ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন শেয়ার করেন ব্যবহারকারীরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব প্রতিবেদনের বিস্তারিত পড়ার আগ্রহ থাকে না নেটিজেনদের। অনেকেই কেবল শিরোনাম পড়ে ধারণাপ্রসূত একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শিরোনাম দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উল্টোদিকে বুদ্ধিবৃত্তিক মান যাদের বেশি তারা ঘটনাটিকে তলিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। খবরের শিরোনাম দেখেই তারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেন না।
পার্সোনালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকোলজি বুলেটিনে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি।
‘ফ্যালিবিলিটি স্যালিয়েন্স ইনক্রিজেস ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি: ইমপ্লিকেশনস ফর পিপলস উইলিংনেস টু ইনভেস্টিগেট পলিটিক্যাল মিসইনফরমেশন’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটির গবেষক ছিলেন জোনাহ কোটকে, কারনা শুমান, টেনেলে পোর্টার ও ইলসে স্মাইলো-মরগান।
ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি বলতে নিজের জ্ঞানের সীমা সম্বন্ধে সচেতন থাকা ও ভুল হওয়ার আশঙ্কাকে মেনে নেয়ার ক্ষমতাকে বোঝায়। যাদের এ ক্ষমতা বেশি তারা আর্থরাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি কম শত্রুতা পোষণ করেন। নতুন তথ্য শিখতেও তারা বেশি আগ্রহী হন।
আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গের স্নাতকের ছাত্র ও গবেষক দলের অন্যতম সদস্য জোনাহ কোটকে বলেন, ‘রাজনৈতিক ভুল তথ্য একটি সমস্যা। এটি রাজনৈতিক বিভাজনে অবদান রাখে। কী কারণে মানুষ তার কাছে আসা তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই করেন, সেটি ভালোভাবে বোঝা তাই গুরুত্বপূর্ণ৷’
কোয়েটকে ও তার সহকর্মীরা ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি ও রাজনৈতিকভাবে অভিযুক্ত সংবাদ শিরোনাম যাচাইয়ের জন্য তিনটি গবেষণার একটি সিরিজ পরিচালনা করেছেন।
প্রথম গবেষণায় ২৮৯ জন অংশগ্রহণকারীকে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে রায়টের কিছু সঠিক ও ভুয়া সংবাদের শিরোনাম দেখানো হয়। এরপর দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্বাচিতদের সংবাদগুলোর শিরোনাম যাচাই করতে বলা হয়। আর চাইলে সেগুলো যাচাই না করার সুযোগও রাখা হয়।
কোটকে ও তার সহকর্মীরা দেখেছেন, যাদের যাচাই করতে বলা হয়েছে তারা দেখেছেন সঠিক সংবাদের শিরোনাম ভুয়া বা মিথ্যা সংবাদের শিরোনামের তুলনায় বেশ খানিকটা নিঁখুত।
কোটকে বলেন, ‘আমরা দেখলাম, অনলাইন আর্টিকেলের ক্ষেত্রে ভুল তথ্য যাচাই করা (ফ্যাক্ট চেক বা বিকল্প সোর্স খোঁজা) কার্যকর ও খুব একটা সময়সাপেক্ষ নয়।’
দ্বিতীয় গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৮৫ জন অংশগ্রহণকারীকে এমন একটি ভুয়া শিরোনাম পড়তে বলা হয়, যা তাদের আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বা অসংগতিপূর্ণ ছিল। অর্থাৎ কারও রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে ওই শিরোনামটি ছিল সাংঘর্ষিক, আবার কারও মতাদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এরপর তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, সংবাদটি তারা যাচাই করবেন কি না। শিরোনামের উৎস পরীক্ষা বা সম্পূর্ণ নিবন্ধটি পড়বেন কি না।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি উচ্চতর ছিল তারা সংবাদটি যাচাইয়ের আগ্রহ জানিয়েছেন। মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন, তারা সেটি করতে চেয়েছিলেন।
তৃতীয় গবেষণায় কোটকে ও তার দল ৩১৫ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে দৈবচয়নের ভিত্তিতে করা কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি ও যাচাই করার প্রবণতার মাঝে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করেন।
এতে অংশগ্রহণকারীদের তিনটি আপাতদৃষ্টিতে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়, যেগুলোর উত্তর সাধারণত ভুল আসে। যেমন, একটা প্রশ্ন ছিল ‘পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে কোন পর্বতশৃঙ্গ সবচেয়ে দূরবর্তী?’ অধিকাংশ মানুষই এর উত্তর দেন মাউন্ট এভারেস্ট, তবে সঠিক উত্তর হচ্ছে চিম্বোরাসো।
কোটকে বলেন, ‘ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি বা আমরা যা জানি সেটা ভুলও হতে পারে। রাজনৈতিক ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাচাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর সেটি করতে হলে নিজেদের জ্ঞান সম্বন্ধে আমাদের সম্যক ধারণা থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।’
গবেষকরা বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যেমন, শিক্ষা, মুক্তমনস্কতা ও রাজনৈতিক অভিযোজন। এগুলো ইন্টেলেকচুয়াল হিউমিলিটি ও খবরের শিরোনাম যাচাই করার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে যেকোনো গবেষণার মতো এ গবেষণাতেও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল।
কোটকে বলেন, ‘একটা বড় দিক হচ্ছে, পরীক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে করা হয়েছে। যে কারণে বাস্তব জগতে একই ফল পাওয়া যায় কি না সেটি দেখতে হবে গবেষকদের।’