হাতে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ কফি নিয়ে তাতে চুমুক না দিলে হয়তো আপনার দিনই শুরু হয় না। আর এই অভ্যাসটিই কমিয়ে দিতে পারে আপনার মৃত্যুঝুঁকি।
প্রতিদিন কফি পানের অভ্যাস মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, যারা পরিমিত পরিমাণে প্রতিদিন কফি পান করেন, আর তাতে সামান্য চিনি মেশান, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি যারা কফি পান করেন না তাদের তুলনায় কম।
দ্য অ্যানালস অফ ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে সোমবার প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। আর এতেই জানা গেছে এমন তথ্য।
যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্ক থেকে সংগৃহীত ডেটার উপর ভিত্তি করে গবেষণাটি করা হয়েছে। ব্রিটেনের মানুষের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের একটি ডেটাবেস এটি।
সাত বছর ধরে ৩৭ থেকে ৭৩ বছর বয়সী ১ লাখ ৭০ হাজার জনেরও বেশি লোকের জীবনধারা এবং খাদ্যতালিকাগত তথ্য বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা।
গবেষণায় একটি দলকে প্রতিদিন দেড় কাপ থেকে সাড়ে তিন কাপ কফি পান করানো হয়। তাদের কফিতে এক চা চামচ চিনিও মেশানো হয়। এতে দেখা গেছে, গবেষণার সময় যারা কফি পান করেননি তাদের তুলনায় কফি পানকারীদের মৃত্যুঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম।
আর যারা চিনি ছাড়া কফি পান করেছেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৬ থেকে ২১ শতাংশ কম ছিল।
যারা প্রতিদিন প্রায় তিন কাপ কফি পান করেছেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে কম ছিল বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে।
এতে আরও দেখা গেছে, যারা ক্যাফেইন ছাড়া এবং ক্যাফেইনযুক্ত উভয় ধরনের কফিই পান করেছেন তাদের জন্য মৃত্যুর ঝুঁকি কম ছিল।
তবে যারা কফিতে কৃত্রিম মিষ্টি মিশিয়ে পান করেন তাদের জন্য গবেষণাটি প্রযোজ্য নয়।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং গবেষণাটি যেখানে প্রকাশিত হয়েছে সেই জার্নালের উপ-সম্পাদক ড. ক্রিস্টিনা উই বলেছেন, ‘এটা দারুণ একটা ব্যাপার। খুব কম জিনিসই আছে যা আপনার মৃত্যুহার ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেয়।’
কফি খেলে কেন মৃত্যুঝুঁকি কমে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এরিক গোল্ডবার্গ বলেছেন, ঠিক কী কারণে মানবদেহের জন্য কফি এত উপকারী তা বিজ্ঞানীরা এখনও জানতে পারেননি। তবে তারা ধারণা করছেন, কফিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কারণে মৃত্যুঝুঁকি কমে।
তিনি বলেন, ‘গরম কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটিই সম্ভবত কফি পানের স্বাস্থ্যকর দিক।’
আরও একটি কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেন, ‘কফি পানকারীরা সাধারণত স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করেন। তারা ক্যাফেইনের কম স্বাস্থ্যকর উৎস যেমন- এনার্জি ড্রিংকের পরিবর্তে এক কাপ কফি বেছে নেন।’
গোল্ডবার্গ বলেন, ‘আপনি যদি মাউন্টেন ডিউ বা কোকাকোলা বা এই ধরনের কোনো পানীয় নেন তবে এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চিনি মেশানো থাকে। এর বিপরীতে কফি স্বাস্থ্যকর পানীয়।’
ওহিওর ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর হিউম্যান নিউট্রিশনের নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান বেথ জাওরনি বলেছেন, মানবদেহে অনেক ক্ষতিকর উপাদান আছে, যা কোষের ক্ষতি করে। এসব ক্ষতিকর উপাদান হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কফিতে থাকা উচ্চ পরিমাণের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এসব ক্ষতিকর উপাদান ভেঙে ফেলে। ফলে মানবকোষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। তাই ডায়েটিশিয়ানরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার এবং পানীয়ের পরামর্শ দেন।