সাধারণভাবে জীবনের শেষ মৃত্যুতে। তবে সব প্রাণীর ক্ষেত্রে বিষয়টি সত্যি নাও হতে পারে, অন্তত জেলিফিশের একটি প্রজাতি মৃত্যুকে যেন দেখিয়ে চলছে বুড়ো আঙুল।
নতুন এক গবেষণা বলছে, টুরিটোসিস ডোরনি জেলিফিশ যৌন মিলনের পর বারবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে জৈবিকভাবে অমর হয়ে উঠেছে। আর এর ডিএনএ-তেই লুকিয়ে আছে শাশ্বত জীবনের রহস্যের উত্তর।
মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে আশ্চর্য এক জৈবিক কৌশল আয়ত্ত করেছে টুরিটোসিস ডোরনি। এ প্রজাতির প্রতিটি সদস্য আসলে একে অপরের ক্লোন। পলিপ (বর্ধনশীল কোষগুচ্ছ) হিসেবে জীবনের শুরু, সময়ের পরিক্রমায় তা জীবন্ত সত্তা মেডুসায় পরিণত হয়।
টুরিটোসিস ডোরনির আরেক বিস্ময়কর ক্ষমতা হলো, মেডুসা আহত, অসুস্থ বা বুড়িয়ে গেলে তা মরে যায় না। উল্টো ‘সিস্ট’ হয়ে যায়, যা একসময় পলিপে পরিণত হয়ে শুরু হয় নতুন চক্র।
এ প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘লাইফ সাইকেল রিভার্সাল’ বা জীবনচক্রের উল্টোগতি। বিষয়টি অনেকটা কোনো বয়স্ক ব্যক্তির ফের ভ্রূণে কিংবা একটি মুরগির ডিমে পরিণত হওয়ার মতো ঘটনা।
পিএনএএস জার্নালে সোমবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে স্পেনের ওভেইডাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। টুরিটোসিস ডোরনির ডিএনএ-এর সঙ্গে জেলিফিশের অন্য প্রজাতির ডিএনএর তুলনা করেছেন তারা। গবেষকরা দেখতে চেয়েছেন, ঠিক কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে টুরিটোসিস ডোরনি মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে সক্ষম।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, গবেষকেরা টুরিটোসিস ডোরনি বয়সের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ মেরামতে যুক্ত জিনের দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েছেন। তারা জীবনচক্রের উল্টোগতির প্রক্রিয়াও পর্যালোচনা করেছেন। এর মাধ্যমে টুরিটোসিস ডোরনির অমরত্বের পেছনে ভূমিকা রাখা আণবিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া গেছে।
গবেষণায় জেলিফিশের অন্য প্রজাতির সঙ্গে টুরিটোসিস ডোরনির বেশ কিছু পার্থক্য পাওয়া গেছে। গবেষকদের ধারণা, এগুলোই টুরিটোসিস ডোরনিকে অমর করতে ভূমিকা রাখছে। যেমন টুরিটোসিস ডোরনিতে পিওএলডি-১ এবং পিওএলডি-২ জিনের বেশি প্রতিলিপি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এগুলো টুরিটোসিস ডোরনির ‘নশ্বর আত্মীয়দের’ তুলনায় বিভিন্ন প্রোটিনকে বেশি প্রথিত করে রাখে। ফলে এই প্রজাতির জেলিফিশের ডিএনএ মেরামতের সক্ষমতা অনেক বেশি।
এ ছাড়া টেলোমারেজ এনজাইমকে নিয়ন্ত্রণের ডিএনএ সংখ্যাও এই প্রজাতিতে বেশি। বয়সের গতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রয়েছে এই এনজাইমের।
গবেষণার এসব ফলকে চমকপ্রদ বলছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তারা বলছেন, মানুষের অমরত্ব লাভের পথ এখনও অনেক বাকি। টুরিটোসিস ডোরনির জৈবিক কৌশলগুলো আমাদের বয়সকে বিশ্লেষণের পথ আপাতত অনেক বিস্তৃত করবে।