বিলুপ্ত হোমিনিনের (মানুষের আদি নিকটাত্মীয়) জিনগত সঞ্চার এবং মানব বিবর্তনের সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসায় নোবেল জয় করেছেন সুইডেনের বিজ্ঞানী এসভান্তে পেবো।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বাংলাদেশে সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
নোবেল কমিটি বলেছে, ‘মানুষ সব সময়েই তার শেকড় অনুসন্ধান করছে। আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং আমাদের আগে যারা এসেছিল তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী? হোমিনিন থেকে আমাদের হোমো সেপিয়েন্স কীভাবে আলাদা?
‘তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে এসভান্তে পেবো আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কিছু উদ্ঘাটন করেছেন। তিনি বর্তমান সময়ের মানুষের বিলুপ্ত নিকটাত্মীয় নিয়ান্ডারথালের জিন মানচিত্র তৈরি করেছেন। তিনি আমাদের অজানা হোমিনিন ডেনিসোভার অস্তিত্বও আবিষ্কার করেছেন।’
নোবেল কমিটি বলছেন, ‘তাৎপর্যপূর্ণভাবে পেবো এটাও দেখিয়েছেন, প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে আগে আফ্রিকা থেকে অভিবাসনের পর এই বিলুপ্ত হোমিনিন থেকে হোমো সেপিয়েন্সে জিনগত স্থানান্তর ঘটে। বর্তমান সময়ের মানুষের কাছে জিনের এই প্রাচীন সেই জিনের শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনীয়তা এখনও রয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো সংক্রমণের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে তাতে এসব জিনের প্রভাব রয়েছে।’
হোমো সেপিয়েন্সের সঙ্গে নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভার জিন আদান-প্রদান হয়েছে
নোবেল কমিটি বলেছে, ‘পেবোর মূল গবেষণাটি প্যালিওজেনমিক্স নামে একটি সম্পূর্ণ নতুন বৈজ্ঞানিক ডিসিপ্লিনের জন্ম দিয়েছে। তার গবেষণা জিনগত পার্থক্যগুলোকে উন্মোচিত করেছে যার মাধ্যমে বর্তমান মানুষকে বিলুপ্ত হোমিনিন থেকে আলাদা করে। তার আবিষ্কার আমাদের মানুষ্য প্রজাতির অনন্য হয়ে ওঠার কারণ অন্বেষণের ভিত্তি দিয়েছে।’
১৯৫৫ সালের ২০ এপ্রিল স্টকহোমে জন্ম নেয়া পেবোর বাবা-মা দুজনই ছিলেন বিজ্ঞানী। মা এস্তোনিয়ান বংশোদ্ভূত কারিনা পেবো ছিলেন একজন কেমিস্ট। আর এসভান্তের বাবা সুনে বার্গস্ট্রম ছিলেন একজন বায়োকেমিস্ট, যিনি ১৯৮২ সালে বেঙট স্যামুয়েলসেন ও জন আর ভেইনের সঙ্গে যৌথভাবে ১৯৮২ সালে চিকিৎসায় নোবেল পান।
এসভান্তে পেবো ১৯৮৬ সালে উপসালা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিএইচডি গবেষণার মূল বিষয় ছিল কীভাবে অ্যাডেনোভাইরাসের ই-নাইন্টিন (E19) প্রোটিন কীভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে পরিচালিত করে।
ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় তিনি কাজ করেছেন নিয়ান্ডার্থাল মানুষের জিন নিয়ে গবেষণা করে।
আগামী ডিসেম্বরে এসভান্তে পেবোর হাতে তুলে দেয়া হবে পুরস্কারের পদক, সনদ ও অর্থ।
তাপমাত্রা এবং স্পর্শের রিসেপ্টর আবিষ্কারের জন্য গত বছর নোবেল পুরস্কারের এই বিভাগে পুরস্কার পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড জুলিয়াস এবং লেবাননের আর্ডেম প্যাটোপোশিয়ান।