বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডেঙ্গু-জিকা আক্রান্তকে কেন বেশি কামড়ায় মশা

  •    
  • ৪ জুলাই, ২০২২ ১৪:১৩

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে জিকা ও ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রোগ দুটির জন্য দায়ী ভাইরাসের বিশেষ ভূমিকা আছে। এই ভাইরাস কেবল আক্রান্তকে কাবু করেই ক্ষান্ত হয় না, তার দিকে আরও মশাকে আকৃষ্ট করতেও সাহায্য করে।

অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক ভাইরাসের রয়েছে বিস্ময়কর নানান ক্ষমতা। এগুলো পোষকের দেহের গন্ধ পরিবর্তনের ক্ষমতাও রাখে। আর এই পরিবর্তিত গন্ধে আকৃষ্ট হয় মশার মতো প্রাণী। অনেক দূর থেকেও এরা ঠিকঠাক খুঁজে নিতে পারে আক্রমণের নিশানা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে জিকা ও ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রোগ দুটির জন্য দায়ী ভাইরাসের বিশেষ ভূমিকা আছে। এই ভাইরাস কেবল আক্রান্তকে কাবু করেই ক্ষান্ত হয় না, তার দিকে আরও মশাকে আকৃষ্ট করতেও সাহায্য করে।

পিআর-রিভিউ জার্নাল সেল-এ প্রকাশিত এক গবেষণার বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচার। এতে বলা হয়, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ সৃষ্টিকারী দুটি ভাইরাস তাদের পোষকের দিকে আরও বেশি মশা আকৃষ্ট করতে কিছু উপাদান নির্গত করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, জিকা ও ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলো নিজেদের সুবিধার জন্য তাদের পোষকের দেহের গন্ধে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। পরিবর্তিত এই গন্ধ রক্তপিপাসু মশাকে করে তোলে আরও আগ্রাসী।

এর মাধ্যমে নতুন নতুন মশার মাধ্যমে আক্রান্তের দেহ থেকে নিরোগ দেহে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় ভাইরাস। গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট গং চেং বলেন, ‘কেবল জিকা ও ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নয়, মশাবাহিত অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ভাইরাস একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করতে পারে।’

আক্রান্তের শরীরে উৎকট গন্ধ

লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের রোগ-নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ জেমস লোগান বলেন, ‘কিছু রোগ তাদের পোষকের গন্ধ বদলাতে পারে। ভাইরাস এবং অণুজীব নিজেদের সুবিধার জন্য বিবর্তিত হয়ে এমনটা করে থাকে।

‘উদাহরণস্বরূপ মোজাইক ভাইরাসে সংক্রামিত শসাগাছ থেকে এক ধরনের উপাদান নির্গত হয়, যা কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। এসব পতঙ্গের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদকে সংক্রামিত করে ভাইরাস। ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবীগুলো তাদের পোষকদের শরীরের গন্ধ পরিবর্তনের মাধ্যমে মশাকে কাছে টানতে প্রলুব্ধ করে।’

জিকা এবং ডেঙ্গু ভাইরাসগুলোও মশাকে আকৃষ্ট করতে একই কৌশল বেছে নেয় কি না তা দেখতে চেং এবং তার সহকর্মীরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান। এ জন্য সংক্রামিত এবং নিরোগ ইঁদুরগুলোকে আলাদা ঘরে রেখেছিল তারা।

তারপর দুটি কক্ষের ইঁদুরের শরীরের গন্ধ মশা-ভর্তি চেম্বারে ছড়িয়ে দেয়া হয়। দেখা গেছে এরপর ৬৫-৭০ শতাংশ মশা সংক্রামিত ইঁদুরের ঘরের দিকে হামলে পড়েছে।

প্রতিটি ঘরের বাতাসের রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংক্রামিত ইঁদুরগুলো থেকে নির্গত গন্ধ মাত্রা ছিল বেশি উৎকট। এর মধ্যে অ্যাসিটোফেনন নামে একটি বায়ুবাহিত উপাদানও পাওয়া গেছে।

গবেষকরা দেখেছেন, জিকা বা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ইঁদুর সুস্থ ইঁদুরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি অ্যাসিটোফেনন তৈরি করে। আর এই উপাদান তাড়িত করেছিল মশাদের।

ত্বকে অ্যাসিটোফেনন উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার স্বাভাবিক। তবে তাদের সংখ্যা সাধারণত ত্বকের কোষ থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোটিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু বা জিকায় আক্রান্ত ইঁদুরের দেহে এই প্রোটিন তৈরির জন্য দায়ী জিনটির সক্রিয়তা কমে যায়।

সংক্রামিত ইঁদুরের ত্বকে অ্যাসিটোফেনন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে, যা ইঁদুরগুলোর গন্ধকে বেশি উৎকট করার পাশাপাশি রক্তপিপাসু মশাকে আকৃষ্ট করে।

গবেষকরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির বগলের ঘাম নিয়েও পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা গেছে, যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশি অ্যাসিটোফেনন তৈরি হচ্ছে। মশাও তাদের দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে।

গবেষণায় সংক্রামিত ইঁদুরকে ভিটামিন ‘এ’ খাইয়ে (সাধারণত ত্বকের অবস্থার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়) বেশ ভালো ফল মিলেছে। দেখা গেছে এতে অ্যাসিটোফেননের পরিমাণ কমে আসে।

মালয়েশিয়ায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমাতে ভিটামিন এ-এর ব্যবহার পরীক্ষার উদ্যোগও নিয়েছেন গবেষকরা।

এ বিভাগের আরো খবর