বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাটে-মাঠের সঙ্গে ‘ক্লিক’-এ মিলছে গরু-খাসি

  •    
  • ৭ জুলাই, ২০২২ ২০:৩৪

‘যতই দিন যাচ্ছে, ততই কোরবানির পশুর কেনাকাটা ডিজিটাল ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হচ্ছে মানুষ। দৈনিক বিকিকিনি হচ্ছে কোটি টাকার বেশি। তবে অনলাইন বেচাকেনা এখনো লাভজনক না। ক্রেতাদের আস্থা বাড়লে আগামিতে পশু কোরবানির বিকল্প হবে এসব সেবা প্রতিষ্ঠান।’

শুধু মাঠেই নয়। কম্পিউটার ক্লিকেও এখন মিলছে কোরবানির পশু। হাটের গন্ডি পেরিয়ে মাউসের এক ক্লিকে দেখা মিলছে গরু-খাসি। গেল কয়েক বছরে বদলে গেছে খামারের চিরচেনা দৃশ্য। সামনা-সামনি দেখার পরিবর্তে, ওয়েবসাইট কিংবা ফেইসবুক পেইজে পশুর ছবি-ভিডিও দেখছেন ক্রেতা। সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাৎক্ষণিক। তাদের সেবা দিচ্ছে এক ঝাঁক স্মার্ট কর্মী।

তরুণদেরই অনলাইন মার্কেট প্লেস নিয়ে আগ্রহ বেশি। এক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল হাট ইকোসিস্টেমকেও কাজে লাগাচ্ছে অনেকেই। বিভিন্ন এলাকার ৭০ জন খামারিকে এক করেছে আইসিটি বিভাগ। শুধু পশু বেচাকেনা নয়, কোরবানি ও মাংস প্রক্রিয়াজাত-সহ দেয়া হবে হোম ডেলিভারি সেবা। এসব সেবা কেউ ফ্রি দিচ্ছেন, আবার কম-বেশি ২০ শতাংশ সার্ভিস নিচ্ছেন অনেকে। বেশিরভাগ গরু আসে দেশের নানা প্রান্ত থেকে, আবার বিদেশি অনেক জাতের ব্রিড হচ্ছে বাংলাদেশেই।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাদিক এগ্রোর কর্ণধার মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘যতই দিন যাচ্ছে, ততই কোরবানির পশুর কেনাকাটা ডিজিটাল ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হচ্ছে মানুষ। দৈনিক বিকিকিনি হচ্ছে কোটি টাকার বেশি। তবে অনলাইন বেচাকেনা এখনো লাভজনক না। ক্রেতাদের আস্থা বাড়লে আগামিতে পশু কোরবানির বিকল্প হবে এসব সেবা প্রতিষ্ঠান।’

বেঙ্গল মিটের কোরবানি প্রজেক্টের সমন্বয়কারী নূর মোহাম্মদ বলেন, করোনার সময় চলাচলে বিধি-নিষেধ থাকায় গত দুই বছর কোরবানির ঈদে মানুষ গ্রামে যেতে পারেনি, যার ফলে অনলাইনে পশু বিক্রি বেড়েছিল। এবার কোনো বিধি-নিষেধ না থাকায় অনেকেই গ্রামে চলে যাচ্ছে। তাই অনলাইনে বিক্রি কম বলে মনে হচ্ছে।

গত দুই বছর অনলাইন হাটে গরু কিনলেও এবার সরাসরি হাটে গিয়েই কিনতে চান ঢাকার শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা সামাদ মোল্লা।

তিনি বলেন, ‘গত দু্ই বছর করোনার কারণে বাইরে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা হয়নি। তবে ঈদে অনলাইনে গরু দেখে অর্ডার করে যে রকম দেখেছিলাম সেরকমই পেয়েছিলাম। এমনকি গত বছর অনলাইনে শুধু গরু কিনেছি সেটা নয়। কোরবানিও করানো হয়েঝে অনলাইনে। সব কিছু সম্পন্ন করে মাংস বাসায় পৌঁছে দেন তারা। তবে এ বছর হাটে গিয়ে গরু কিনব। কোরবানির পশু চোখে দেখে কেনার মধ্যে স্বস্তি আছে।’

ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দুই দিন। কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য রাজধানীতে প্রস্তুত মোট ১৮টি হাট। পাশাপাশি পশু বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেও।

কোরবানিয় পশু বেচাকেনায় দখল নিচ্ছে কর্পোরেট দুনিয়া। নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে পশুর অর্ডার আসছে এখানেও। করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সাড়াও মিলছে বেশ। ছবি-ভিডিও তো আছেই, সাথে গরু কিংবা খাসি কোন প্রক্রিয়ায় প্রসেস করা হবে, কি ওষুধ বা খাবার ব্যবহার হয়েছে, জীবিত প্রাণীর ওজন কত, সব তথ্যে সমৃদ্ধ হয়েছে ওয়েবসাইট।

অনেকেই অনলাইনে পশু কিনতে আগ্রহী। বলছেন, বাজারে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়তে হয়।

অনেকেই আবার সময় স্বল্পতার কারণে হাটে যেতে চান না। আর তাই বেছে নিয়েছেন অনলাইন মার্কেটপ্লেস।

ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পশুর ওজন, রং, দামের বিবরণসহ হোম ডেলিভারির সুবিধা দিচ্ছে অনেক অনলাইন ব্যবসায়ী। দাম পরিশোধ করা যাবে ডেভিড বা ক্রেডিট কার্ডে। কেউ চাইলে মোবাইল আর্থিক পরিসেবার মাধ্যমেও পরিশোধ করতে পারছেন পশুর দাম। প্রতিটি জেলায় আলাদা আলাদা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পশু বিক্রি করা হচ্ছে। যা তত্ত্ববধায়ন করছে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর।

মৎস্য এবং প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মার্কেট প্লেসের সংখ্যা ৪৬৮টি। এর মধ্যে ঢাকায় সংযুক্ত রয়েছে ১৩৬টি হাট। চট্টগ্রামে ৮৭টি। খুলনায় ৩৪টি। রাজশাহীতে ৬১টি, বরিশালে ৫০টি, সিলেটে ২৯টি, রংপুরে ৪৫টি, ময়মনসিংহে ২৬টি হাট পরিচালনা করা হচ্ছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে উদ্বোধন করা হয় কোরবানির পশু বেচাকেনার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ডিজিটাল হাট’ (www.digitalhaat.gov.bd)।

দেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলেও অনলাইনে পশু বিক্রির সুযোগ থাকলেও শহরের মতো তেমন সাড়া নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রতি উপজেলায় অনলাইনে পশু বিক্রির আয়োজন করলেও নেই প্রয়োজনীয় প্রচারণা। তবে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অনলাইন নির্ভর পশুর খামার করে সফল হচ্ছেন।

উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার কারণে গেলো বছর অনলাইন পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগ্রহ ছিলো বেশি। কিন্তু এবার বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল থাকায়, সরাসরি কেনায় আগ্রহী ক্রেতারা।

২০১৫ সাল থেকেই অনলাইনে শুরু হয়েছে কোরবানীর পশু কেনাবেচা। শুরুর দিকে বিষয়টিতে অনেকের আগ্রহ না থাকলেও ধীরে ধীরে এটিই এখন সবচেয়ে বড় মার্কেটে পরিণত হচ্ছে। পশুর হাটের নানা ঝক্কি ঝামেলা এড়িয়ে যারা কোরবানির পশু কিনতে চান তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকছেন এই মাধ্যমে।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলে আয়োজন করা হচ্ছে পশুর হাট। প্রতিটি জেলাতেই সরকারি উদ্যোগেও থাকছে একই রকম আয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন খামারী, ফার্ম নিজেদের নামে পৃথক পৃথকভাবেও অনলাইনে পশু বিক্রি করছেন কোরবানি উপলক্ষে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এ বছর এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। কোরবানিতে পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার। সে হিসাবে এ বছর চাহিদার চেয়ে বেশি রয়েছে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৯টি গবাদি পশু।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গতবছর অনলাইন হাট থেকে বেচাকেনা হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার গরু-ছাগল ও অন্যান্য পশু। টাকার অংকে দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার পশু বিক্রি হয়। এবার তা কমে যেতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর