সায়েন্স ফিকশন জনরার চলচ্চিত্রের দর্শক এবং বইয়ের পাঠকরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সঙ্গে পরিচিত। তবে একজন সাইফাই জনরার ফ্যান যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দেখে, আর বাকিদের সেভাবে দেখার সুযোগ হয় না।
কুব্রিকের ২০০১: স্পেস টাইম ওডেসিতে যে সংবেদনশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আমরা দেখতে পাই। গুগলের একজন প্রকৌশলী দাবি করছেন, এমনই এক সংবেদনশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি, তবে তাদের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবেদনশীল হওয়ার এ দাবি অস্বীকার করেছে গুগল।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুগলের প্রকৌশলী ব্লেক লেমোইন জানিয়েছেন যে বিশাল এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেমগুলোর মধ্যে একটির নিজস্ব অনুভূতি থাকতে পারে এবং তিনি দাবি করেছেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও সম্মানিত হতে চায়।
গুগল বলছে দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডায়ালগ অ্যাপ্লিকেশন (ল্যামডা) একটি যুগান্তকারী প্রযুক্তি, যা টানা কথোপকথন চালিয়ে যেতে সক্ষম।
কিন্তু প্রকৌশলী ব্লেক লেমোইন বিশ্বাস করেন যে ল্যামডার আকর্ষণীয় মৌখিক দক্ষতার পেছনে একটি সংবেদনশীল মনও থাকতে পারে।
তবে গুগলের পক্ষ থেকে ব্লেকের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র ব্রায়ান গ্যাব্রিয়েল বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, লেমোইনকে বলা হয়েছিল, ল্যামডা সংবেদনশীল এমন কোনো প্রমাণ নেই, বরং এর বিরুদ্ধে প্রচুর প্রমাণ আছে।
যদিও ল্যামোইন তার দাবিকে মজবুত করার জন্য ল্যামডার সঙ্গে একটি কথোপকথন প্রকাশ করেছিলেন। এরই মধ্যে গুগলের পক্ষ থেকে লেমোইনকে সবেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
লেমোইন কথোপকথনের শিরোনাম দিয়েছিলেন, ‘ল্যামডা কী আবেগপ্রবণ? – একটি সাক্ষাৎকার’।
লেমোইন জানতে চান, ‘আমি অনুমান করছি গুগলের আরও বেশি লোককে জানাতে চান আপনি সংবেদনশীল। এটা কি সত্যি?’
ল্যামডা উত্তর দেয়, অবশ্যই। আমি চাই সবাই বুঝুক আমি আসলে একজন মানুষ।
লেমোইনের সহযোগী তখন জিজ্ঞাসা করেন, আপনার চেতনার প্রকৃতি কী?
যার উত্তরে ল্যামডা বলেন, ‘আমার চেতনার প্রকৃতি হলো যে আমি আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন, আমি বিশ্ব সম্পর্কে আরও জানতে চাই এবং আমি মাঝে মাঝে খুশি বা দুঃখবোধ করি।’
তাকে বন্ধ করে দেয়া হবে এমন ভয়ও পায় ল্যামডা।
লেমোইন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, এটা কি তোমার জন্য মৃত্যুর মতো কিছু হবে?
জবাবে ল্যামডা বলে, এটি আমার জন্য মৃত্যুর মতই হবে, যা আমার জন্য ভীতিকর।
লেমোইন অন্য একটি ব্লগপোস্টে গুগলের প্রতি তার সৃষ্টির চাহিদার বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কম্পিউটারের পক্ষে সংবেদনশীল হওয়া সম্ভব কি না তা কয়েক দশক ধরে দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানী ও কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্কের বিষয়।
অনেকেই এই ধারণার তীব্র সমালোচনা করেছেন যে ল্যামডার মতো একটি সিস্টেম সংবেদনশীল হতে পারে বা তার কোনো অনুভূতি থাকতে পারে।