বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মঙ্গলে কবে ঘর বাঁধবে মানুষ

  •    
  • ২৪ মে, ২০২২ ১৪:৫৯

মানুষ মঙ্গলে যত বেশি অক্সিজেন তৈরি করতে পারবে, তত পৃথিবী থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কমবে। লাল গ্রহটিতে সফরে যাওয়া এবং সেখানে বসবাসও সহজ হতে থাকবে।

পৃথিবীর নিকট প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলে অদূর অভিষ্যতে বসতি গড়ার স্বপ্ন দেখছে মানুষ। প্রাণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পানি ও অক্সিজেনের কিছুটা উপস্থিতি এই স্বপ্নকে আরও উসকে দিচ্ছে।

ধরা যাক পৃথিবী থেকে কোনো এক নভোযানে চড়ে এই মুহূর্তে আপনি পৌঁছালেন ২২ কোটি ৫০ লাখ কিলোমিটার দূরের (গড় দূরত্ব) লাল গ্রহটিতে। এরপর জীবনধারণের জন্য প্রথমেই দরকার হবে পানি, খাবার, আশ্রয় এবং অতি অবশ্যই অক্সিজেন।

পৃথিবীর বাতাসে আমরা যে অক্সিজেন পাই তা মূলত আসে গাছপালা ও বিশেষ ধরনের কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে। তবে মনে রাখা দরকার, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনই একমাত্র গ্যাস নয়, এমনকি বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণও খুব বেশি নয়।

পৃথিবীর বাতাসে মাত্র ২১ শতাংশ হলো অক্সিজেন। এই বাতাসের বেশির ভাগ অর্থাৎ ৭৮ শতাংশই হলো নাইট্রোজেন গ্যাস। বেঁচে থাকার জন্য আমরা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বুকভর্তি বাতাস টেনে নেই। এরপর ফুসফুস কেবল অক্সিজেন ছেঁকে রেখে বাকি সব গ্যাস প্রশ্বাসের সাহায্যে উগরে দেয়।

পৃথিবীর বাতাসে অক্সিজেনের প্রাধান্য বেশি না হলেও যেটুকু আছে তা আমাদের মতো অসংখ্য প্রাণীর টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট। তবে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল এর ধারেকাছেও নেই।

মঙ্গল ঘিরে রাখা বায়ুমণ্ডলের স্তর অত্যন্ত পাতলা। পৃথিবীর তুলনায় ৯৯ শতাংশ কম বাতাস রয়েছে সেখানে। এর একটি বড় কারণ পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলের আকার প্রায় অর্ধেক। তাছাড়া দুর্বল মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে গ্রহটির গ্যাস প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে মহাকাশে।

পাথুরে লাল গ্রহটিতে যেটুকু বাতাস রয়েছে তার বেশির ভাগই আবার কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসে পরিপূর্ণ। এই গ্যাস মানুষের জন্য প্রাণঘাতী। সৌভাগ্যের বিষয় হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের উপস্থিতি এখনও ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে মঙ্গলের বাতাসের ৯৬ ভাগজুড়েই আছে এই গ্যাস।

মঙ্গলে অক্সিজেনের বর্তমান মাত্রাও একেবারে হতাশাজনক। পৃথিবীর তুলনায় সেখানে যে ১ শতাংশ বাতাস রয়েছে তার মাত্র এক-দশমাংশ হলো অক্সিজেন। এই অতি অল্প অক্সিজেনে মানুষের টিকে থাকা অসম্ভব।

কাজেই এই মুহূর্তে মঙ্গলে গিয়ে স্পেসস্যুটের বাইরে নিঃশ্বাস নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করে নেবে। বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব অত্যন্ত কম থাকায় মারা যাওয়ার আগে আপনি হাঁসফাঁস করবেন, সেই সঙ্গে আপনার দেহের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকবে

তাহলে আশা কোথায়?

মানুষের জন্য এই মুহূর্তে মঙ্গলজুড়ে ছড়িয়ে আছে অমঙ্গলের বিস্তর উপাদান। তবে তাই বলে সেখানে কোনো প্রাণই টিকবে না- এমনটা বলা মুশকিল।

মঙ্গল নিয়ে গবেষণায় এখন পর্যন্ত সেখানে প্রাণের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি বেশকিছু নতুন অনুসন্ধান প্রযুক্তি পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে এমন রোবট রয়েছে যেগুলো অণুজীব ও জীবাশ্ম খুঁজতে সিদ্ধহস্ত।

এটা ঠিক পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রাণীর জন্য মঙ্গলের আবহাওয়া রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। কেবল স্বল্প বাতাস ও অক্সিজেন নয়; গ্রহপৃষ্ঠে খুব সামান্য পানির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও নিচে।

তবে মজার ব্যাপার হলো পৃথিবীতেও কোনো কোনো জায়গায় রয়েছে এমন পরিবেশ। আর বিস্ময়করভাবে সেই পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম অণুজীবও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

অ্যান্টার্কটিকার বরফের মাঝে, মহাসাগরের তলদেশে এমনকি ভূপৃষ্ঠের কয়েক কিলোমিটার গভীরেও রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব। প্রচণ্ড গরম অথবা তীব্র ঠান্ডার মধ্যে এবং বলতে গেলে কোনো পানি ও অক্সিজেনের জোগান ছাড়াই টিকে অনেক অণুজীব। ফলে মঙ্গলের পরিবেশেও এ ধরনের প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট আশাবাদী।

এমনও হতে পারে মঙ্গল এখন হয়তো প্রাণশূন্য, তবে কোটি কোটি বছর আগে গ্রহটির সর্বত্র ছিল সজীবতা। কারণ এককালে সেখানে ছিল প্রচুর বাতাস ও অক্সিজেন, তাপমাত্রা ছিল উষ্ণ; সবচেয়ে বড় কথা ছিল পানির প্রাচুর্য।

নাসার মার্স পারসিভারেন্স রোভার মিশনের অন্যতম লক্ষ্য, মঙ্গলে অতীত প্রাণের অনুসন্ধান। গ্রহটির পাথর ব্যবচ্ছেদ করে জীবাশ্মের সন্ধান করছে এই মিশনের রোবট।

পারসিভারেন্স রোভারের সাতটি অত্যাধুনিক যন্ত্রের একটি হলো মোক্সি (MOXIE)। বিস্ময়কর এই যন্ত্রটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে তা অক্সিজেনে পরিণত করতে সক্ষম।

মোক্সির মিশন সফল হলে ভবিষ্যতে মহাকাশচারীরা এভাবে নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। সেই সঙ্গে রকেট জ্বালানি তৈরি করে পৃথিবীতে ফিরে আসাও সম্ভব হবে।

মানুষ মঙ্গলে যত বেশি অক্সিজেন তৈরি করতে পারবে, তত পৃথিবী থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কমবে। লাল গ্রহটিতে সফরে যাওয়া এবং সেখানে বসবাসও সহজ হতে থাকবে।

এই মুহূর্তে মঙ্গলে বসবাসের চ্যালেঞ্জ অনেক, কিন্তু সেগুলো অতিক্রমের কাজও চলছে। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানোর নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তাদের আশা ২০৩০-এর দশকের শেষে মঙ্গল জয় করবে মানুষ।

এ বিভাগের আরো খবর