বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্লাস্টিক বোতলকে হীরা বানাতে চাইলে যা করতে পারেন

  •    
  • ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৪:১৬

এটি কোনো গালগল্প নয়, একেবারে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য। কৃত্রিমভাবে পৃথিবীতে বিশেষ পরিবেশ তৈরি করে প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট বা পেট-কে হীরায় পরিণত করেছেন বিজ্ঞানীরা।

সফট ড্রিংকস গলায় ঢেলে বোতলটি ছুড়ে ফেলছেন যত্রতত্র। আজকাল বোতলজাত পানির চাহিদাও দেদার। এসব বোতলের পানি খেয়েও আমরা বোতল ফেলে দিই যেখানে-সেখানে। এসব প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট (পিইটি বা পেট) বোতল পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিকা রাখছে। জলাধার করে তুলছে প্রাণের অনুপযুক্ত।

পৃথিবীর জন্য মহা উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে এই পেট বোতল। এগুলো যুগের পর যুগ ধরেও পচে না, ফলে তৈরি হয়েছে অক্ষয় জঞ্জালের বিভীষিকা।

এবার কোনো এক বিশেষ যানে চেপে চলুন পৃথিবী থেকে ২৮৮ কোটি কিলোমিটার দূরের গ্রহ ইউরেনাসে। হাতে সময় থাকলে সফট ড্রিংকস গলায় ঢালতে ঢালতে আরও খানিকটা এগিয়ে পৃথিবী থেকে প্রায় ৪৩২ কোটি কিলোমিটার দূরের গ্রহ নেপচুনেও ঢুঁ মারতে পারেন। এতক্ষণে পেট বোতলের ড্রিংকস শেষ হয়ে এলে সেটি ছুড়ে ফেলুন ইউরেনাস বা নেপচুনের বুকে।

কী ঘটবে সেখানে?

বিশেষ কোনো ব্যবস্থায় ওখানে কিছুদিন কাটাতে পারলে নিশ্চিতভাবে আপনার চোখ কপালে উঠবে। কারণ নিদারুণ অবহেলায় যে বোতলটি ছুড়ে ফেলেছিলেন, সেটি ততদিনে হীরা হয়ে উঠেছে!!

এটি কোনো গালগল্প নয়, একেবারে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য। ওই দুটি গ্রহের মতোই পরিবেশ কৃত্রিমভাবে পৃথিবীতে তৈরি করে প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেটকে হীরায় পরিণত হতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।

অনেক আগে থেকেই বিজ্ঞানীদের জানা ছিল, সৌরজগতের দুটি গ্রহ নেপচুন ও ইউরেনাসে রয়েছে হীরকখণ্ডের ছড়াছড়ি। এমনকি নিয়মিত সেখানে হীরার বৃষ্টিও হয়।

আমরা জানি, পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচণ্ড চাপ ও তাপে হাইড্রোকার্বন হীরায় পরিণত হয়। তবে ইউরেনাস ও নেপচুনে হীরা গঠনের প্রক্রিয়া একেবারেই আলাদা।

জার্মানি ও আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী ২০১৭ সালে ল্যাবরেটরিতে ওই গ্রহ দুটির মতো কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে পলিস্টিরিন (স্টাইরোফোম) থেকে ছোট হীরার খণ্ড তৈরি করতে সক্ষম হন। একে তারা নাম দিয়েছেন ন্যানো-ডায়মন্ড।

পাঁচ বছর পর তারা আবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এবার ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের অতি পরিচিত প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট (পিইটি বা পেট)। মিনারেল ওয়াটার বা সফট ড্রিংকসের বোতল তৈরিতে পেট প্লাস্টিকের বহুল ব্যবহার রয়েছে।

গবেষণার ফল শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক পিয়ার রিভিউ জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্সেসে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণাটি শুধু মহাকাশ নিয়ে আমাদের জ্ঞানভান্ডারকেই সমৃদ্ধ করবে না, একই সঙ্গে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে ন্যানো-ডায়মন্ড তৈরিতেও সহায়ক হবে।

গবেষক দলের প্রধান ও জার্মানির হেলমহোল্ট-জেনট্রুম ড্রেসডেন রোজেনডর্ফ গবেষণাগারের বিজ্ঞানী ডমিনিক ক্রাউস জানান, শুরুতে তিনি ও তার সহ-গবেষকরা পলিস্টিরিন (স্টাইরোফোম) থেকে ন্যানো-ডায়মন্ডস তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ এতে নেপচুন ও ইউরেনাসের পরিবেশের মতো সমানুপাতিক কার্বন ও হাইড্রোজেন বিদ্যমান।

