফোন পুরাতন সিম বিক্রি করছে পুরাতন গ্রাহকের কাছে না, নতুন গ্রাহকের কাছে। এখন নতুন গ্রাহকের কাছে যদি গ্রামীণফোন সিম বিক্রি করে, তাহলে মান্ত্রণালয় যে কনসেপ্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেই কনসেপ্টের ভায়োলেশন হলো। এখনে কোনো ছাড় দিতে হলে বিটিআরসির অবশ্যই মন্ত্রনালয়কে অবহিত করে ছাড় দিতে হবে, কিন্তু এখানে বিটিআরসি সেটা করেনি।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। আমরা নিম্ন কোনো কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা সেটা বাস্তবায়ন করেছে। সেই নির্দেশের কোনোও ব্যতিক্রম করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই করতে হবে। এটা স্বাভাবিক একটা নিয়ম, সেই সহজ নিয়মেই মন্ত্রণালয় তাদের কাছে ব্যাখ্য চেয়েছে।
‘এখন আমরা দেখব বিটিআরসির বক্তব্যটা কী, তারপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব।
গত ২৮ জুন গ্রামীণফোন লিমিটেডের সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়া পর্যন্ত নতুন সিমকার্ড বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এর পরের দিন ২৯ জুন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)।
এর তিন মাস পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র গণমাধ্যমকে জানান, গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর দেয়া নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করেছে সংস্থাটি।
সে সময় তিনি বলেন, ‘সিম বিক্রিতে আগে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল, সেটাকে স্পষ্ট করেছি আমরা। তাদের হাতে থাকা অব্যবহৃত সিম তারা বিক্রি করতে পারবে। তবে নতুন কোনো সিম বিক্রি করতে পারবে না।’