স্তন্যপায়ী প্রাণীর উষ্ণ রক্তে বিবর্তনের মুহূর্ত খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, সময়টা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক পরে এবং ঘটেছিল খুব দ্রুত।
কানের ভেতর মাইনাসকুল টিউব গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২৩৩ মিলিয়ন বছর আগে স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে উষ্ণ রক্তের বিবর্তন ঘটেছিল। সময়টা বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়ে ১৯ মিলিয়ন বছর পর।
কানের ভেতর অর্ধবৃত্তাকার ক্যানেলগুলো এন্ডোলিম্ফ নামক একটি সান্দ্র তরল দিয়ে পূর্ণ থাকে। এই তরল ক্যানেলের আস্তরণে থাকা ছোট চুলগুলোকে সুড়সুড়ি দেয়। এ পর্যায়ে চুলগুলো মস্তিষ্কে বার্তা পাঠায়; মানে কীভাবে শরীরকে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় তার নির্দেশনা দেয়।
অন্যান্য তরলের মতো এন্ডোলিম্ফ যত বেশি গরম হয়, তত বেশি দৌড়াতে থাকে। এ জন্য অবশ্য অর্ধবৃত্তাকার ক্যানেলগুলোকে তাদের আকৃতি পরিবর্তন করতে হয়। এতে তরল তার কাজ করতে পারে অনায়াসে।
ইক্টোথার্মিক বা ঠান্ডা রক্তযুক্ত প্রাণীদের মধ্যে কানের তরলটি ঠান্ডা থাকে। এখানে তরল গাঢ়, অনেকটা গুড়ের মতো হয়। প্রবাহিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় আরও বড় জায়গার। অন্যদিকে এন্ডোথার্মিক বা উষ্ণ রক্তযুক্ত প্রাণীদের জন্য তরলটি বেশ পাতলা, দরকার হয় না বড় জায়গার।
এই তাপমাত্রাভিত্তিক অবস্থা ক্ষুদ্র, অর্ধবৃত্তাকার ক্যানেলগুলোকে সেই মুহূর্তটি চিহ্নিত করার জন্য একটি নিখুঁত স্থান নির্দেশ করে। সেই মুহূর্তটি বলতে বোঝানো হচ্ছে, যখন প্রাচীন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ঠান্ডা রক্ত গরম হয়ে যায়। গবেষকরা ২০ জুলাই নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এসব লিখেছেন।
গবেষণার সহপ্রধান লেখক রোমেন ডেভিড বলেন, ‘অর্ধবৃত্তাকার ক্যানেলগুলো সাধারণত জীবাশ্ম জীবের গতিবিধির ভবিষ্যদ্বাণী করতে ব্যবহৃত হতো। তবে বায়োমেকানিকসগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মনে হয়েছে, শরীরের তাপমাত্রা অনুমান করতেও এগুলো ব্যবহার করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এর কারণ অর্ধবৃত্তাকার ক্যানেলের ভেতর থাকা তরল তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিরাপের মতো (গাড়) হয়ে যায়; যা এর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এন্ডোথার্মিতে রূপান্তরের সময় সর্বোত্তম পারফরম্যান্স রাখার জন্য রূপতাত্ত্বিক অভিযোজন প্রয়োজন ছিল। আমরা স্তন্যপায়ী পূর্বপুরুষদের মধ্যে তাদের ট্র্যাক করতে পারি।’
এই বিবর্তনীয় পরিবর্তনের সময় আবিষ্কার করার জন্য গবেষকরা ৩৪১টি প্রাণীর কানের ভেতর তিনটি ক্যানেলের নমুনা পরিমাপ করেন। ২৪৩টি জীবিত প্রজাতি এবং ৬৪টি বিলুপ্ত প্রজাতি ছিল গবেষণায়।
দেখা গেছে, ৫৪টি বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী ২৩৩ মিলিয়ন বছর আগে উষ্ণ রক্তযুক্ত প্রাণীদের জন্য উপযুক্ত সংকীর্ণ অভ্যন্তরীণ কানের ক্যানেলের কাঠামো তৈরি করেছিল।
এ গবেষণার আগে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সাইনোডন্ট থেকে উষ্ণ রক্তহীনতা পেয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে। মানে এক দল আঁশযুক্ত ইঁদুরসদৃশ টিকটিকি সব জীবন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রথম আবির্ভাবের সময় ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে।
যা-ই হোক, নতুন অনুসন্ধানগুলো এটায় পরামর্শ দেয় যে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা তাদের প্রাথমিক পূর্বপুরুষদের থেকে প্রত্যাশিতভাবে আরও স্পষ্টভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। এ কঠোর পরিবর্তন আশ্চর্যজনকভাবে দ্রুত ঘটেছে।
গবেষণার সহপ্রধান লেখক রিকার্ডো আরাউজো বলেন, ‘এটি বর্তমান বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার বিপরীতে। গবেষণায় আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেছে, এন্ডোথার্মি অধিগ্রহণটি ভূতাত্ত্বিক পরিপ্রেক্ষিতে এক মিলিয়ন বছরেরও কম সময়ের মধ্যে খুব দ্রুত ঘটেছে।
‘এটি কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে ক্রমান্বয়ে ঘটেছে। প্রক্রিয়া ধীর ছিল না যেমনটি আগে ভাবা হয়েছিল। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো বিপাকীয় পথ এবং পশমের উৎপত্তির মাধ্যমে ট্রিগার করার সময় এটি দ্রুত অর্জিত হয়েছিল।’
আরও গবেষণায় অন্যান্য উপায়ে ফলাফলগুলো নিশ্চিত করতে হবে। তবে গবেষকরা বলেছেন, তাদের কাজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিবর্তন সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করবে।
গবেষক দলের জ্যেষ্ঠ লেখক কেনেথ অ্যাঞ্জিয়েলসিক বলেন, ‘স্তন্যপায়ী এন্ডোথার্মির উৎপত্তি হলো জীবাশ্মবিদ্যার একটি বড় অমীমাংসিত রহস্য।’