পদার্থবিজ্ঞানের পর এবার রসায়নেও নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন বিজ্ঞানী। ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’ ও ‘বায়োঅর্থোগোনাল কেমিস্ট্রি’র ভিত্তি দিয়ে এ পুরস্কার জয় করেছেন আমেরিকার ক্যারোলাইন আর বারটোজ্জি, কে ব্যারি শার্পলেস এবং ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল।
নোবেল কমিটি বলেছে, রসায়নের কঠিন প্রক্রিয়াকে সহজ করতে ভূমিকা রেখেছেন এই তিন বিজ্ঞানী। কে ব্যারি শার্পলেস এবং মর্টেন মেলডাল ক্লিক কেমেস্ট্রি নামে রসায়নের একটি কার্যকর রূপের ভিত্তি দিয়েছেন, যেখানে আণবিক গঠনগুলো দ্রুত এবং সুদক্ষভাবে সংগঠিত হয়। অন্যদিকে ক্যারোলাইন আর বারটোজ্জি ক্লিক কেমেস্ট্রিকে একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়ে জীবন্ত প্রাণীতে ব্যবহার শুরু করেন।
ব্যারি শার্পলেস ২০০১ সালেও রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েেছিলেন। তিনি ২০০০ সালের দিকে ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’র ধারণাটি তৈরি করেন। এটি একটি সহজ ও নির্ভরযোগ্য রসায়ন, যেখানে রাসায়নিক প্রক্রিয়া বেশ দ্রুত ঘটে এবং অবাঞ্ছিত উপজাতগুলো এড়ানো সম্ভব।
এর কিছুদিনের মধ্যে মর্টেন মেলডাল এবং ব্যারি শার্পলেস স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে এমন এক প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন যাকে ক্লিক কেমিস্ট্রির ‘মুকুট রত্ন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার নাম দ্য কপার ক্যাটালাইজড অ্যাজাইড-অ্যালকাইন সাইক্লোঅ্যাডিশন।
মার্জিত ও দক্ষ এই রাসায়নিক প্রক্রিয়া এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। ওষুধের উন্নয়ন, ডিএনএ মানচিত্রতৈরিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ক্যারোলাইন আর বারটোজ্জি ক্লিক কেমেস্ট্রিকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে গেছেন। কোষপৃষ্ঠের গুরুত্বপূর্ণ অধচ অধরা জৈব অণু গ্লাইক্যানসের মানচিত্র তৈরিতে তিনি জীবন্ত প্রাণীর অভ্যন্তরে কাজ করতে সক্ষম ক্লিক রিঅ্যাকশন তৈরি করেন। কোষের স্বাভাবিক রসায়ন ব্যাহত না করেই তার বায়োঅর্থোগোনাল রিঅ্যাকশনটি কাজ করে।
এই রাসায়নিক প্রক্রিয়া এখন কোষের প্রকৃতি অন্বেষণ এবং জৈবিক প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। বায়োঅর্থোগোনাল রিঅ্যাকশন প্রয়োগ করে গবেষকেরা ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে ওষুধের মান উন্নয়ন করেছেন, যেগুলোর এখন ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে।
নোবেল কমিটি বলছে, ক্লিক কেমেস্ট্রি এবং বায়োঅর্থোগোনাল রিঅ্যাকশন রসায়ন বিদ্যাকে কার্যকারিতার যুগে পৌঁছে দিয়েছে। এর ফলে উপকৃত হচ্ছে গোটা মানবজাতি।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস বুধবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এ পুরস্কার ঘোষণা করে।
জৈব-অনুঘটন বিক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য গতবার রসায়নের নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন বেঞ্জামিন লিস্ট ও ডেভিড ডব্লিউ সি ম্যাকমিলান নামের দুই বিজ্ঞানী।
এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয় সোমবার। প্রথম দিন চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জয় করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী এসভান্তে পেবো।
পরদিন মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল। এ পুরস্কার পান তিন দেশের তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন ফ্রান্সের অ্যালাঁ আসপে, যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ ক্লাউসার ও অস্ট্রিয়ার আন্টন সেইলিংগার।
অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১০ অক্টোবর শেষ হবে এবারের মোট ছয়টি শাখায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। আগামী ডিসেম্বরে সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল সপ্তাহে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে পুরস্কারের পদক, সনদ ও অর্থ।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার।