বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মৌমাছি হয়ে গেল ‘মাছ’!

  •    
  • ৪ জুন, ২০২২ ১৮:১৯

আদালত বলেছে, শামুককে মাছের মর্যাদা দেয়ার অতীত নজিরের মাধ্যমে বলা যায়, একটি মাছের জন্য সাঁতার কাটা বাধ্যতামূলক কোনো শর্ত নয়। আর এ জন্যই মৌমাছিকেও মাছ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

মধুমক্ষিকা বা মৌমাছি আমাদের অতি পরিচিত এক পতঙ্গ। বাংলাপিডিয়ায় মৌমাছির বর্ণনায় বলা হয়েছে, এই পতঙ্গ ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের নির্যাস সংগ্রহ করে এবং তা থেকে অর্ধতরল মিষ্টি, মধু প্রস্তুত করে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এই সংজ্ঞা এখন আর ধোপে টিকবে না। ওই রাজ্যে চার প্রজাতির মৌমাছিকে ‘মাছ’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে আদালত। এ জন্য অবশ্য পানিতে বসবাসের শর্ত চাপানো হয়নি, আগের মতোই মৌচাকে থেকেই এই ‘মর্যাদা’ উপভোগ করতে পারবে এরা।

ক্যালিফোর্নিয়ার আপিল আদালতের দেয়া আদেশ অনুযায়ী, বাম্বল মৌমাছির চারটি প্রজাতিকে আর পতঙ্গ হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তাদের মাছ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে।

আপিল আদালতের তিন বিচারকের বেঞ্চ গত মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। ফলে বাম্বল মৌমাছির চারটি প্রজাতি ক্রচ, ফ্র্যাঙ্কলিনস, ওয়েস্টার্ন এবং সাকলির কুকু ওই রাজ্যে আইনিভাবে মাছের মর্যাদা অর্জন করেছে।

শুনতে অবাক লাগলেও এই আদেশের উদ্দেশ্য, অতিবিপন্ন এই চার প্রজাতির মৌমাছিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা।

এই চার প্রজাতিকে ২০১৮ সালে ‘বিপন্ন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তবে তাতে খুব একটা কাজ হয়নি।

ক্যালিফোর্নিয়ার বিপন্ন প্রজাতি আইনে স্থলভাগের অমেরুদণ্ডী প্রাণী সুরক্ষার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট নয়। এতে কেবল পাখি, স্তন্যপায়ী, মাছ, উভচর, সরীসৃপ বা উদ্ভিদের স্থানীয় প্রজাতি সম্পর্কে পরিষ্কার সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ফলে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে এই সুরক্ষার আওতায় আনা যায়নি বিপন্ন মৌমাছিকে।

এমন অবস্থায় ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যালমন্ড অ্যালায়েন্স, ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাসোসিয়েশন অফ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাডভাইজারস, ক্যালিফোর্নিয়া সাইট্রাস মিউচুয়াল, ক্যালিফোর্নিয়া কটন জিনার্সসহ কয়েকটি কৃষিস্বার্থ রক্ষা গ্রুপ মৌমাছিকেও সুরক্ষা আইনের আওতায় আনার দাবিতে আদালতে মামলা করে।

তাদের অভিযোগ ছিল, ক্যালিফোর্নিয়া বিপন্ন প্রজাতি আইনে কোনো পোকামাকড়কে বিপন্ন বা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। এর কারণ, আইন অনুযায়ী পোকামাকড় বিপন্ন বন্যপ্রাণীর তালিকাভুক্ত নয়।

এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক হয়েছে আদালতে। একটি মাছ কেন মাছ হয়ে ওঠে সে বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে ৩৫ পৃষ্ঠাজুড়ে। এর আগে ১৯৮০ সালে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় স্থান দেয়ার জন্য মাটিতে বসবাস করা ট্রিনিটি ব্রিস্টল শামুককেও মাছ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। সেই উদাহরণও পর্যালোচনায় এনেছেন বিচারকেরা।

আদালত বলেছে, শামুককে মাছের মর্যাদা দেয়ার অতীত নজিরের মাধ্যমে বলা যায়, একটি মাছের জন্য সাঁতার কাটা বাধ্যতামূলক কোনো শর্ত নয়। আর এ জন্যই মৌমাছিকেও মাছ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

বিচারকরা আদেশে লিখেছেন, ‘এখানে মূল প্রশ্নটি হলো স্থলজ অমেরুদণ্ডী প্রাণী বাম্বল মৌমাছি মাছের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে কি না। আমাদের উপসংহার হলো এটা পড়ে।’

তবে মৌমাছিকে মাছের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টিকে আক্ষরিকভাবে ‘জলজ মেরুদণ্ডী প্রাণী’ হিসেবে না নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছে আদালত। তারা বলছে, মৌমাছির এ মর্যাদা একটি ‘শব্দগত পুনর্বিন্যাস’।

বিচারপতি রোনাল্ড রবি তার মতামতে লিখেছেন, ‘আমরা সাধারণত শব্দগুলোকে তাদের প্রচলিত এবং সাধারণ অর্থ দিয়ে ব্যাখ্যা করে থাকি। তবে আদালত একটি শব্দের একটি প্রায়োগিক সংজ্ঞা দান করেছে, আমরা বাস্তব চাহিদার ভিত্তিতে শব্দের পুনর্বিন্যাস করেছি। কাজটি করার সময় আমরা উদারভাবে সব দিক পর্যালোচনা করেছি।’

অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের এতদিনেও সুরক্ষা আইনের আওতায় না আনার সমালোচনাও করেছেন বিচারকেরা। তারা বলছেন, আইনপ্রণেতারা বাড়তি কষ্ট এড়াতেই এতদিনে ‘মাছ’-এর সংজ্ঞার পরিসর বিস্তৃত করেননি।

এ বিভাগের আরো খবর