তারা পলিস্টিরিনকে লাইন্যাক কোহেরেন্ট লাইট সোর্স নামের এক ধরনের উচ্চশক্তির এক্স-রে লেজার দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। ক্যালিফোর্নিয়ার এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সেলেটরি ল্যাবরেটরিতে এ পরীক্ষা চালানো হয়। পলিস্টিরিনকে লেজার দিয়ে আঘাত করার ফলে এর তাপমাত্রা বেড়ে ৫ হাজার কেলভিনে (৮ হাজার ৫৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে) পৌঁছায়। একই সঙ্গে একে ১৫০ গিগাপ্যাসক্যাল চাপে সংকুচিত করে ফেলা হয়। এ তাপ ও চাপ ইউরেনাস ও নেপচুনের ছয় হাজার মাইল অভ্যন্তরের চাপ ও তাপের সমান।

দ্রুত দুইবার লেজার দিয়ে আঘাতের ফলে আণুবীক্ষণিক হীরা তৈরি করতে পারলেও বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ একটি রাসায়নিক উপাদান এতে নেই। আর সেই উপাদানটি হলো অক্সিজেন। এ কারণেই এবারের গবেষণায় পেট প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।

পেট-এ হাইড্রোজেন ও কার্বনের পাশাপাশি অক্সিজেনের মিশ্রণও রয়েছে, যা ওই গ্রহ দুটির অভ্যন্তরের পরিবেশের আরও কাছাকাছি।

ক্রাউস বলেন, “ওই পরিবেশের রাসায়নিক অবস্থা খুবই জটিল ও প্রতিরূপ তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন। বিজ্ঞানীরা জানেন, এমন পরিস্থিতি তৈরির সময় যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। আমরা কিছু ক্ষেত্রে দেখছিলাম, অক্সিজেনের উপস্থিতি হাইড্রোজেন থেকে কার্বনকে আলাদা করতে ও হীরা তৈরিতে সাহায্য করে। তবে গবেষণায় উল্টো কিছুও ঘটতে পারত।’

তত্ত্বকে প্রমাণের জন্য ক্রাউস ও তার দল এক টুকরো পেট প্লাস্টিককে আগের মতোই অত্যধিক চাপ ও তাপের মধ্যে রাখেন। তবে এবার তারা যোগ করেছিলেন এক্স-রের ছোট কৌণিক বিচ্ছুরণ।

ক্রাউস বলেন, ‘আমরা দেখতে পেলাম, অক্সিজেনের উপস্থিতি হীরা তৈরিতে সাহায্য করছে, বাধা দিচ্ছে না। এটি থেকে বোঝা যায় ইউরেনাস ও নেপচুনে হীরার বৃষ্টি হওয়া সম্ভব। আমরা এও দেখেছি, উচ্চচাপ ও সময়ের সঙ্গে হীরার আকৃতি বড় হচ্ছে।’

তবে গবেষণাটির মূল বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য ছিল সৌরজগতের বরফময় দুই গ্রহ নেপচুন ও ইউরেনাসের চরম আবহাওয়ায় কী করে হীরার বৃষ্টি হয় সেটা জানা। ক্রাউস ও তার দলের ধারণা, এতদিন তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব বলে ধরে নেয়া বিশেষ ধরনের এক পানি তারা তৈরি করতে পেরেছেন।

বিশেষ এ পানির নাম সুপার-আয়নিক ওয়াটার। ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সুপার-আয়নিক ওয়াটার তরল ও কঠিনের মাঝামাঝি অদ্ভু ত এক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ ধরনের পানি দিয়েই নেপচুন, ইউরেনাসের মতো বরফময় গ্রহের ভূত্বকের আবরণ তৈরি হয়েছে।

পৃথিবীতে এর কোনো ব্যবহার না থাকলেও মহাকাশের অনেক বস্তুর অদ্ভু ত চৌম্বক ক্ষেত্র কেন থাকে সেটির ব্যাখ্যা এ থেকে পাওয়া যায়।

ক্রাউসের মতে, বিশালাকৃতির বরফময় গ্রহে ন্যানো ডায়মন্ড খুঁজে পাওয়ার অর্থ- ওই গ্রহের পরিবেশে সুপার-আয়নিক ওয়াটারের মাত্রা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষায় হীরার সঙ্গে যে সুপার-আয়নিক ওয়াটার তৈরি হয়েছে তার প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ পাইনি। তবে আমরা দেখেছি, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন থেকে কার্বন আলাদা হচ্ছে এবং গ্রহের ভেতর বিশুদ্ধ পানি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ওই গ্রহগুলোতে হীরার বৃষ্টির পাশাপাশি সুপার-আয়নিক ওয়াটার তৈরির সম্ভাবনাও থাকছে।’

এ বিভাগের আরো খবর