বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেন হাসছেন, জেনে হাসছেন তো?

  •    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২২ ১৭:৫৩

আমাদের মস্তিষ্ক ক্রমাগত অনুমান করতে থাকে পরে কী হবে ও অন্যদের উদ্দেশ্য কী। সার্বক্ষণিক এ প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই হাস্যরস বিকশিত হয়েছে। মানুষ তার প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে নিরীহ অসংগতিগুলো খুঁজে বের করে আনন্দ পায়। হাসি আমাদের অসংগতিগুলো শনাক্ত করার ক্ষমতার একটি সর্বজনীন লক্ষণ।

অট্টহাসি, মুচকি হাসি, ফিচকে হাসি- কত ধরনের হাসিই না আমাদের মুখে অহরহ খেলে যায়। আমরা কেন হাসি, সেটাও অনেকের কাছে মনে হতে পারে ‘হাস্যকর’ প্রশ্ন।

ঠিক আছে, এই প্রশ্ন শুনে মন খুলে হেসে নিন, কিন্তু তারপর একটু ভেবে বলুন তো- কেন আমরা হাসি?

সাধারণভাবে হাসির কারণ অতি সাধারণ মনে হলেও বাস্তবে এর তল পাওয়া খুবই কঠিন। সাধারণ হাসি মোটেই কিন্তু সাধারণ নয়; উল্টো এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুগভীর মনোবিজ্ঞান, জটিল স্নায়বিক ক্রিয়াকলাপ, এমনকি বেশখানিকটা দার্শনিকতাও।

আমরা সব সময় খুশির কারণে হাসি- তেমনটি মোটেই সত্যি নয়। গভীর দুঃখের মাঝেও আমরা ফিক করে হেসে ফেলতে পারি, অন্যের দুর্দশাও আমাদের মুখে হাসি ছড়িয়ে দিতে পারে, নিজের বিব্রতকর পরিস্থিতি আড়াল করতেও হাসির আশ্রয় নিতে পারি আমরা।

হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিস্তর জটিলতা নিয়ে সায়েন্টিফিকআমেরিকানে প্রকাশিত নিবন্ধের কিছুটা সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করা হয়েছে নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।

‘হাউ মেনি সাইকোলজিস্টস ডাজ ইট টেক… টু এক্সপ্লেইন আ জোক?’- এমন শিরোনামের বাংলা করা যেতে পারে একটি কৌতুকের ব্যাখ্যার জন্য কতজন মনোবিজ্ঞানীর দরকার?

মনোবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান জ্যারেট ২০১৩ সালে এই শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। এতে তিনি বলেছেন, বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি জানেন না মানুষ কেন হাসে।

এককথায় বলা চলে হাস্যরসের ধারণাটিই রহস্যময়। সবাই জানেন ও বোঝেন হাস্যরস কী, তবে একে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা বা এর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা কঠিন। হাস্যরস থেকে অট্টহাসি বা চাপা হাসির উদ্রেগ হতে পারে। নাটক, সিনেমা, কোনো ঘটনা, ছবি কিংবা শব্দ থেকে আমরা হাস্যরসের উপাদান পেতে পারি। নিরীহ কৌতুক থেকে শুরু করে, কড়া বিদ্রূপ, শারীরিক অঙ্গভঙ্গিও আমাদের মস্তিষ্ককে নাড়া দিয়ে যায়।

হাস্যরসের উৎস অনুসন্ধানে কিছু গবেষণা হয়েছে। বলাই বাহুল্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব উৎস আমাদের দৈনন্দিন জীবনকেন্দ্রিক।

শ্রেষ্ঠত্ব ও পরিত্রাণ

দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে পণ্ডিতরা ভেবেছেন, সব ধরনের হাস্যরসের একটি সাধারণ উপাদান রয়েছে। এই উপাদানের খোঁজ প্রথম করেছেন দার্শনিকেরা, পরে যোগ দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানীরা। মনোবিজ্ঞানীরা দার্শনিক ধারণাগুলোকে পরীক্ষামূলক ধারণায় রূপান্তর ঘটিয়েছেন।

হাস্যরস নিয়ে প্রাচীনতম তত্ত্বটি হলো, শ্রেয়তর বোধ থেকে কোনো মানুষ অন্যের দুর্ভাগ্যের মাঝে হাস্যরস খুঁজে পায় ও হাসে। প্লেটো থেকে শুরু করে অন্য গ্রিক দার্শনিকেরাও এ তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন।

