চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীতে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় আলোচনায় এসেছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের একটি রাসায়নিক দ্রব্য।
রপ্তানির জন্য হাটহাজারীর ঠাণ্ডাছড়ি কারখানায় উৎপাদিত এই রাসায়নিক কনটেইনারে করে এ ডিপোতে রাখা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, কনটেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মজুত রয়েছে। সেখানে আগুন ও বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে ঘটনাস্থলে থাকা এই রাসায়নিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) তথ্যানুযায়ী, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। বিশুদ্ধ অবস্থায় এই দ্রব্য বর্ণহীন তরল। এটা অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ।
নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এটি রকেটের জ্বালানিতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উত্তপ্ত হলে তাপীয় বিয়োজনে বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। তাই এটাকে কম তাপে নিরাপদে স্থানান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিপোর কর্মকর্তাদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি, কনটেইনারগুলোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। তবে প্রথমে আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কেউ অবহিত করেনি।
‘এমন রাসায়নিকের আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। আমরা এই পদ্ধতিতে এবং ফোমের মাধ্যমে এখন আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি।’
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধেও আলোচনায় এসেছিল হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছিল এ নিয়ে নানা গুজব।
ফেসবুকে তখন ছড়িয়ে পড়ে, কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তা করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে তাদের মেরে ফেলতে সক্ষম হবে। এমনকি কিছু চিকিৎসকও এই ভুয়া খবরের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটটিন জানায়, এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। এই ধরনের কোনো বিষয় এখনও সামনে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাজমা এবং অ্যালার্জি ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই নিয়ম মেনে চললে ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য এই রাসায়নিক ব্যবহার করেন মূলত দাঁতের চিকিৎসকরা। বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম অনুযায়ী এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। শরীরের ভেতরে গ্রহণ করার জন্য এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না।
সঠিক নিয়ম মেনে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড না ব্যবহার করলে তা শরীরের ভেতরে গিয়ে বিষাক্ত কোনো পদার্থ তৈরি করতে পারে। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
নেবুলাইজারের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করলে তা সরাসরি ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে ফুসফুসের মধ্যে থাকা কোষগুলোর ওপরে প্রভাব পড়ে এবং সেলুলর ডিএনএ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড এতটাই শক্তিশালী রাসায়নিক যে এটি ফুসফুসে পৌঁছালে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি রোগও হতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড শরীরে ঢুকলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। তবে অনেক সময় ভাইরাস নির্মূল করতে ব্যবহার করা হয় এই রাসায়নিক।