লাসভেগাসে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি সম্মেলন সিইএসে আমরা আছি। তবে ২০২২ সাল নয়, কনফারেন্সটি ২০৩০-এর কোনো একদিনের। একটি বড় স্মার্টফোন কোম্পানির নতুন স্মার্টফোনের উন্মোচন দেখতে ভিড় জমাচ্ছে মানুষ।
কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্চে আসলেন এবং নতুন ফোন ‘নয়রো’-এর ঘোষণা দিলেন। প্রতি সেকেন্ডে নয়রো মোবাইল কুইন্টিলিয়ন অপারেশন সম্পন্ন করতে পারে, যা ২০২০ সালের স্মার্টফোনের তুলনায় হাজারগুণ। এর ব্যাটারির চার্জও থাকে ১০ দিন।
একজন সাংবাদিক সিইওকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘কোন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে একটি মোবাইল ফোন এত ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে?’
তখন সিইও উত্তর দেন, 'আমরা ল্যাবে তৈরি মানব নিউরন ব্যবহার করে একটি জৈবিক কম্পিউটার চিপ তৈরি করেছি। এই জৈবিক চিপগুলো সিলিকন চিপের থেকে ভালো। কারণ তারা ব্যবহারকারীর ব্যবহারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজের অভ্যন্তরীণ কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে পারবে।
অপর একজন সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কম্পিউটার চিপে মানুষের মস্তিষ্কের উপাদান ব্যবহার করায় কি কোনো নৈতিক উদ্বেগ নেই?’
আসলে ওপরে আমরা যে ঘটনাটি পড়লাম, তার দৃশ্যকল্প পুরোই কাল্পনিক। কিন্তু এই প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদের আজ হোক বা কাল হোক, হতে হবে।
কারণ ২০২১ সালেই ডিসেম্বরে মেলবোর্নভিত্তিক কর্টিকাল ল্যাব নিউরনের (মস্তিষ্কের কোষ) কৃত্রিম উপায়ে বৃদ্ধি করে একটি কম্পিউটার চিপের সঙ্গে সফলতার সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলস্বরূপ তারা একটি হাইব্রিড চিপ তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে কারণ সিলিকন ও নিউরন একই ভাষা বোঝে, আর তা হলো বিদ্যুৎ।
সিলিকন কম্পিউটারে বৈদ্যুতিক সংকেত ধাতব তারের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে বিভিন্ন উপাদানকে একত্রিত করে। মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সিন্যাপ্সের (স্নায়ুকোষের সংযোগস্থল) মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
কর্টিকাল ল্যাবসের ডিশব্রেইন সিস্টেমে এই নিউরনগুলো সিলিকন চিপগুলোতেই জন্মায় এবং এরা সিস্টেমের মধ্যে তারের মতো কাজ করে বিভিন্ন উপাদানকে যুক্ত করে।
এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হলো যে নিউরনগুলো তাদের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে, প্রয়োজনে সংখ্যায় বাড়তে পারে, প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, এমনকি সিস্টেমের প্রয়োজনে মারাও যেতে পারে।
ডিশব্রেইন প্রচলিত এআই সিস্টেমের থেকে দ্রুত আর্কেড গেম পং খেলতে ও শিখতে পারে।
এর ডেভেলপাররা বলছেন, এমন কিছুই আগে কখনো ছিল না। এটি সম্পূর্ণ নতুন কিছু। সিলিকন ও নিউরনের সংমিশ্রণ।
প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে, আজকের কম্পিউটার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেসব জটিল যুক্তি সমাধান করতে পারে না, তাদের হাইব্রিড চিপ সেসব কাজ অনায়াসেই করতে পারবে।
এই ধরনের নিউরন থেকে কম্পিউটার তৈরির আরেকটি স্টার্ট-আপ কোনিকু বলছে যে তাদের প্রযুক্তি কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, সামরিক প্রযুক্তি ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাবে।
যদিও এই ধরনের কম্পিউটার এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
সার্কিট থেকে বেরিয়ে এসে এই সিলিকন কম্পিউটারই বিশ্বকে নতুন রূপ দান করেছে। এরপরও প্রাণীর মস্তিষ্কের তুলনায় তা এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি বিড়ালের মস্তিষ্ক একটি আইপ্যাডের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি ডেটা সঞ্চয় করতে পারে এবং তথ্য ১০ লক্ষ গুণ দ্রুত ব্যবহার করতে পারে।
মানুষের মস্তিষ্ক শুধু ২০ ওয়াট শক্তি খরচ করে, যা দিয়ে কেবল একটি বাতি জ্বালানো যায়।
অথচ আধুনিক ডেটা স্টোরেজ সেন্টারে একটি মানুষের মস্তিষ্কে থাকা একই পরিমাণ ডেটা সঞ্চয় করতে ৩৪টি কয়লা চালিত প্ল্যান্টের প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যেতে হবে।
কর্টিকাল ল্যাবস বলছে, ইঁদুরের নিউরন সেলের থেকে মানুষের নিউরন সেলযুক্ত চিপ দ্রুত শিখতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে কোনো দাতাকে তার মস্তিষ্কের কোষ দিতে হবে না। স্টেমসেলকেই মস্তিষ্কের নিউরন কোষে পরিণত করা হবে। এখন প্রশ্ন একটাই, স্টেমসেল দাতারা কি জানছেন, শেষমেশ তাদের কোষের স্থান হচ্ছে নিউরাল কম্পিউটারে।