প্রচলিত জাতের মিষ্টি আলুর চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ এবং দুই থেকে তিন গুণ বেশি ফলনের নতুন তিনটি জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
দুই বছর গবেষণার পর তারা বাউ মিষ্টি আলু-৪, বাউ মিষ্টি আলু-৫ এবং বাউ মিষ্টি আলু-৬ উদ্ভাবন করেছেন।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হাসান খান রবিন। তার সঙ্গে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ড. জোবেদাতুন নাহার।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানে না। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি, সিসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আছে।
দেশে এই আলুর গড় উৎপাদন বাড়াতে এবং কৃষকপর্যায়ে চাষাবাদ লাভজনক করতে ২০২০ সালের শুরুতে ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের অর্থায়নে তিনটি নতুন জাত নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ধারাবাহিক গবেষণায় জাত উদ্ভাবনে সফলতা মিলেছে।
গবেষক জোবেদাতুন নাহার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত যেকোনো মিষ্টি আলুর চেয়ে উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলোতে রয়েছে অধিক পুষ্টিমান। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘জাতগুলোর জীবনকাল স্বল্প এবং একটি জাত সারা বছর চাষযোগ্য হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবেন।’
অধ্যাপক আরিফ হাসান খান রবিন বলেন, ‘আবাদি জমি ছাড়াও একটি জাত সারা বছর সবজি হিসেবে ছাদবাগানে, গ্রামাঞ্চলে বাড়ির আশপাশে, পুকুর পাড়ে বা যেকোনো জায়গায় স্বল্প পরিসরে চাষ করা সম্ভব।
‘ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করায় বীজ সংগ্রহ করতে বা কিনতে তেমন অর্থ ব্যয় হবে না। তাই অল্প খরচে এই ফসল চাষ করে কৃষকরা অনেক লাভবান হতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন জাতগুলোর চারা এখন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ও কিশোরগঞ্জে উৎপাদন করা হচ্ছে। এর ফলন প্রচলিত গড় ফলনের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি। বাংলাদেশে শুধু বারি-১২ জাত সারা বছর চাষ করা যায়। তবে এর আবাদ ও ফলন বেশ কম।
‘বাউ মিষ্টি আলু-৪ অক্টোবর থেকে নভেম্বরে লাগাতে হবে এবং ফলন পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে। বাউ মিষ্টি আলু-৫ শীত ছাড়াও বছরের অন্য সময় চাষের উপযোগী আর বাউ-৬ আগাম জাতের। আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে মাঠ দিবসের মাধ্যমে আমরা এসব জাতের চারা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করব।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়। প্রতি হেক্টরে গড়ে ফলন হয় ১০ টন। আর একজন মানুষ বছরে গড়ে মিষ্টি আলু খায় ১ কেজি ৭৫ গ্রাম।