এরপর আঠারো শতকে আসে পরিত্রাণের তত্ত্ব। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের দেয়া এ তত্ত্ব অনুসারে, হাসি মানুষকে নার্ভাস এনার্জি থেকে মুক্ত করে বা চাপ কমাতে সাহায্য করে।

ফ্রয়েড ব্যাখ্যা করেছেন, নিষিদ্ধ অশ্লীলতা, যৌনতাবিষয়ক বিদ্রূপগুলো কেন আমাদের কাছে মজাদার মনে হয়। এসব কৌতুকের চূড়ান্ত মুহূর্তে দৃশ্যত অনুপযুক্ত আবেগ দমনের চেষ্টা মানুষের থাকে না, উল্টো তা হাসির রূপ ধরে প্রকাশিত হয়।

হাস্যরসের তৃতীয় ব্যাখ্যা হলো, অসংগতি তত্ত্ব। মানুষ প্রত্যাশা ও বাস্তবতার অসংগতিতে হাসে। অসংগতি তত্ত্বের মতোই আরেকটি তত্ত্ব হলো, কোনো ব্যক্তি একটি আপাত অসংগতির অপ্রত্যাশিত সমাধান বের করে ফেললেও হাসতে পারেন। যেমন, একজন ব্যক্তি কোনো বক্তব্যের দ্বৈত অর্থ ধরে ফেললে সম্পূর্ণ নতুনভাবে সেটি আবিষ্কার করেন, এ সময় তার হাসি পায়।

মৃদু লঙ্ঘন

ওপরের ব্যাখ্যাগুলো থেকে অনেক কিছু পরিষ্কার, তবে এগুলো থেকে সব জবাব মেলে না। এসব তত্ত্ব সব ধরনের হাস্যরসের ব্যাখ্যা দেয় না।উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ওপরের ব্যাখ্যা স্ল্যাপস্টিকের আবেদনকে পুরোপুরি পরিষ্কার করে পারে না। স্ল্যাপস্টিক হলো ইচ্ছাকৃতভাবে করা কিছু আনাড়ি কমর্কাণ্ড অথবা বিব্রতকর ঘটনার ওপর ভিত্তি করে হাস্যকর কমেডি।

সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স জার্নালে ২০১০ সালে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের এ. পিটার ম্যাকগ্রা ও কেইলেব ওয়ারেন আগের তত্ত্বগুলোর সীমাবদ্ধতা দূর করতে ‘মৃদু লঙ্ঘন’ নামে নতুন একটি তত্ত্বের প্রস্তাব করেন।

ম্যাকগ্রা ও ওয়ারেনের প্রস্তাবিত তত্ত্ব অসংগতি তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত, তবে এর আওতা আরও বিস্তৃত।

তাদের মতে, একজন ব্যক্তি যখন স্বীকার করেন যে একটি নৈতিক, সামাজিক বা শারীরিক নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে, তবে এই লঙ্ঘনটি খুব আপত্তিকর, নিন্দনীয় বা বিরক্তিকর নয়; তেমন পরিস্থিতিও হাস্যরসের জন্ম দিতে পারে। অবশ্য নিয়ম লঙ্ঘনকে সব সময়েই ‘বড় সমস্যা’ হিসেবে দেখা লোকজন এ ধরনের রসিকতায় উল্টো বিরক্ত হতে পারেন।

উদাহরণ হিসেবে গির্জার একটি গল্প বিবেচনা করা যেতে পারে। সদস্য সংগ্রহের জন্য তারা বিশেষ অফার দিয়েছিল। প্রথম ছয় মাসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে র‍্যাফেল ড্র করে বিজয়ীকে একটি এসইউভি গাড়ি পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সবাই পরিস্থিতিটিকে অসংগতিপূর্ণ বলে ধরে নিয়েছে, শুধু অবিশ্বাসীরা এটি নিয়ে সহজেই হাসতে পেরেছেন।

বহুল প্রচলিত একটি বিষয় হচ্ছে, হাস্যরস হলো ট্র্যাজেডি প্লাস টাইম। ম্যাকগ্রা, ওয়ারেন ও তাদের সহকর্মীরা ২০১২ সালে সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স জার্নালে এ ধারণাটিকে সমর্থন করেন। গুরুতর দুর্ভাগ্যের স্মৃতি (যেমন একটি গাড়ি দুর্ঘটনা) যত বেশি সময় যায়, ততই মজাদার মনে হতে পারে।

ভৌগোলিক বা মানসিক দূরত্বও এমন পরিস্থিতি তৈরি করে। একটি পরীক্ষায়, স্বেচ্ছাসেবকরা অদ্ভুতুড়ে ছবি দেখে বিমোহিত হয়েছেন (যেমন এক ব্যক্তি তার নাকে আঙুল দিয়ে চোখ দিয়ে বের করেছে)। ছবিগুলো ফটোশপে তৈরি করা জানার পর তারা বিমোহিত হন।বিপরীতে, সাধারণ বিপত্তিকে (একজন ব্যক্তির দাড়ি বরফে জমে যাওয়ার ছবি) সত্যি বলে বিশ্বাস করার পর তারা বেশি হেসেছেন। ম্যাকগ্রার যুক্তি হলো, কোন জিনিস কতটা খারাপ এবং এটি কতটা দূরত্বে আছে তার মধ্যে ভারসাম্য ঠিক থাকলে একটা সর্বোত্তম কমিক পয়েন্ট পাওয়া যায়।

বিবর্তন তত্ত্ব

মৃদু লঙ্ঘনের ধারণাতেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি হাসির কারণ বর্ণনা করে, কিন্তু ব্যাখ্যা করে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের বিবর্তনীয় সাফল্যের পেছনে হাস্যরসের ভূমিকা রয়েছে। নিউ মেক্সিকো ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী গিল গ্রিনগ্রস বলেন, হাস্যরস ও হাসি প্রতিটি সমাজে, একই সঙ্গে বনমানুষ (এইপ) ও এমনকি ইঁদুরের মাঝেও রয়েছে। এই সর্বজনীনতা একটি বিবর্তনীয় ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়।

কোয়ার্টারলি রিভিউ অফ বায়োলজির ২০০৫ সালের ইস্যুতে নিউ ইয়র্কের বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির বিবর্তনবিদ ডেভিড স্লোয়েন উইলসন ও তার সহকর্মী ম্যাথিউ জার্ভেইস হাস্যরসের বিবর্তনমূলক সুবিধা ব্যাখ্যা করেছেন।

উইলসন ‘গ্রুপ সিলেকশন’ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা। এই তত্ত্বে মনে করা হয়, আমাদের মতো সামাজিক প্রাণী প্রাকৃতিক নির্বাচনের সময় এমন বৈশিষ্ট্যগুলো গ্রহণ করে যা শুধু ব্যক্তিদের নয়, পুরো গোষ্ঠীর টিকে থাকাকে সাহায্য করে।

উইলসন ও জারভেইস দুটি ভিন্ন ধরনের হাসির ক্ষেত্রে মানুষের গ্রুপ সিলেকশনের ধারণাটি প্রয়োগ করেন। স্বতঃস্ফূর্ত, সংবেদনশীল, আবেগপ্রবণ ও অনিচ্ছাকৃত হাসি হলো আমোদ ও আনন্দের একটি প্রকৃত অভিব্যক্তি। একই সঙ্গে এগুলো মজা করার প্রতিক্রিয়া; এটি শিশুর হাসিতে বা সুড়সুড়ি দেয়ার সময় দেখা যায়।

আনন্দের এ প্রদর্শনকে ডুসেন হাসি বলা হয়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে গুইলেম বেঞ্জামিন আমান্দ ডুসেন দ্য বুলোন প্রথম এমন হাসির বর্ণনা দেন। বিপরীতে, নন-ডুসেন হাসি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত হাসির আবেগপূর্ণ অনুকরণ নয়। মানুষ একে একটি ঐচ্ছিক সামাজিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন, কথোপকথন মজার না হলেও মানুষ হাসির ব্যবহার করে।

উইলসন ও জারভেইস বলেন, মুখের অভিব্যক্তি ও তাদের নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুপথ দুই ধরনের হাসির পার্থক্য গড়ে দেয়। ডুসেন হাসির উদ্ভব হয় মস্তিষ্কের স্টেম ও লিম্বিক সিস্টেমে (যেটি আবেগের জন্য দায়ী)। নন-ডুসেন হাসি ফ্রন্টাল কর্টেক্সের প্রি-মোটোর এলাকা (পরিকল্পনা অংশগ্রহণ করে যে অংশ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।উইলসন ও জারভেইসের মতে, দুই ধরনের হাসি ও এর পেছনের স্নায়বিক প্রক্রিয়া বিভিন্ন সময়ে বিবর্তিত হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত হাসির শিকড় প্রাথমিক পর্যায়ের প্রাইমেটদের খেলার মধ্যেও রয়েছে এবং এর সঙ্গে প্রাণীর কণ্ঠস্বরের মিল লক্ষ করা যায়। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিদিনকার কথোপকথন, অবজ্ঞা ও উপহাসের উদ্ভবের সঙ্গে ধীরে ধীরে ‘নিয়ন্ত্রিত হাসিও’ বিকশিত হয়ে থাকতে পারে।

গবেষকরা মনে করছেন, প্রাইমেটদের হাসি ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যায়ে জৈবিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে। ২০ লাখ থেকে ৪০ লাখ বছর আগে মানুষের পূর্বপুরুষদের মধ্যে মানসিক ও সামাজিক সংযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে ‘ডুসেন হাসি’।

সামাজিক নিয়মের অযৌক্তিক লঙ্ঘনকে ‘প্রোটোহিউমার’ বলছেন উইলসন ও জারভেইস। এ ধরনের হিউমার গ্রুপের কোনো সদস্যের হাসিকে অন্যদের জন্য স্বস্তিদায়ক, নিরাপদ ও হালকা আবেগের পথ প্রশস্ত করে দেয়।

পরবর্তীকালে মানব পূর্বপুরুষ আরও পরিশীলিত জ্ঞানীয় ও সামাজিক দক্ষতা অর্জনের পর ডুসেন হাসি ও প্রোটোহিউমার সব জটিল পরিস্থিতিতে হাস্যরসের ভিত্তি হয়ে ওঠে। এ পর্যায়ে কৌশলগত, হিসেবি, এমনকি উপহাসমূলক ও আক্রমণাত্মক নন-ডুসেন হাসিরও উদ্ভব ঘটে।

হাস্যরস ও হাসি যৌনসঙ্গী নির্বাচন এবং আগ্রাসী মনোভাব অবদমনে ভূমিকা রাখে বলেও মনে করেন অনেক গবেষক।

ভুল বের করা

ইনসাইড জোকস: ইউজিং হিউমার টু রিভার্স ইঞ্জিনিয়ার দ্য মাইন্ড শিরোনামের বইটি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। এর রচয়িতা আমেরিকার ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি অফ ব্লুমিংটনের ম্যাথিউ এম হার্লি, টাফটস ইউনিভার্সিটির ড্যানিয়েল ডেনেট ও পেনসিলভিনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির রেজিনাল অ্যাডামস জুনিয়র।

হার্লি তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন, ‘হাস্যরস কোনো না কোনো ভুলের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রতিটি শ্লেষ, কৌতুক ও হাস্যরসাত্মক ঘটনার মধ্যে বোকাসোকা কারও ভুল থাকে বলে মনে হয়।’সবাই ওই ভুলটি উপভোগ করেন। তবে এখানে প্রশ্ন হলো, ভুলটি কোনো অপছন্দের ব্যক্তি বা প্রতিদ্বন্দ্বী করে থাকলে মজা করা স্বাভাবিক, কিন্তু প্রিয়জনের ভুলও কেন আমরা উপভোগ করি?

হার্লির মতে, ভুল করাকে আমরা উপভোগ করি না, বরং ভুলটিকে চিহ্নিত করার বিষয়টি উপভোগ করি।

হার্লির পর্যবেক্ষণ, আমাদের মস্তিষ্ক ক্রমাগত অনুমান করতে থাকে পরে কী হবে ও অন্যদের উদ্দেশ্য কী। সার্বক্ষণিক এ প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই হাস্যরস বিকশিত হয়েছে। মানুষ তার প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে নিরীহ অসংগতিগুলো খুঁজে বের করে আনন্দ পায়। হাসি আমাদের অসংগতিগুলো শনাক্ত করার ক্ষমতার একটি সর্বজনীন লক্ষণ। এটি একটি চিহ্ন, যা আমাদের সামাজিক মর্যাদা উন্নত করে এবং আমাদের প্রজনন অংশীদারদের আকৃষ্ট করে।

কৌতুক (জোক) এটি একটি ‘অতি স্বাভাবিক’ উদ্দীপনা, যা যৌন আনন্দেরও বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ক্ষেত্রে ভুল ধরার ফলে এ আনন্দ অনুভূত হয়। ২০১৩ সালে হার্লি মনোবিজ্ঞানী জ্যারেটকে বলেছিলেন, মানুষ কী কারণে হাসে সে তত্ত্বটি আসলে অনুমানেরও বাইরের। এটি হাস্যরসের জ্ঞানীয় মূল্য ও টিকে থাকার ভূমিকাকেও ব্যাখ্যা করে।তার পরও গ্রিনগ্রস ইনসাইড জোকসের একটি পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছেন, এই তত্ত্বটিও অসম্পূর্ণ। এটি কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিলেও আরও কিছু বিষয় অমীমাংসিত রাখে। যেমন, ‘কেন আমাদের মেজাজ বা অন্যান্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে হাস্যরস ও উপভোগের উপলব্ধি পরিবর্তিত হয়?’

