আলোর একক কণা ফোটন নিয়ে গবেষণায় বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়ে পদার্থবিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার জয় করেছেন তিন দেশের তিন বিজ্ঞানী। তারা হলেন ফ্রান্সের অ্যালাঁ আসপে, যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ. ক্লাউসার ও অস্ট্রিয়ার আন্টন সেইলিংগার।
বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টায় রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্স এই পুরস্কার ঘোষণা করে।
নোবেল কমিটি বলেছে, বিজড়িত ফোটন কণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বেল অসমতার (বেল ইনইক্যুয়ালিটি) লঙ্ঘন প্রতিষ্ঠা এবং কোয়ান্টাম বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে নোবেল জয় করেছেন তিন পদার্থবিদ।
এই তিন বিজ্ঞানী বিজড়িত কোয়ান্টাম পর্যায়কে ব্যবহার করে যুগান্তকারী পরীক্ষা চালিয়েছেন, যেখানে দুটি ফোটন কণা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও একক কণার মতো আচরণ করে। এই বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন কোয়ান্টাম ইনফরমেশনের উপর ভিত্তি করে নতুন প্রযুক্তি তৈরির পথ খুলে দিয়েছে।
অ্যালাঁ আসপে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা দূর করার ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন। ফোটনের একটি যুক্ত কণার জোড়া তার উৎস থেকে নির্গত হওয়ার পরে তিনি পরিমাপক ব্যবস্থাটি পরিবর্তন করতে সক্ষম হন, ফলে কণা দুটির নির্গত হওয়ার সময়কার যে অবস্থা বিদ্যমান ছিল তা পরবর্তী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে না।
জন এফ. ক্লাউসার এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন যা একটি ফিল্টারের দিকে দুটি যুক্ত ফোটনকে একযোগে ছুড়ে দিতে পারে, আর সেই ফিল্টারটি কণা দুটির মেরুকরণ পরীক্ষা করে। এর মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল বেল অসমতার (বেল ইনইক্যুয়ালিটি) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং কোয়ান্টামবিদ্যার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর সঙ্গে মানানসই।
আন্টন সেইলিংগার গবেষণা করেছেন বিযুক্ত কোয়ান্টাম অবস্থা নিয়ে। তার গবেষণা দল কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন নামে একটি বিশেষ অবস্থা দেখিয়েছেন, যেখানে একটি কণা থেকে দূরের আরেক কণায় কোয়ান্টাম অবস্থার স্থানান্তর ঘটানো সম্ভব।
কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট বা জড়িত অবস্থা হলো এমন একটি ভৌত ঘটনা, যখন কণাগুলোর একটি একক গ্রুপ তৈরি হয়। এরা স্থানিক নৈকট্যকে পরস্পরের মাঝে সমান ভাগ করে নেয়। এর ফলে প্রতিটি কণার কোয়ান্টাম অবস্থা অন্য কণা থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় না। এনট্যাঙ্গলমেন্ট কোয়ান্টামবিদ্যার একটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য যা ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সে নেই।
এর আগে গত বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ স্যুকুরো মানাবে (জাপান), জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ম্যাটেরোলজির প্রফেসর ক্লাউস হ্যাসেলম্যান (জার্মানি) এবং ইতালির রোমের স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জর্জিও প্যারিসি (ইতালি)।
পৃথিবীর জলবায়ু পরিস্থিতির জটিল ভৌত সিস্টেম সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ায় যুগান্তকারী অবদান রাখার জন্য পুরস্কার পান তারা।
এ বছর নোবেল পুরষ্কার ঘোষণা শুরু হয়েছে সোমবার। এদিন চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল জয়ী হিসেবে বিজ্ঞানী এসভান্তে পেবোর নাম ঘোষণা করা হয়। বিলুপ্ত হোমিনিনের (মানুষের আদি নিকটাত্মীয়) জিনগত সঞ্চার এবং মানব বিবর্তনের সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য এই পুরস্কার পান সুইডেনের এ বিজ্ঞানী।
অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১০ অক্টোবর শেষ হবে এবারের মোট ছয়টি শাখায় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। আগামী ডিসেম্বরে সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল সপ্তাহে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হবে পুরস্কারের পদক, সনদ ও অর্থ।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতিবছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার।