ভারতের সবচেয়ে বড় নিলামে মুখোমুখি অবস্থানে দেশটির দুই ধনকুবের গৌতম আদানি এবং মুকেশ আম্বানি। ফাইভ-জি এয়ারওয়েভ মালিকানা প্রশ্নে সাত দিন ধরে চলা নিলাম দুই ধনকুবেরের মধ্যে ডিজিটাল ভবিষ্যতের ওপর আধিপত্যের লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি করেছে।
নিলামে মোট ৭২ গিগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্লকে ছিল। ভারতের টেলিকমমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রস্তাবের ৭১ শতাংশ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
আম্বানির রিলায়েন্স-জিও, ভোডাফোন আইডিয়া ও ভারতী এয়ারটেল এবং আদানির ডেটা নেটওয়ার্কের কাছে প্রায় ১৯ বিলিয়ন মূল্যের দর ডেকেছে ভারত সরকার।
ভারতীয় বিশ্লেষণাত্মক রেটিং গবেষণা সংস্থা সিআরআইএসআইএল-এর গবেষণা বলছে, ২০২১ সালের মার্চে শেষ নিলামের পর থেকে মোট বিড দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে এটি।
যখন আর-জিও ১১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্পেকট্রাম কেনার দরদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, তখন আদানি গোষ্ঠী মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল। বাকি বিডগুলো এসেছে ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়া থেকে।
ভারতী এয়ারটেল এবং আর-জিও প্যান-ইন্ডিয়া এয়ারওয়েভের জন্য বিড করেছে বলে জানা গেছে। সেখানে নগদ-সঙ্কুচিত ভোডাফোন আইডিয়া শুধু অগ্রাধিকার খাতে ব্যয় করেছে।
আর-জিও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দেশব্যাপী ফাইবার উপস্থিতির কারণে জিও স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ফাইভ জি রোলআউটের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
আদানি গ্রুপ প্রাইভেট স্পেকট্রামের ওপর বিড করেছে, যা নির্দিষ্ট এলাকা যেমন নৌবন্দর বা বিমানবন্দরগুলোতে অ্যাক্সেসযোগ্য হবে। এটি এমন একটি খাত যেখানে কোম্পানি ইতোমধ্যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে।
আম্বানির আর-জিও ভারতের ইন্টারনেট বাজারে অতিপরিচিত নাম। অন্যদিকে আদানি বিশাল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন নৌবন্দর, বিমানবন্দর এবং বিদ্যুৎ খাতে। সম্প্রতি তিনি বিল গেটসকে হটিয়ে বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার সম্পদের পরিমাণ ১১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
যদিও আদানি গ্রুপ বলছে, তারা ব্যক্তিগত স্পেকট্রামের বাইরে বড় বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী নয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আদানি এখন সে পথেই হাঁটছে।
এই পদক্ষেপটি ভোডাফোন আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেলকে বিচলিত করে তুলবে বলে মনে করছে অনেকে। এই টেলিকম সংস্থাগুলো এখনও দাম কমানোর সময় আর-জিও'র বিঘ্নিত ২০১৬ এন্ট্রির সময় শুরু হওয়া শুল্ক যুদ্ধ থেকে ভুগছে৷ এখন তারা আরও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবে।
ভারতে ফাইভ জির প্রবর্তন উচ্চ গতির ইন্টারনেটের একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে, যা সেকেন্ডে ভিডিও ডাউনলোডের সুযোগ দেবে। ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত ডিভাইসগুলোতে এটি ব্যবহার করা যাবে।
উচ্চ গতির অফারের সঙ্গে ভারতীয় টেলিকম কোম্পানিগুলো ফাইভ জি-এর জন্য উচ্চ মূল্য চার্জ করে লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও তারা এখন পর্যন্ত টু জি বা থ্রি জি প্ল্যানের তুলনায় ফোর জি প্ল্যানের জন্য বেশি চার্জ করা থেকে বিরত আছে।
জাপানিজ আর্থিক হোল্ডিং সংস্থা নোমুরার হিসাব বলছে, ফাইভ জি ট্যারিফ প্ল্যান সম্ভবত টেলিকম কোম্পানিগুলোকে উচ্চ রাজস্বের দিকে ঠেলে দেবে।
‘ভারত ধীরে ধীরে ফাইভ জিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটার অন্যতম কারণ উচ্চ মূল্যের সম্ভাবনা। কারণ ভারতের সামগ্রিক স্মার্টফোন বেসের প্রায় ৭ শতাংশ ফাইভ জি ব্যবহারে উপযুক্ত।’
এবারের নিলাম থেকে আয় ২০১০ সাল থেকে আগের সাত রাউন্ডের তুলনায় সর্বোচ্চ। এটি এমন একটি সময়ে সরকারের আর্থিক ঘাটতি কাটাতে সাহায্য করবে, যখন ভারতে রাজস্ব ও ব্যয়ের ব্যবধান মাইনাস ৬.৪ শতাংশে দাঁড়াবে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ভারতের টেলিযোগাযোগ বিভাগ আগামী ২০ বছরে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করবে।
সরকার আগস্টের মধ্যে এয়ারওয়েভ বরাদ্দ শেষ করবে। অক্টোবরের শুরুতে চালু হবে ফাইভ জি পরিষেবা।