ইতালিয়ান মনোবিজ্ঞানী ও হাস্যরস নিয়ে গবেষণায় যুক্ত জার্নাল আরআইএসইউর (রিভিসতা ইতালিয়ানা দি স্তুদি সুলুমোরিসমো) সম্পাদক জোভান্নাতোনিও ফোরাবস্কোও বিষয়টিতে একমত।

তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি।’

যে প্রশ্নের উত্তর নেইঅনেক প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের রবার্ট প্রোভাইন তার ‘কারেন্ট ডিরেকশনস ইন সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স’ বইয়ে দেখিয়েছেন, মানুষ একা যতটা হাসে, অন্যেদের সঙ্গে তার ৩০ গুণ বেশি হাসে। প্রোভাইন ও তার ছাত্ররা একটি গবেষণায় গোপনে মানুষকে তাদের দৈনন্দিন কাজের সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসতে দেখেছেন।

ফোরবস্কো দেখেছেন, হাস্যরস ও হাসির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

তিনি বলেন, ‘হাসি একটা সামাজিক ঘটনা। হাস্যরস ছাড়াও হাসির উদ্রেগ হতে পারে। হাস্যরস যে সব সময় হাসি উৎপাদন করবে, তেমনটা নয়।’

তিনি এমন কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যেখানে একজন ব্যক্তির অবমাননা করা হয় বা যেখানে একটি পর্যবেক্ষণ মজার মনে হলেও তা থেকে হাসি পায় না।

আরেকটি আলোচনার বিষয় হলো, যৌন আকর্ষণ ও প্রজনন সাফল্যে হাস্যরসের ভূমিকা। গবেষকরা দেখেছেন, পুরুষের হাস্যকর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং নারীদের ক্ষেত্রে হাস্যরসের প্রশংসা করার সম্ভাবনা বেশি। এর অর্থ হলো, পুরুষ মনোযোগ পেতে এ জন্য বেশি প্রতিযোগিতা করে এবং নারীরা বেছে নেয়।

ফোরাবস্কো বলেন, ‘কোনো একক তত্ত্ব দিয়ে হাস্যরসের রহস্য বের করার কথা ভাবাটা বাড়াবাড়ি। আমরা এর অনেকগুলো দিক অনুভব করতে পারি। এখন নিউরোসায়েন্স গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করতে সাহায্য করছে। এতে তা দিয়ে কোনো একক সারমর্ম বের করা সম্ভব নয়। যেমন করে ভালোবাসার একক কোনো সংজ্ঞা দেয়া যায় না। আমরা প্রেমিকের হৃদস্পন্দনের ওপর প্রেয়সীর দৃষ্টির প্রভাব পরিমাপ করতে পারি। তবে এর মাধ্যমে ভালোবাসার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। হাস্যরসের বিষয়টিও একই রকম।’

তবু কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য এখন বিজ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত। ফোরাবস্কোর মতে, এর একটি হলো অসংগতির উপলব্ধি।

তিনি বলেন, ‘এটা জরুরি কিন্তু পর্যাপ্ত নয়, কারণ কিছু অসংগতি রয়েছে যেগুলো হাস্যকর নয়। যে কারণে অন্য কী উপাদান আছে সেগুলো আমাদের খুঁজে দেখতে হয়। আমার মনে হয়েছে, অসংগতি সম্পূর্ণরূপে সমাধান না করে উপশম করা প্রয়োজন।’

অন্যান্য জ্ঞানীয় ও মনস্তাত্ত্বিক উপাদান থেকে কৌতুকের অনুসন্ধান করা যেতে পারে। ফোরাবস্কোর মতে, এগুলোর মধ্যে আগ্রাসন, যৌনতা, বিকৃতমনা ও ছিদ্রান্বেষী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো কৌতুকে থাকতেই হবে তেমনটা নয়, তবে সবচেয়ে মজার কৌতুকগুলো এসব প্রসঙ্গ নিয়েই হয়। একইভাবে, মানুষ ওইসব রসিকতায় সবচেয়ে হাস্যরস পায়, যেগুলো ‘খুব বুদ্ধিদীপ্ত ও দুষ্টপ্রকৃতির।’

ফোরাবস্কো বলেন, ‘হাস্যরস কী? এটা হয়তো ৪০ বছর পর আমরা জানতে পারব।

এ বিভাগের আরো খবর